প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২১, ১৬:১১
শুভ গুরু পূর্ণিমা ২৪ জুলাই
স্টাফ রিপোর্টার
আসছে ৭ই শ্রাবণ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ ২৪ শে জুলাই ২০২১ খ্রিঃ শনিবার শুভ গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড শংকর মঠ ও মিশনে দিনব্যাপী অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
তদুপলক্ষে ব্রহ্ম মুহূর্তে মঙ্গলারতি, শ্রী শ্রী চণ্ডী পাঠ, শ্রী শ্রী বাবা মনির বিশেষ পূজা, শ্রী শ্রী গুরু গীতা পাঠ, বিশেষ পূজা, গুরুতত্ত্ব ও মহাত্মা বিশেষ আলোচনা সভা ও সমবেত বিশ্ব শান্তি প্রার্থনা। পুরো অনুষ্ঠানটি ফেসবুক এর মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড শংকর মঠ ও মিশনের সকল শিষ্য, ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীকে স্ব স্ব গৃহে থেকে গুরু পূজার ব্রতী হবেন এবং আলোচনা সভা ও প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করার বিনম্র আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড শংকর মঠ ও মিশনের পঞ্চম অধ্যক্ষ শ্রী শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ। উল্লেখ্য যে, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি বিধিনিষেধ ও ভক্তদের সুরক্ষা বিবেচনা করে এ বছর আশ্রমবাসীদের সমন্বয়ে অনাড়ম্বরভাবে অনুষ্ঠান পালন করা হবে বিধায় আশ্রম কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং কেউ প্রণামী পাঠাতে আগ্রহী হইলে শংকর মঠ ও মিশনের পঞ্চম অধ্যক্ষ শ্রী শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ এর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে বিকাশ ও রকেট এর মাধ্যমে পাঠাতে পারবেন।
এদিকে, চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলাধীন ২০নং খাদেরগাঁও ইউনিয়নস্থিত চর চাঁদপুর (লামচরী) ব্রহ্মানন্দ যোগাশ্রমে গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে বিশেষ পূজা, গীতা পাঠ ও বিশ্ব শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
জানা যায়- গুরু পূর্ণিমা হল একটি বৈদিক প্রথা, যার মধ্য দিয়ে শিষ্য তাঁর গুরুকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে থাকেন। আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় গুরু পূর্ণিমা। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে গুরু পূর্ণিমার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই তিথিতেই মুণি পরাশর ও মাতা সত্যবতীর ঘরে মহাভারতের রচয়িতা মহর্ষি বেদব্যাস জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাই এই দিনে মহর্ষি বেদব্যাসের জন্ম জয়ন্তীও পালন করা হয়। মনে করা হয়, তিনিই চারটি বেদের ব্যাখ্যা করেছেন। বেদ বিভাজনের শ্রেয় তাঁকেই দেওয়া হয়েছে। তাই তাঁর নাম বেদব্যাস। ১৮টি পুরাণ ছাড়াও তিনি রচনা করেন মহাভারত ও শ্রীমদ্ভগবত। এই কারণে গুরু পূর্ণিমাকে ব্যাস পূর্ণিমাও বলা হয়। বৌদ্ধ ধর্ম মতে, বোধিজ্ঞান লাভের পরে আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় সারনাথে প্রথম উপদেশ দেন গৌতম বুদ্ধ। হিন্দু পুরাণ মতে, ভগবান শিব বা মহাদেব হলেন আদি গুরু। সপ্তর্ষির সাতজন ঋষি হল তাঁর প্রথম শিষ্য - অত্রি, বশিষ্ঠ, পুলহ, অঙ্গীরা, পুলস্থ্য, মরীচি এবং কেতু (নাম নিয়ে মতভেদ আছে)। শিব এই তিথিতে আদিগুরুতে রূপান্তরিত হন এবং এই সাত ঋষিকে মহাজ্ঞান প্রদান করেন। তাই এই তিথি হল গুরু পূর্ণিমা। গুরু পূর্ণিমার গুরুত্ব 'গুরু' শব্দটি 'গু' এবং 'রু' এই দুটি সংস্কৃত শব্দ দ্বারা গঠিত। 'গু' শব্দের অর্থ 'অন্ধকার' বা 'অজ্ঞতা' এবং 'রু' শব্দের অর্থ 'অন্ধকার দূরীভূত করা'। 'গুরু' শব্দটি দ্বারা এমন ব্যক্তিকে নির্দেশ করা হয় যিনি অন্ধকার দূরীভূত করেন, অর্থাৎ যিনি অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে যান তিনিই গুরু। গুরু আমাদের মনের সব সংশয়, সন্দেহ, অন্ধকার দূর করেন এবং নতুন পথের দিশা দেখান। ভারত হল ঋষি-মুনিদের দেশ, যেখানে তাঁদের ঈশ্বরতুল্য বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, ভক্তদের প্রতি ভগবান রুষ্ট হলে গুরুই রক্ষার পথ দেখাতে পারেন। প্রাচীনকাল থেকেই এই দেশে গুরুদের সম্মানজনক স্থান দেওয়া হয়েছে। গুরুর দেখানো পথে চলে, কোনও ব্যক্তি শান্তি, আনন্দ ও মোক্ষ প্রাপ্তি করতে পারে। তাই গুরুকে শ্রদ্ধা জানাতে বৈদিক যুগ থেকেই গুরু পূর্ণিমা পালিত হয়ে আসছে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই পূর্ণিমার দিনে গুরুর পূজার্চনা করলে বিশেষ আশীর্বাদ মেলে।