শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

রাসূল (সাঃ)-এর মি’রাজ

রাসূল (সাঃ)-এর মি’রাজ
মুফতি মুহাঃ আবু বকর বিন ফারুক

মি’রাজ শব্দটি আরবি। যার অর্থ হলো ঊর্ধ্বে উঠার সিঁড়ি বা বাহন। ইসলামী পরিভাষায় ইসলামের নবী, নবীকুল সর্দার নিখিল বিশ্বের রহমত মুক্তির দূত সৃষ্টিকুলের মূল সরওয়ারে কায়েনাত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর একই রাতে পবিত্র মক্কা নগরী হতে বায়তুল মুকাদ্দাসে উপনীত হয়ে সেখান হতে সপ্তাকাশ অতিক্রমকরত মহান আল্লাহর সাক্ষাতে হাজির হওয়ার ঐতিহাসিক অনন্য সাধারণ ঘটনাকে মি’রাজ নামে অভিহিত করা হয়।

এ বিস্ময়কর ঘটনা সম্পর্কে বিশ্ববাসী ওয়াকেফহাল। যে রাতে এ ঘটনা সংঘটিত হয় ওই রাত বিশ্বের মুসলিম সমাজে “লাইলাতুল মি’রাজ” বা শবে মি’রাজ নামে সুপরিচিত। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ মি’রাজ তিনি স্বশরীরে সম্পন্ন করেছেন।

মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন, মহান সেই সত্তা যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের একাংশে মসজিদে হারাম হতে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন, যার চতুর্দিকে আমি বরকত ও কল্যাণময় করে দিয়েছি, যাতে আমি তাঁকে আমার অসীম কুদরতের নিদর্শনাবলি দেখিয়ে দিই। নিশ্চয় তিনি (আল্লাহ) সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সূরা বনী ইসরাঈল-১)

মি’রাজের সময়

বুখারী শরীফের অন্যতম ভাষ্যকার আল্লামা আইনী (রহঃ) বলেছেন, এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মতানৈক্য দেখা যায়। কারো মতে, হিজরতের এক বছর পূর্বে, কারো মতে হিজরতের ষোল মাস পূর্বে, কারো মতে, সতের মাস পূর্বে, কারো মতে নবুয়াতের ৫ম সালে হিজরত সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু জমহুর ওলামায়ে কেরামের মতে, নবুয়্যতের দ্বাদশ সালে ২৭ রজব সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় রাতের একাংশে তাঁর মি’রাজ সংঘটিত হয়। বিশ্বের মুসলিম সমাজের সর্বত্র এ মতই সমধিক সুপ্রসিদ্ধ ও সুপরিচিত।

মি’রাজ একবার না একাধিক বার

প্রায় ত্রিশজন সাহাবী হতে মি’রাজের বর্ণনা সাব্যস্ত। তাঁদের সকলের সম্মিলিত মতানুযায়ী হযরত রাসূল (সাঃ)-এর মি’রাজ বা ইসরা তাঁর নবুয়ত লাভের পর এবং হিজরতের পূর্বে মক্কায় সংঘটিত হয়েছে-ইহাতে সন্দেহ নেই। শায়খ আব্দুল ওহাব শে’রানী বলেন, ইসরা বা মি’রাজ মোট চৌত্রিশ বার হয়েছে, তম্মধ্যে জাগ্রত অবস্থায় দৈহিক মি’রাজ সংঘটিত হয়েছে একবার, বাকিগুলো হয়েছে রূহানী তথা স্বাপ্নিকভাবে।

মি’রাজ কেনো এবং কখন হয়েছিলো?

মহানবী (সাঃ)-এর মি’রাজ কেনো হয়েছিলো? মি’রাজের নিগূঢ় রহস্য কি? এসব প্রশ্নের জবাব একমাত্র মহান আল্লাহই ভালো জানেন। এরপরেও পবিত্র কুরআন, সহীহ হাদীস, ইতিহাস এবং সমসাময়িক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে কতগুলো কারণ বের হয়ে আসে। যেমন : মহানবীর (সাঃ) জন্মের পূর্বেই পিতা আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। জন্মের ৫ কিংবা ৬ বছর পরে মাতা আমিনার মৃত্যু হয়। পিতা-মাতার ইন্তেকালের পর তিনি দাদা আব্দুল মুত্তালিবের কাছে লালিত-পালিত হন।

