প্রকাশ : ১২ জুন ২০২২, ১৩:০০
মতলব উত্তরে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ
আটক নারী মানসিক রোগী ॥ স্বামীর জিম্মায় ছাড়
সারাদেশ যখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)কে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে উত্তাল তখনই মতলব উত্তর উপজেলায় পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগে জনতা কর্তৃক নুশরাত জাহান নামে এক নারীকে আটক করে পুলিশে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ১০ জুন শুক্রবার সকাল ৯টার সময় উপজেলার ছেংগারচর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। তবে আটক এই নারী মানসিক রোগী হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনাক্রমে তাকে তার স্বামীর জিম্মায় দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তার কাছ থেকে লিখিত বন্ড রাখা হয়েছে।
|আরো খবর
আটক এই নারীর স্বামী হায়দার আলী ইনসেপ্টা ঔষধ কোম্পানীর মতলব উত্তরের আরএমও হিসেবে কর্মরত। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়, স্বামীর বাড়ি ভোলা জেলায়। তাদের ঘরে ১২ বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। এই নারী নাকি স্বপ্নে দেখেছে পবিত্র কোরআন শরীফ নদীতে ছেড়ে দেয়ার জন্যে, তাহলে সে সুস্থ হবে। এ কারণে সে প্রায়ই পবিত্র কোরআন শরীফ কিনে নদীতে নিয়ে ফেলে দিত।
জানা যায়, আটক নারী উপজেলার ছেংগারচর বাজারের ফরহাদ দর্জির দোকান থেকে প্রতিদিন ৯০-১০০ কপি কোরআন কিনে নিত। কয়েক মাস যাবত সে এ কাজটি করে আসছে। প্রতিদিন সে এভাবে এতগুলো কোরআন শরীফ কিনতে থাকায় দোকানদার ফরহাদের সন্দেহ হয়। ফরহাদ বিষয়টি মাদ্রাসার শিক্ষক ও আশপাশের মসজিদের ইমামদের জানায়। এই সন্দেহ থেকে গত দু’দিন আগে এই নারী ছেংগারচর বাজার থেকে ৯০ কপি কোরআন শরীফ কিনে একটি অটোগাড়িতে করে উপজেলার এখলাছপুর মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়ার ঘটনা স্থানীয় জনতা হাতেনাতে ধরে ফেলে। এরপর তার স্বামী হায়দার আলীকে এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে একদিন সময় দেয়া হয়।
শুক্রবার সকালে এ বিষয়টি নিয়ে আলেম ওলামাদের সমন্বয়ে শুনানি হওয়ার কথা। এদিকে শুক্রবার কাউকে কিছু না বলে দুটি ব্যাগে করে পবিত্র কোরআন শরীফসহ পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতা তাকে আটক করে। এ ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে জানাজানি হলে ছেংগারচর পৌর বাজারে শত শত মুসলমান ক্ষিপ্ত হয়ে এ মহিলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে শ্লোগান দিতে থাকে এবং বিষয়টি নিয়ে উপজেলার সমগ্র মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় তৌহিদি জনতা বিক্ষোভ মিছিল করে। এক পর্যায়ে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার অবস্থায় কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি তাকে মতলব উত্তর থানায় হস্তান্তর করেন।
উপজেলার ছেংগারচর বাজার কারিমিয়া উলূম মাদ্রাসার মুতাওয়াল্লি হাফেজ মোঃ আতাউল্লাহ মহসিন বলেন, একমাত্র ছিঁড়ে যাওয়া কোরআন শরীফ পানিতে বা নদীতে ফেলে দিতে পারে। কিন্তু এতগুলো নতুন কোরআন শরীফ নদীতে ফেলে দেয়া পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার শামিল। এগুলো সে কোনো মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দিতে পারতো। এটা না করে পবিত্র কোরআন শরীফ নদীতে ফেলে দেয়া অবমাননার শামিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এর পেছনে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করার জন্য তিনি প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ শাহজাহান কামাল জানান, মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে সে মানসিক রোগী। এ জন্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তার চিকিৎসার জন্য তাকে তার স্বামীর জিম্মায় দিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে তার কাছ থেকে এ বিষয়ে লিখিত রাখা হয়েছে।