প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২২, ১৭:৩৫
চাঁদপুরে লাশ নিয়ে হত্যার বিচার চেয়ে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ
চাঁদপুর শহর এলাকা থেকে অপহরণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যবসায়ী হান্নান মৃধা হত্যার বিচারের দাবিতে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার সকাল ১০ টা থেকে পৌণে ১২ টা পর্যন্ত চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার সড়কে অবরোধ করেন বিক্ষুদ্ধ এসব জনতা। এসময় আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েন।
এ পরিস্থিতিতে অনেককেই পায়ে হেটে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় শহরের বিষ্ণুদী এলাকা থেকে আদন হান্নান মৃধা হত্যার বিচার দাবিতে মিছিল বের হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখান থেকে বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে শপথচত্বর মোড়ে অবস্থান নেয়। তাদের দাবী নিখোঁজের পরপর থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব না দেয়ায় ১৩দিন পর ব্যাবসায়ী হান্নানকে লাশ হয়ে পরিবারের কাছে ফিরতে হয়েছে। তারা এসআই রাশেদের প্রত্যাহার ও হান্নান হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।
এরপর সেখানে মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা দ্রুত আসামীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা সেখান থেকে লাশ নিয়ে পুনারায় মিছিল নিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এসে সড়ক অবরোধ করে এবং বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায় জানান, স্থানীয়রা যে দাবি নিয়ে সড়কে নেমেছে, তা তদন্ত করে অপরাধীদের খুঁজে বের করতে পুলিশকে সময় দিতে হবে। তিনি আরো জানান, পুলিশ জনগণের জন্যই কাজ করে। আমরা তদন্ত পূর্বক দোষীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে আমাদের কারো গাফলতি থাকে এতটুকুও ছাড় দেয়া হবে না। তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা এএসপির এমন আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অবশেষে ক্ষুব্দ এলাকাবাসী বাসস্ট্যান্ড সড়কের উপর তাদের অবরোধ তুলে নেয় এবং দাফনের জন্য হান্নানের লাশবাহী গাড়ি নিয়ে বিষ্ণুদীর দিকে রওনা হয়। নিহত হান্নানের ভগ্নিপতি রুবেল ও চাচাতো ভাই আল-আমিনসহ পরিবারের সদস্যরা জানান, আমরা হান্নানের স্ত্রী আয়শা, শ্যালক হিরা ও শাওনকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা চাঁদপুর সদর মডেল থানার এসআই রাশেদুদজামানকে নিখোঁজ ডায়েরি করার পর বেনাপোল যেতে কয়েকবার অনুরোধ করি। এছাড়া হান্নানের লাশ আনার সময়ও তাকে যাওয়ার জন্য বলা হয়। তার গাফিলতির কারণে হান্নানের মৃত্যু হয়। আমরা এসআই রাশেদের প্রত্যাহার ও শাস্তি কামনা করছি। এছাড়া তারা হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের মাধ্যমে ফাঁসির দাবি জানায়।
হান্নানের ভাতিজা সাগর মৃধা বলেন, আমার কাকাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা পুলিশকে জানিয়েও বিচার পাইনি। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বিক্ষোভ চলতে থাকবে। আমরা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ আবদুর রশিদ জানান, দ্রুত আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। উল্লেখ: গত ১ মার্চ দুপুর ১টার দিকে হান্নান দোকান বন্ধ করে তার শ্বশুড় বাড়ি (চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়ন) শিশু পুত্র সন্তানকে দেখতে যায়। শ্বশুড় বাড়ি থেকে ফেরার পথে সে নিখোঁজ হয়।
এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে চাঁদপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরমধ্যে একটি নাম্বার থেকে হান্নানকে জীবিত ফেরত নিতে এক লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। এতের পরিবারের পক্ষ থেকে বিকাশ নাম্বারে পঞ্চাশ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। এর ১৩ দিন পর বেনাপোল থেকে মৃত অবস্থায় সন্ধান মিলে।
ওইদিন সকাল ৯ টায় যশোরের শার্শা থানা পুলিশ গাছে সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় হান্নানের মরদেহ উদ্ধার করে। হান্নান মৃধা চাঁদপুর পৌরসভার ১৫নং ওয়ার্ডের বিষ্ণুদী মৃধা বাড়ি এলাকার আবুল হোসেন মৃধার ছেলে। বিষ্ণুদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে তার একটি বিকাশ ও ফ্লেক্সিলোডের দোকান রয়েছে।