শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

কুরআন ও হাদিসের আলোকে মি’রাজুন্নবী (সাঃ)

কুরআন ও হাদিসের আলোকে মি’রাজুন্নবী (সাঃ)
মুফতি মুহাঃ আবু বকর বিন ফারুক

‘সুবহানাল্লাজী আসর বিআবদিহী লাইলাম্ মিনাল মাসজিদিল হারমি ইলাল মাসজিদিল আকসাল্লাজি বারকনা হাওলাহু লিনুরিয়াহু মিন আয়াতিনা, ইন্নাহু হু-অস সামিউল বাচির।’ অর্থাৎ পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছিÑযাতে নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। (আল কুরআন)

‘আসরা’ শব্দটি ‘ইসরা’ ধাতু থেকে উৎপন্ন। এর অভিধানিক অর্থ রাতে নিয়ে যাওয়া। যেহেতু রাসূলে পাক (সাঃ) মহান আল্লাহ পাকের নির্দেশে হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-এর সঙ্গী হয়ে হযরত উম্মেহানীর ঘর থেকে বের হয়ে পবিত্র খানেয়ে কাবায় এসে বোরাকে আরোহণপূর্বক অতি অল্প সময়ের মধ্যে ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ বা ‘মসজিদে আকসায়’ এসে উপস্থিত হন। পথিমধ্যে তিনি ‘আলমে বারযাখের’ অনেক অনেক আযীবাত প্রত্যক্ষ করেন। মসজিদে আকসায় এসে সমস্ত আম্বিয়া আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপস্থিতিতে সকল নবী আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইমাম হয়ে তিনি দু রাকাত নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে সকল নবী আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লামের শ্রেষ্ঠত্বের প্রশংসা করে সংক্ষিপ্ত ভাষণ বা খুতবা পেশ করেন। এ যার গর্ভ খুতবা প্রদান করে ইমামুল মুরসালীন হিসেবে সকলের থেকে বিদায় গ্রহণ করেন। এ প্রক্রিয়াকেই আরবি ভাষায় ‘ইসরা’ বলা হয়। পবিত্র আয়াতে কারিমায় এ দিকেই ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। আয়াতে কারীমায় প্রথমেই ‘সুবহানা’ শব্দ ব্যবহার করে মহান আল্লাহ তা’য়ালা জগৎবাসীদের জানিয়ে দিলেন যে, মেরাজ তোমাদের কাছে আশ্চর্যের বিষয় মনে হবে আর এ ঘটনাকে আল্লাহ তা’য়ালা ‘সুবহানা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। যা সত্যিই আশ্চর্যের বিষয় মনে হবে। অথচ এটিই বাস্তবে ঘটনা। আয়াতে কারীমায় ‘আসরা’ দ্বারা রাত্রিকালীন ভ্রমণ বুঝানো হয়েছে। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, মেরাজ রাতে হয়েছে।

আয়াতে ‘বি-আবদিহী’ দ্বারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। আমার বান্দা বলে প্রেয়ময়তা বুঝানো হয়েছে। কেনো না আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর কোনো বান্দাকে আমার বান্দা বলার দ্বারা তাঁর প্রতি ভালোবাসাই বুঝায়। আর আয়াতে ‘বি-আবদিহী’ দ্বারা বুঝা যায় যে, মেরাজ স্ব-শরীরে হয়েছে। কারণ শুধু আত্মাকে দাস বলে না বরং আত্মা ও দেহ উভয়ের সমষ্টিকেই দাস বলা হয়। এছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজ থেকে এসে উম্মেহানীকে যখন ঘটনা শোনালেন তিনি বললেন, আপনি কারো কাছে এটি প্রকাশ করবেন না; প্রকাশ করলে কাফেররা আপনাকে আরও বেশি মিথ্যারোপ করবে। মেরাজ যদি স্বপ্নই হতো তাহলে মিথ্যারোপের কারণ থাকতে পারে না কেনো না স্বপ্নে মানুষ অনেক কিছুই দেখতে পারে। কথা অস্বীকার বা মিথ্যারোপের কোনো কারণ থাকতে পারে না। মেরাজ সত্য এবং স্ব-শরীরে বিধান কাফেররা এটিকে মিথ্যারূপ করতে পারে। এতেই বুঝা গেলো যে মেরাজ স্বশরীরে ছিলো।

