প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২২, ১১:১৫
শোকের মাঝেও নবজাতককে দেখে ভাই-বোনের মুখে এক চিলতে হাসি
ছোট্ট বয়সেই বাবা-মা-বোনকে হারিয়েছে ১০ বছরের জান্নাত ও সাত বছর বয়সী এবাদত। শোকস্তব্ধ হয়ে অনেকটাই নির্বাক তারা। চোখে কেবল ভাসছে বাবা-মায়ের চেহারা। কিন্তু পাশাপাশি কবরে শুয়ে থাকা বাবা-মাকে আর কখনো দেখা হবে না তাদের। তাইতো মা-বাবার কথা মনে পড়তেই ক্ষণে ক্ষণে তাদের চোখ বেয়ে ঝরছে পানি।
|আরো খবর
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় মায়ের মৃত্যুর সময় আশ্চর্যজনকভাবে জন্ম নেওয়া নবজাতক এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রোববার দুপুর ২টার দিকে ময়মনসিংহ নগরের চরপাড়া মোড়ের লাবীব প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেই নবজাতক বোনটিকে দেখতে যায় জান্নাত ও এবাদত। সব হারিয়েও বোনকে কাছে পেয়ে শোকের মাঝেই এক চিলতে হাসি ফুটেছে ভাই-বোনের মুখে।
নবজাতকটির আপন বলতে এখন তার বড় এই দুই ভাই-বোনই। জান্নাত ত্রিশালের মঠবাড়ি ইউনিয়নের রায়মণি গ্রামে ব্র্যাক পরিচালিত একটি বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। জান্নাত জানায়, সে তার বোনকে লালন-পালন করবে। তার কাছে রাখবে, কারও কাছে যেতে দেবে না।
বোনকে দেখতে পেয়ে আনন্দিত ভাই এবাদতও। শনিবার ট্রাকচাপায় মায়ের পেট ফেটে জন্ম নেওয়া বোনটি কখন বাড়ি ফিরবে, তারই প্রহর গুনছে এবাদত।
লাবীব হাসপাতালের সেবিকা শরিফা আক্তার জানান, নবজাতক বোনের পাশে কিছু সময় ছিল তার ভাই-বোন। এ সময় তাদের আনন্দিত দেখা গেছে। তারা বোনকে কোলে নিয়ে আদরও করেছে।
এতিম এই শিশুদের দাদা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু বলেন, বাবা-মা মারা গেছে, এটি জান্নাত বুঝলেও এবাদত বুঝতে পারছে না। তাকে অনেক বুঝিয়ে শান্ত রাখা হচ্ছে।
শনিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশালের কোর্টভবন এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগম (৩২), তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) ও তাদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা।
প্রসবের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ায় নিজের আলট্রাসনোগ্রাম করানোর জন্য রত্না বেগম তার স্বামী ও ছয় বছরের মেয়েকে নিয়ে স্থানীয় একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে ট্রাকচাপায় ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন।
তবে এ সময় অলৌকিকভাবে মায়ের গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে এক নবজাতক। জন্ম নিয়ে রাস্তায় পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যায় পুলিশ ও আশপাশের লোকজন। পরে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে নেওয়ার পরই জানা যায় জীবিত আছে নবজাতক কন্যাটি।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উন্নত চিকিৎসার জন্য নবজাতকটিকে ময়মনসিংহ সদরের সিবিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক্সরে রিপোর্টে জানা যায় তার ডান হাতের দুইটি হাড় ভেঙ্গে গেছে। বর্তমানে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে লাবীব হাসপাতালে সদ্যজাত শিশুটি চিকিৎসাধীন রয়েছে। শিশুটি শঙ্কামুক্ত আছে এবং আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ভাঙা হাড় জোড়া লাগাসহ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।