মহানবীর (সাঃ) বয়স যখন ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন হলো, তখন দাদাও মৃত্যুবরণ করলেন। এরপরে তিনি চাচা তালিবের কাছে লালিত-পালিত হন। মহানবী (সাঃ) যুবক হলে খাদিজার (রাঃ) সাথে তাঁর বিয়ে হয়। ৪০ বছর বয়সে মহানবী (সাঃ) নবুওয়াতপ্রাপ্ত হলেন। ১০ বছর গোপন ও প্রকাশ্যে ওহীর দা’ওয়াত প্রদান করলেন। নবুওয়াতের ১১ তম বছরে কাফিরেরা মহানবী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবীদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি করলো। এ কঠিন সময়ে মহানবীর (সাঃ) ঢাল ছিলেন চাচা আবু তালিব। ঘরের ভেতরে খাদিজা (রাঃ)-মহানবীর (সাঃ) দুঃখ দূর করার জন্যে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করতেন। মহান আল্লাহর কি ইচ্ছা ! এ বছরে অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে আবু তালিব ও খাদিজা (রাযিঃ)-এৃত্যুবরণ করলেন। এদের মৃত্যুতে রাসূল (সাঃ) শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন। হৃদয়ের সুপ্ত বেদনাগুলো দূর করার জন্য তখন আল্লাহ মহানবীকে (সাঃ) তাঁর একান্ত সান্নিধ্যে নিয়ে আসেন।

আল্লামা মুবারকপুরী (রঃ) বলেন, ‘একদিকে নবীর (সাঃ) দা’ওয়াতী কাজের সফলতা আর অন্যদিকে নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতনের চরম পর্যায় অতিক্রম হচ্ছিলো। এ দু’য়ের মাঝামাঝি অবস্থায় দূরদিগন্তে মিটমিট করে জ্বলছিল তারকার মৃদু আলো, এমনি সময়ে মি’রাজের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিলো।’ সূরা ইসরার শুরুতে আল্লাহ পাক ইসরা ও মি’রাজের এ ঘটনা এবং তার উদ্দেশ্য অতীব সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন।

মহানবীর (সাঃ) বক্ষ বিদীর্ণকরণ

মহানবীর (সাঃ) বক্ষ বিদীর্ণকরণ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, আমি কি আপনার বক্ষ উন্মুক্ত করে দিইনি? (সূরা ইনশিরাহ-১)। শারাহা শব্দের অর্থ উন্মুক্ত করা। জ্ঞান, তত্ত্বকথা ও উত্তম চরিত্রের জন্য বক্ষকে প্রশস্ত করে দেয়ার অর্থে বক্ষ উন্মুক্ত করা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অন্য এক আয়াতে রয়েছে, অতএব আল্লাহ যাকে হেদায়াত করতে ইচ্ছা করেন, তার অন্তরকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। (সূরা আনয়াম, ১২৫)

রাসূলের (সাঃ) পবিত্র বক্ষকে আল্লাহ তা’আলা জ্ঞান, তত্ত্বকথা ও উত্তম চরিত্রের জন্য এমন বিস্তৃত করে দিয়েছিলেন যে, বিশ্ববিখ্যাত কোনো প-িত দার্শনিকও তাঁর জ্ঞানগরিমার ধারে কাছে পৌঁছাতে পারেনি। এর ফলশ্রুতিতে সৃষ্টির প্রতি তাঁর মনোনিবেশ মহান আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশে কোনো বিঘœ সৃষ্টি করতো না। কোনো কোনো সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, ফেরেশতাগণ আল্লাহর আদেশে বাহ্যতঃ তাঁর বক্ষ বিদারণ করে পরিষ্কার করেছিলো। কোনো তাফসীরবিদ এ স্থলে বক্ষ উন্মুক্ত করার অর্থে সে বক্ষ বিদীর্ণকেই বুঝিয়েছেন।