আয়াতে কারীমায় ‘লাইলাম’ শব্দ ব্যবহারের দ্বারা বুঝা গেলো মেরাজ রাতের সামান্য সময় ছিলো। মেরাজের জন্যে সারারাত প্রয়োজন হয় না। দুনিয়ার হিসেবে এটি নিতান্ত সামান্য সময়। রাসূল সাল্লাল্লাই আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মেহানীর ঘরে শায়িত থেকে সেখান থেকে জিব্রাঈল (আঃ)-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশে মেরাজে চলেন। মেরাজ থেকে ভোর হওয়ার পূর্বেই আবার চলে আসেন। এটিই রাত্রের সামান্য সময় যা ‘লাইলাম’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে।

মেরাজ ছিলো দীর্ঘ সাতাশ বছর। যা আমাদের হিসেবে সামান্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বিছানায় শায়িত ছিলেন মেরাজ থেকে ফিরে এসে দেখলেন সে বিছানা এখনও গরম। দরজা কড়া লড়তে শুরু করে মেরাজ থেকে ফিরে এসে দেখেন ২৭ বছর পর এসে দেখেন অযুর পানীয় এখনও পর্যন্ত গড়াচ্ছে। সুবহান আল্লাহ। এটিই ‘লাইলাম’ দুনিয়ার হিসেবকে ব্রেক করে দিয়ে আদেশ জারি করে দিলেন চন্দ্র-সূর্যসহ সকল সৃষ্টি যে যেখানে আছে সে সেখানেই থাক আমি আমার হাবীবকে দীর্ঘ ২৭ বছর মেরাজে নিয়ে আসবো। ঠিক ২৭ বছর পর আবারও ঘোষণা জারি করে দিলেন যে, হে সৃষ্টি জগৎ তোমরা পূর্বের ন্যায় চলমান হয়ে যাও। এ ব্রেকেই ২৭ বছর অতিবাহিত হয়েছে। আর এটি আল্লাহর জন্যেই সম্ভব। কেনো না মহান আল্লাহ তা’য়ালা সকল ক্ষমতার মালিক। আর এটিই দুনিয়ার হিসেবে ‘লাইলাম’ এ ‘লাইলাম’ একেবারই সামান্য সময়। যা আল্লাহ তা’য়ালারই কুদরত। আর এজন্যেই আয়াতের প্রথমেই ‘সুবহনা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আয়াতে কারীমায় ‘মিনাল মাসজিদিল হারামে ইলাল মাসজিদিল আকসা’। মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত তাঁর এ ভ্রমণ। তাহলে এর দ্বারা বুঝা যায় যে, মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকছা পর্যন্ত ভ্রমণ পবিত্র কুরআন দ্বারা সাবেত। যেখানে এক মাসের পথ সেখানে যদি রাতের কিছু সময়ে যাওয়া সাব্যস্ত হয় তাহলে ঊর্ধ্বাকাশে যাওয়া ও আল্লাহর ইচ্ছাধীন এবং আল্লাহর ক্ষমতায় অবশ্যই অবশ্যই সম্ভব। কেউ কেউ বলেছেন যে, মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত হচ্ছে ‘আসরা’। আর মসজিদে আকসা থেকে সপ্তাকাশে, আরশে আজীম সেই ঊর্ধ্ব জগতের ভ্রমণই হলো মেরাজ।

আয়াতে ‘বারকনা হাওলাহু’ দ্বারা যার চার দিকে বরকতের কথা বলা হয়েছে যে, এ মেরাজে যাওয়ার পথের চতুর্দিকে বরকতময়। এ ‘হাওলহু’ দ্বারা সমগ্র সিরিয়াকে বুঝানো হয়েছে। এক হাদিসে রয়েছে, আল্লাহ তা’য়ালা আরশ থেকে ফোরাত নদী পর্যন্ত বরকতময় ভূ-পৃষ্ঠকে বিশেষ পবিত্রতা দান করেছেন। (রূহল মাইনী)

‘লিনুরিয়াহু মিন আয়াতিনার’ অর্থাৎ যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। মেরাজের রজনীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ তা’য়ালার কুদরতের অসংখ্য বিষয় অবলোকন করেন। তন্মধ্যে সপ্তাকাশ, নবীদের সাথে সাক্ষাত, বায়তুল মুকাদ্দাসের সনরা পাথর, বোরাক, রফরফ, সিদরাতুল মুনতাহা, জান্নাত-জাহান্নাম ও আলমে বরযখের কতিপয় দৃশ্যাবলীসহ মহান আল্লাহ তা’য়ালার অসংখ্য নিদর্শনাবলি।

নি¤েœ আলমে বরযখের কতিপয় বিষয় তুলে ধরা হলো

বোরাকে আরোহন করার পর তিনি একটি সবুজ মাঠ দেখতে পেলেন সেখানে নারী-পুরুষ সজ্জিত হয়ে ক্ষেত-খামারের কাজে ব্যস্ত। তারা একদিকে জমিন প্রস্তুত করেছে, অপরদিকে বীজ বুনন করছে। আর সাথে সাথে তা শস্য-শ্যামলা হয়ে ক্ষেতে ভরে যাচ্ছে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত জিব্রাঈল (আঃ)কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন এটি ওই সম্প্রদায়ের উদাহরণ; যারা আল্লাহর রাহে প্রশস্ত মনে দুনিয়াতে দান সদকা করে।

এমন এক দল বদনসীবদের দেখা পেলেন যেখনে অসংখ্য নারী-পুরুষ বিরাট একটা পাথর যুক্ত মাঠে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। আর তাদের মাথার উপর বড় বড় পাথর দ্বারা আঘাত করা হচ্ছে। পাথরের আঘাতে তাদের মাথা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে, আবার এটি পূর্ববৎ ভালো হয়ে যাচ্ছে আর মারছে। এরা হচ্ছে ওই সম্প্রদায় যারা নামাজ না পড়ে বিছানায় আরামের সাথে শুয়ে থাকতো এবং অলসতা করে বিছানা ছেড়ে নামাজের জন্যে যেতো না। বরং অহঙ্কার করে দিন কাটাতে। বিশাল আলোচনার যৎকিঞ্চিত এখানে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেরাজ সংঘটিত হয়েছিলো নবুয়তের ১২ সালে যা মক্কা শরীফে উম্মেহানীর ঘর বা কাবার হাতিম থেকে। এ সফরে তাঁর ছিনাচাক করা হয়েছে।

তফসীরে কুরতুবীতে আছে, ইসরার হাদিসসমূহ সব মুতাওয়াতির। নাক্কাশ সম্পর্কে ২০ জন সাহাবীর রেওয়ায়েত উদ্ব্যত করেছেন এবং কাযী আয়ায় শেফা গ্রন্থে আরও বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।

ইমাম ইবনে কাসীর স্বীয় তফসীর গ্রন্থে এসব রেওয়ায়েত পূর্ণরূপে যাচাই-বাছাই করে বর্ণনা করেছেন। কতাদাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে, তিনি মালিক ইবনু সস’আহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। আল্লাহর নবী (সাঃ)-কে যে রাত্রে মি’রাজ করানো হয়েছিল, সে রাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি তাদেরকে বলেছেন, একদিন আমি কা’বার হাত্বীম অংশে কাত হয়ে শুয়েছিলাম।

বর্ণনাকারী (কতাদাহ্) কখনো কখনো (হাত্বীম-এর স্থলে) ‘হিজর’ শব্দ বলেছেন। এমন সময় হঠাৎ-একজন আগন্তুক আমার কাছে আসলেন এবং তিনি এ স্থান হতে ওই স্থান পর্যন্ত চিরে ফেললেন। অর্থাৎ কণ্ঠনালীর নি¤œভাগ হতে নাভির উপরিভাগ পর্যন্ত বিদীর্ণ করলেন। তারপর ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণের থালা আমার কাছে আনা হলো, এরপর আমার অন্তরকে ধৌত করা হয়, তারপর তাকে ঈমানে পরিপূর্ণ করে আবার পূর্বের জায়গায় রাখা হয়।