মহানবীর (সাঃ) ৩ বার বক্ষ বিদীর্ণ করা হয়েছিলো। যেমন মুসলিম শরীফে আনাসের (রাঃ) বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলের (সাঃ) শিশু বেলায় তাঁর বুকটা চিরে একটি রক্ত পিশু বের করে ফেলা হয়। জীব্রাঈল (আঃ) তাঁকে (রাসূল (সাঃ)কে) বলেন, এটা আপনার মধ্যে শয়তানের একটি অংশ। এটি শিশু বেলায় হওয়াতে রাসূল (সাঃ) শয়তান থেকে রক্ষিত অবস্থায় লালিত-পালিত হন। তখনও তাঁর বুকটা চিরে এমন কিছু বস্তু তাতে ভরে দেয়া হয়, যাতে তাঁর হৃদয়টা ওহী গ্রহণ করার যোগ্যতাসম্পন্ন হয়। তারপর মি’রাজ বা আকাশভ্রমণের আগে তাঁর বুকটা চিরে আবার তাতে এমন পদার্থ ভরে দেয়া হয়, যাতে তা আল্লাহর সাথে নির্জনে কথাবার্তা বলার যোগ্য হয়ে যায়। রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘আমার বক্ষ বিদীর্ণ করে একটি স্বর্ণের পেয়ালায় রাখা হয়, তারপর তা যমযমের পানি দ্বারা ধৌত করা হয়। এরপর আমার অন্তরকে ঈমান, হিকমত ও জ্ঞান দ্বারা পরিপূর্ণ করে আবার যথাস্থানে রেখে দেয়া হয়।’ (বুখারী শরীফ-১/৫৪)

জীব্রাঈল (আঃ) আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। তারপর তাকে পানি দ্বারা ধৌত করলেন। অতঃপর জ্ঞান ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণপাত্র এনে তা বক্ষে ঢেলে দিলেন। অতঃপর তাকে বন্ধ করে দিলেন। তারপর জীব্রাঈল (আঃ) আমার হাত ধরে আকাশের দিকে নিয়ে গেলেন। (বুখারী ও মুসলিম)। কেউ কেউ ৪ বার বক্ষ বিদীর্ণের কথা বলেছেন। উপরের তিনটি এবং আরেকটি হলো, যৌবনের সময়। এ সময় বক্ষ বিদীর্ণের উদ্দেশ্য ছিলো যৌবনের চাওয়া পাওয়া, লোভ-লালসা, নোংরামী ইত্যাদি হতে রাসূলের (সাঃ) অন্তরকে দূরে রাখা।

মি’রাজে-বোরাক, সিঁড়ি এবং রফরফের পরিচয়

বোরাক শব্দটি আরবি। এটি বারকুন হতে এসেছে। এর অর্থ বিদ্যুৎ। মসজিদে হারামের সামনে একটি সাদা জন্তু ছিলো। যা আকারে গাধা ও খচ্চরের মাঝামাঝি ছিলো। তার দু’টো উরুর মধ্যে দু’টো ডানা ছিলো। যা তাঁর পা দু’টির কাছাকাছি ছিলো। এ জন্তুটির নাম বোরাক। বোরাকের গতিও বিদ্যুতের মতো আশ্চর্যজনক দ্রুত ছিলো। নবীজী বলেন, ‘আমার নিকট বোরাক নিয়ে আসা হলো। এটা একটি সাদা লম্বা পিঠওয়ালা প্রাণী, যে তার পা রাখে দৃষ্টির শেষপ্রান্তে। (সিলসিলা সহীহাহ, আহমাদ) যখন মহানবী (সাঃ) বোরাকের উপর আরোহণ করতে যাচ্ছিলেন তখন সে জন্তুটি নড়ে উঠলো। হযরত জিব্রাঈল (আঃ) তখন জন্তুটির গায়ে মৃদু আঘাত করে বললেন, এ দেখ কি করছিস। আজ পর্যন্ত মুহাম্মাদ (সাঃ) থেকে কোনো মহান ব্যক্তি তোর উপর আরোহণ করেনি। এ কথা শুনে লজ্জায় বোরাকের শরীর থেকে ঘাম নির্গত হলো। এ বোরাকটিকে অন্যান্য নবীদের জন্যেও নিয়োজিত করা হতো। এ বোরাকটির দৃষ্টি যতো দূর যেতো ততো দূরে তার পা পড়তো। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, বোরাকের মুখম-ল ছিলো সৌন্দর্যম-িত, নয়নযুগল ছিলো বড় বড়, খুবই কালো ছিলো, সুরমাদার ছিলো, কান ছিলো খুবই পাতলা এবং নরম। তাঁর গর্দান ছিলো মোতি দ্বারা জড়ানো। আর বাজুতে ছিলো হিরা ও জওহারের হার। পাখাগুলোতে ছিলো ‘আল্লাহু আকবার’ লেখা, দৃষ্টির শেষসীমা পর্যন্ত তার কদম ছিলো। তার চলন খুবই দ্রুত ছিলো। লাগাম, রেকাব, জিন ছিলো তাহার সাথে। দ্রুতগামী ছিলো বেশি বিজলী হতে। যত দূর গিয়া তাহার নযর পড়িত। ততদূর এক লাফে যাইয়া পৌঁছিত’। মক্কা মুকারমা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত এ সফর বোরাকযোগে হয়। বায়তুল মুকাদ্দাসের দ্বারে উপনীত হয়ে মহানবী (সাঃ) বোরাকটি অদূরে বেঁধে দেন।

সিঁড়ি : বায়তুল মুকাদ্দাসের কর্মসূচি সম্পন্ন করার পর নবীর (সাঃ) কাছে সিঁড়ি আনা হয়। সে সিঁড়িতে নীচ থেকে উপরে যাওয়ার জন্যে ধাপ বানানো ছিলো। তিনি সিঁড়ির সাহায্যে প্রথমে, প্রথম আকাশ এরপর অবশিষ্ট আকাশসমূহে ভ্রমণ করেন। এ সিঁড়িটি কি এবং কি রূপ ছিলো, তার প্রকৃতস্বরূপ আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন। ইদানিং-কালেও অনেক প্রকার সিঁড়ি পৃথিবীতে প্রচলিত রয়েছে। স্বয়ংক্রিয় লিফটের আকারে সিঁড়িও আছে। এ অলৌকিক সিঁড়ি সম্পর্কে সন্দেহ ও দ্বিধার কারণ নেই। আবু সায়ীদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, আমি যখন বায়তুল মুকাদ্দাসের কর্মসূচি থেকে অবসর পেলাম তখন একটি সিঁড়ি আমার কাছে আনা হলো। এর চেয়ে সুন্দর জিনিস আমি দেখিনি। এটাই সে সিঁড়ি যার দিকে মরণাপন্ন ব্যক্তি চেয়ে থাকে যখন তার কাছে মরণ হাজির হয়। জীব্রাঈল (আঃ) আমাকে তাতে চড়িয়ে দিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, জীব্রাঈল (আঃ) নবীকে (সাঃ) হাত ধরে আকাশের দিকে উঠিয়ে নিয়ে যান।

রফরফ : রফরফ এর অর্থ হলো বিছানা। এটাও তুলতুলে দামী বিছানার মতো ছিলো। এটি সবুজ ধরনের। সূর্যরশ্মির চেয়েও ক্ষীপ্রতার গতিবেগ। সবুজ রঙ্গের গদিবিশিষ্ট পালকিকে রফরফ বলা হয়। আল্লামা ফুরতুবী (রঃ) বলেন, মি’রাজের হাদীসে আমাদের জন্যে বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসূল (সাঃ) যখন সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছান তখন তার কাছে (একটি উড়ন্ত বাহন) রফরফ আসে। অতঃপর তা তাঁকে (মহানবীকে (সাঃ)) জীব্রাইলের (আঃ) কাছ থেকে নিয়ে নেয় এবং তাঁকে তা উড়িয়ে দিয়ে যায় আল্লাহর আরশের ঠেস দেয়ার জায়গায়।

রাসূল (সাঃ) বলেন, তা আমাকে নিয়ে উঁচু করে উড়তে থাকে। শেষে তা আমাকে নিয়ে আমার পালনকর্তার সামনে দাঁড়িয়ে যায়। তারপর যখন ফিরে আসার সময় হয় তখনও তা তাঁকে নিয়ে নেয়। তাঁকে নিয়ে সে নীচু ও উঁচু হয়ে উড়তে থাকে। পরিশেষে সে তাঁকে জীব্রাইলের কাছে পৌঁছে দেয়। তাঁর উপর আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। ওই সময় জীব্রাঈল কাঁদছিলো এবং উচ্চৈঃস্বরে আল্লাহর প্রশংসা করছিল। তাই রফরফ হলো, আল্লাহর সামনে পৌঁছাবার জন্যে আল্লাহর খাদেমদের মধ্য হতে একজন খাদেম। যার বিশেষ কর্তব্য হলো, আল্লাহর নিকটে পৌঁছে দেয়া। যেমন রফরফ এমন একটি বাহন যাতে কেবলমাত্র নবীগণই চড়তে পারেন এ যমীনে।

মিরাজের ঘটনা সম্পর্কে একজন অমুসলিমের সাক্ষ্য

তাফসীরে ইবনে কাসীরে বলা হয়েছে, হাফেজ আবু নাঈম ইস্পাহানী দালায়েলুন্নবুয়ত গ্রন্থে মুহাম্মাদ ইবনে ওমর ওয়াকেদীর সনদে মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব কুযীর বাচনিক নি¤েœাক্ত ঘটনা বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রোম স¤্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে পত্র লিখে দিহইয়া ইবনে খলিফাকে প্রেরণ করেন। এরপর দিহইয়ার পত্র পৌঁছানো, রোম স¤্রাট পর্যন্ত পৌঁছা এবং তিনি যে অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ স¤্রাট ছিলেন, এসব কথা বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে, যা সহীহ বুখারী এবং হাদীসের অন্যান্য নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে বিদ্যমান রয়েছে। এ বর্ণনার উপসংহারে বলা হয়েছে যে, রোম স¤্রাট হিরাক্লিয়াস পত্র পাঠ করার পর রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর অবস্থা জানার জন্য আরবের কিছু সংখ্যক লোককে দরবারে সমবেত করতে চাইলেন। আবু সুফিয়ান ইবনে ইর্য়ব ও তাঁর সঙ্গিরা সে সময় বাণিজ্যিক কাফেলা নিয়ে সে দেশে গমন করছিল। নির্দেশ অনুযায়ী তাদেরকে দরবারে উপস্থিত করা হল। হিরাক্লিয়াস তাদেরকে যেসব প্রশ্ন করেন, সেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ সহীহ বুখারী, মুসলিম প্রভৃতি গ্রন্থে বিদ্যমান রয়েছে। আবু সুফিয়ানের আন্তরিক বাসনা ছিল যে, সে এই সুযোগে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সম্পর্কে এমন কিছু কথাবার্তা বলবে যাতে, স¤্রাটের সামনে তাঁর ভাবমূর্তি সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আবু সুফিয়ান নিজেই বলে যে, আমার এই ইচ্ছাকে কার্যে পরিণত করার পথে একটি মাত্র অন্তরায় ছিল। তা এই যে, আমার মুখ দিয়ে কোন সুস্পষ্ট মিথ্যা কথা বের হয়ে পড়লে স¤্রাটের দৃষ্টিতে হেয়প্রতিপন্ন হব এবং আমার সঙ্গিরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে ভর্ৎসনা করবে। তখন আমার মনে মি’রাজের ঘটনাটি বর্ণনা করার ইচ্ছা জাগে। এটা যে মিথ্যা ঘটনা তা স¤্রাট নিজেই বুঝে নিবেন। আমি বললাম, আমি তাঁর ব্যাপারটি আপনার কাছে বর্ণনা করছি। আপনি নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন যে, ব্যাপারটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করলেন, ঘটনাটি কী? আবু সুফিয়ান বললো, নবুয়তের এই দাবিদারের উক্তি এই যে, সে এক রাত্রিতে মক্কা মোকাররমা থেকে বের হয়ে বায়তুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং প্রত্যুষের পূর্বে মক্কায় আমাদের কাছে ফিরে গেছে। ইলিয়ার (বায়তুল মোকদ্দাসের) সর্বপ্রধান যাজক ও প-িত তখন রোম স¤্রাটের পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বললেন, আমি সে রাত্রি সম্পর্কে জানি। রোম স¤্রাট তার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এ সম্পর্কে কী রূপে জানেন? সে বললো, আমার অভ্যাস ছিল যে, বায়তুল মোকাদ্দাসের সব দরজা বন্ধ না করা পর্যন্ত আমি শয্যা গ্রহণ করতাম না। সে রাত্রে আমি অভ্যাস অনুযায়ী সব দরজা বন্ধ করে দিলাম, কিন্তু একটি দরজা আমার পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব হলো না। আমি আমার কর্মচারীদের ডেকে আনলাম। তারা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা চালাল। কিন্তু দরজাটি তাদের পক্ষেও বন্ধ করা সম্ভব হলো না। (দরজার কপাট স্বস্থান থেকে মোটেই নড়ছিলো না।)-এনে হচ্ছিল যেন আমরা কোনো পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা লাগাচ্ছি। আমি অপারগ হয়ে কর্মকার ও মিস্ত্রীদেরকে ডেকে আনলাম। চারা পরীক্ষা বলল, কপাটের উপর দরজার প্রাচীরের বোঝা চেপে বসেছে। এখন ভোর না হওয়া পর্যন্ত দরজা বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। সকালে আমরা চেষ্টা করে দেখব, কি করা যায়? আমি বাধ্য হয়ে ফিরে এলাম এবং দরজার কপাট খোলাই থেকে গেল। সকাল হওয়া মাত্র আমি সে দরজার নিকট উপস্থিত হয়ে দেখি যে, মাসজিদের দরজার কাছে ছিদ্র করা একটি প্রস্তর খ- পড়ে রয়েছে। মনে হচ্ছিল যে, ওখানে কোনো জন্তু বাঁধা হয়েছিল। তখন আমি সঙ্গিদেরকে বলেছিলাম, আল্লাহ তা’আলা এ দরজাটি সম্ভবত এ কারণে বন্ধ হতে দেননি যে, হয়তো বা আল্লাহর কোনো প্রিয় বান্দা আগমন করেছিলেন। অতঃপর তিনি বর্ণনা করেন যে, ঐ রাত্রে তিনি আমাদের মাসজিদে নামায পড়েন। অতঃপর তিনি আরো বিশদ বর্ণনা দিলেন। (ইবনে কাছীর ৩য় খ-, ২৪ পৃষ্ঠা)

মি’রাজ ও বিজ্ঞান

মহানবী (সাঃ) এর শারীরিক মি’রাজ তাঁর অসংখ্য মুজিযার মধ্য হতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠতম মুজিযা বা অলৌকিক ঐতিহাসিক ঘটনা। আধ্যাত্মিক বা স্বাপ্নিক মি’রাজের সাথে এর কোন তুলনা নেই। বস্তুর আকৃতি প্রকৃতি ও আকর্ষণ বিকর্ষণ নিয়ে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। সুতরাং বিজ্ঞানের যুক্তির সাথে মি’রাজের অলৌকিকতার বিষয়টিকে উপলব্ধি করতে মানবীয় জ্ঞান বিজ্ঞান অক্ষম তাতে সন্দেহ নেই। যে জিব্রাঈল (আঃ)-মানুষের আকৃতিতে এসে নিমিষের মধ্যে বিশ্বনবীর সামনে আকাশ ছোয়া যমীন ঘেরা বিরাট আকৃতিতে রূপান্তরিত হতেন বিজ্ঞান এহেন অবস্থাকে কোন যুক্তিতে প্রমাণ করবে? যা হোক, মহানবী (সাঃ)-এর মি’রাজসহ অন্যান্য যাবতীয় মু’জিযাকে বিজ্ঞানের যুক্তির আলোকে উপলব্ধি করা সম্ভবপর নয়। লৌকিক ও অলৌকিকের মধ্যে ব্যবধান সুস্পষ্ট। প্রিয় নবী (সাঃ) মি’রাজে স্বশরীরে গিয়েছেন। ইহা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে আমরা প্রমাণ করার চেষ্টা করবো। অবশ্য যুক্তিবাদীরা একথা মানতে রাজী হবেন না। তাদের জ্ঞান অভিজ্ঞতা একথা মানবে না। স্থূলদেহী মানুষ জড়জগতের নিয়ম কানুনে আবদ্ধ। তাই সে কিভাবে আকাশ পথে ভ্রমণ করতে পারে।

আমাদের মাথার উপর যে বায়ুর স্তর আছে তার উচ্চতা মাত্র বায়ান্ন মাইল। এর উপর আর বায়ুর স্তর নেই। সকলের জানা আছে যে, পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি আছে। শূন্য ম-লের যে কোন স্থূল বস্তুকে সে নীচের দিকে টেনে নিয়ে আসে। অতএব, রাসূল (সাঃ)-এর মি’রাজ বা নভোভ্রমণ শারীরিক অসম্ভব বলে যুক্তিবাদীগণ যুক্তি প্রদর্শন করেন। এক্ষেত্রে আমাদের কথা হচ্ছে মধ্যাকর্ষণ শক্তির দোহাই দিয়ে অমুসলমানরা মি’রাজকে অস্বীকার করেছেন। সে নীতিকে আজকার বৈজ্ঞানিকগণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রসঙ্গে বর্তমানে অন্যরূপ ব্যাখ্যা চলছে। শূন্যে অবস্থিত যে কোন স্থূল বস্তুকে পৃথিবী সব সময় সমানভাবে আকর্ষণ করতে পারে না, আজ তা পরীক্ষিত সত্য। প্রত্যেক গ্রহেরই নিজস্ব আকর্ষণ শক্তি রয়েছে। পৃথিবীরও আকর্ষণশক্তি আছে। আবার সূর্য ও অন্যান্য গ্রহেরও আকর্ষণশক্তি রয়েছে। সূর্য ও পৃথিবী পরস্পর পরস্পরকে টেনে রেখেছে। এ টানাটানির ফলে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এমন একটি স্থান আছে যেখানে কোন আকর্ষণ বিকর্ষণ নেই। অতএব, পৃথিবীর কোন বস্তু যদি এ ন্যাচারাল জোনে পৌঁছতে পারে অথবা এ সীমানা পার হয়ে সূর্যের সীমানায় যেতে পারে, তাহলে তার আর এ পৃথিবীতে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। গতি বিজ্ঞানের ডায়নামিকের মতে, পৃথিবী হতে কোনো বস্তুকে যদি প্রতি সেকেন্ডে ৬.৯৩ অর্থাৎ মোটামুটি সাতমাইল বেগে ঊর্ধ্বলোকে ছুঁড়ে আর পৃথিবীতে ফিরে আসবে না। ঞযব টহরাবৎংব অৎড়ঁহফ টং ড়ুং লবৎং ঢ় . ২১৬ আবার পৃথিবী হতে কোনো বস্তু যতই উপরে উঠে যায়, ততোই তার ওজন কমে যায়, যার ফলে তার অগ্রগতি ক্রমেই সহজ হয়ে যায়। এ সম্পর্কে অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক অৎঃযবৎ পষধৎশ বলেন, পৃথিবী হতে কোন বস্তুর দূরত্ব যতই বাড়ে, ততই তার ওজন কমে। পৃথিবীর ১ পাউন্ড ওজনের কোন বস্তু ১২০০০ বার হাজার মাইল ঊর্ধ্বে মাত্র ১ আউন্স হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে, পৃথিবী হতে যে যত ঊর্ধ্বে গমন করবে। তার অগ্রগতি সহজ হবে। ঞযব ঊীঢ়ষড়ৎধঃরড়হ ড়ভ ংঢ়পব ঢ়.১৫

বিজ্ঞানীগণ বলেন, ঘণ্টায় পঁচিশ হাজার মাইল বেগে ঊর্ধ্বলোকে ছুটতে পারলে পৃথিবী থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। এরই নাম মুক্তিগতি। ঊংপধঢ়ব াবষড়পরঃু গতি বিজ্ঞানের এসব নবাবিস্কারের ফলে মানুষ চাঁদে পৌঁছেছে এবং মঙ্গল গ্রহে পৌঁছার জন্য প্রচেষ্টা এসব থেকে এটাই স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান মধ্যাকর্ষণের যুক্তি দিয়ে মি’রাজের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যাবে না।

দ্বিতীয় যুক্তি, হযরত রাসূল মকবুল (সাঃ)-এর দেহ জড়দেহ ছিলো। তাঁর দেহে দুনিয়ার চার হাজার পুরুষের ক্ষমতা ছিল। বিধায় এ দেহ নভোলোকে পৌঁছতে পারে না।

উত্তর : হযরত রাসূল মকবুল (সাঃ)-মানব ছিলেন বলেই তাঁর দেহ আমাদের মতো জড় উপাদানবিশিষ্ট ছিলো তা না-ও হতে পারে। যেহেতু হাদিস শরীফের প্রমাণ তিনি নূরী ছিলেন। তাঁকে নূর ও মাটির সমন্বয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং ফেরেশতা নূরের ও জ্বিন শয়তান আগুনের সৃষ্টির কারণে ক্ষণিকের মধ্যে ঊর্ধ্বজগতে ভ্রমণ করে। এছাড়া সব পদার্থের ধর্ম সব সময় একরকম থাকে না। যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, কাচ একটি জড় পদার্থ। বাধা প্রদান করা তার স্বভাব। একটি কাঠ তার মধ্য দিয়ে যেতে বাধা সৃষ্টি করে। কোন আলোকরশ্মিকে সে বাধা দিতে পারে না বরং তার ভিতর ভেদ করে চলে যাবে। আবার অনেক অস্বচ্ছ পদার্থের ভিতর দিয়ে সাধারণ আলো প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু এক্স-রে তা ভেদ করে চলে যায়। একই পদার্থের বিভিন্ন রূপ থাকা সম্ভব। কঠিন, তরল ও বায়বীয় যেমন পানি-যখন তা কঠিন অবস্থায় থাকে তখন তা বরফে দ্বারা বাড়ি-ঘর তৈরি করা যায়। যখন তরল অবস্থায় থাকে তখন পানি ভিন্ন রূপ ধারণ করে। আবার যখন ঐ পানিকে বাস্পাকারে পরিণত করা উহা আমাদের চোখের সামনে ঊর্ধ্বাকাশে উড়ে চলে যায়। সুতরাং আমরা যে পদার্থকে দেখি তাই যে উহার সত্যরূপ একথা সুনিশ্চিত বলা যাবে না। উপরি বর্ণিত যুক্তির আলোকে একথা বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলা যেতে পারে যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)কে জড়দেহী মানব বেশে দেখা গেলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি জড় ধর্মী ছিলেন না। তিনি নূরী ছিলেন, হাদীছে বর্ণিত আছে, মহান আল্লাহ সৃষ্টি জগতে সর্ব্বাগ্নে আমার নূর সৃষ্টি করেছেন। যার কারণে তাঁর শরীরে ছায়া ছিল না। যেমন ইলেকট্রিক বাতি অতি স্বচ্ছ হওয়ার কারণে তার ছায়া ভূতলে দৃশ্য হয় না।

সিরাতুল হালাবিয়্যার ১ম খ- ৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ওহে জাবির বিন আব্দুল্লাহ! মহান আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমার নবীর নূর আপন সৃষ্ট নূর হতে সৃষ্টি করেছেন। কুরআন কারীমে মহান আল্লাহ জগতবাসীকে জানালেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহর নূর ও স্পষ্ট কিতাব তোমাদের নিকট এসেছে। (সূরায়ে মায়েদা ১৫ আয়াত)-এসব আয়াত ও হাদীছ শরীফের ভাষ্য দ্বারা সুস্পষ্ট প্রতীয়মান যে, রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর দেহ নূরী হওয়ায় তাঁর পক্ষে ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ সম্ভব হয়েছে। কেননা নূর বা আলোর কোনো ওজন নেই।

পরিশেষে বলবো, মহানবী (সাঃ)-এর মি’রাজ ছিলো স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায়। বায়তুল্লাহ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস, সেখান থেকে সপ্তাকাশ পাড়ি দিয়ে সিদরাতুল মুনতাহায় গিয়ে, সেখান থেকে রফরফে করে মহান আল্লাহ সুবহানাহু অ-তা’য়ালার আরশে আজিমে পৌঁছেন। মহান আল্লাহর সাথে কথা বলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উপহারস্বরূপ নিয়ে পুনরায় মক্কা মুয়াজ্জামায় চলে আসেন। এ সফর রাতের সামান্যতম সময়ে সংগঠিত হয়। রাসূল (সাঃ) উম্মে হানীর ঘরে বা কাবার হাতীমে শায়িত ছিলেন। সেখানে জিব্রাঈল (আঃ) বোরাক নিয়ে এসে বোরাকে করে রাসূল (সাঃ) মি’রাজে যান। মি’রাজে বায়তুল মোকাদ্দাসে সকল নবীদের ইমাম হয়ে দুই রাকয়াত নামাজ পড়ান। বায়তুল মোকাদ্দাসের সখরা পাথর থেকে ঊর্ধাকাশে সফর সিঁড়ির মাধ্যমে শুরু হয়। প্রথম আসমানে হযরত আদম (আঃ)কে দ্বিতীয় আসমানে ইয়াহইয়া (আঃ) ও ঈসা (আঃ) তৃতীয় আসমানে ইউসুফ (আঃ) চতুর্থ আসমানে ইদ্রিস (আঃ)পঞ্চম আসমানে হযরত হারুন (আঃ) ষষ্ঠ আসমানে মুসা (আঃ) সপ্তম আসমানে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে দেখতে পান।

মি’রাজে রাসূল (সাঃ) জান্নাত ও জাহান্নাম দর্শন করেন। ফেরেশতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। মহান আল্লাহর অসংখ্য-অগণিত কুদরত প্রত্যক্ষ করেন।

মুফতি মুহাঃ আবু বকর বিন ফারুক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়