অপর এক বর্ণনায় আছে, অতঃপর যমযমের পানি দ্বারা পেট ধৌত করা হয়, পরে ঈমান ও হিকমতে তাকে পরিপূর্ণ করা হয়। তারপর আকারে খচ্চরের চেয়ে ছোট এবং গাধা অপেক্ষা বড় এক সাদা বর্ণের বাহন আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হয়। তাকে বলা হয় ‘বুরাক’। তার দৃষ্টি যতো দূর যেতো, সেখানে তার পা রাখতো। নবী (সাঃ) বলেন, অতঃপর আমাকে তার উপরে আরোহণ করানো হলো।

এবার জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে সাথে নিয়ে যাত্রা করলেন এবং নিকটতম আসমানে পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? বললেন, (আমি) জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাঃ)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন বলা হলো, তার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তার আগমন বড়ই শুভ। তারপর দরজা খুলে দেয়া হলো। যখন আমি ভেতর প্রবেশ করলাম, তখন সেখানে দেখতে পেলাম ইয়াহইয়া ও ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-কে। তারা দুজন পরস্পর খালাতো ভাই। জিবরীল আলায়হিস সালাম (আমাকে) বললেন, ইনি হলেন ইয়াহইয়া আলায়হিস সালাম আর উনি হলেন ‘ঈসা আলায়হিস সালাম আপনি তাদেরকে সালাম করুন। যখন আমি সালাম করলাম, তাঁরা উভয়ে সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সদর সম্ভাষণ।

অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানে উঠলেন এবং দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাঃ)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তাঁর প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাঁর আগমন খুবই কল্যাণকর। অতঃপর দরজা খুলে দেয়া হলো। ভেতরে প্রবেশ করে আমি সেখানে ইউসুফ আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হলেন ইউসুফ আলায়হিস সালাম তাকে সালাম করুন। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।

অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে আরো ঊর্ধ্বলোকে যাত্রা করলেন এবং চতুর্থ আসমানে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাঃ)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাঁর আগমন বড়ই শুভ! অতঃপর দরজা খুলে দেয়া হলো। আমি ভেতরে প্রবেশ করে দেখলাম, সেখানে ইদরীস আলায়হিস সালাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি ইদরীস আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলাম, অতঃপর তিনি জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ। এরপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বে আরোহণ করলেন এবং পঞ্চম আসমানে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, কে? বললেন, (আমি) জিবরীল। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাঃ)। আবার প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তার প্রতি সাদর অভিনন্দন। তাঁর আগমন খুবই কল্যাণকর! তারপর দরজা খুলে দিলে আমি যখন ভেতরে পৌঁছলাম, সেখানে হারূন আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হারূন আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলে তিনি উত্তর দিলেন। অতঃপর বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন।

অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে সাথে নিয়ে আরো ঊর্ধ্বলোকে উঠলেন এবং ষষ্ঠ আকাশে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, কে? বললেন, জিবরীল। প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাঃ)! পুনরায় প্রশ্ন করা হলো তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হা। বলা হলো, তার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তারা আগমন কতই না উত্তম! তারপর দরজা খুলে দিলে আমি যখন ভেতরে প্রবেশ করলাম, তখন সেখানে মূসা আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হলেন, মূসা আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলে তিনি তার জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন। অতঃপর আমি যখন তাঁকে অতিক্রম করে অগ্রসর হলাম, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, আমি এজন্যে কাঁদছি যে, আমার পরে এমন একজন যুবককে (নবী বানিয়ে) পাঠানো হলো, যার উম্মত আমার উম্মত অপেক্ষা অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।

অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে সপ্তম আকাশে আরোহণ করলেন। অনন্তর জিবরীল আলায়হিস সালাম দরজা খুলতে বললে, প্রশ্ন করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাঃ)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর বলা হলো, তাঁর প্রতি সাদর অভিনন্দন। তাঁর আগমন কতই না উত্তম! অতঃপর আমি যখন ভেতরে প্রবেশ করলাম সেখানে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হলেন আপনার পিতা ইবরাহীম আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। তখন আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার পুত্র ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন।

অতঃপর আমাকে ‘সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উঠানো হলো। আমি দেখতে পেলাম, তার ফল হাজার নামক অঞ্চলের মটকার ন্যায় এবং তার পাতা হাতির কানের মতো। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, এটাই সিদরাতুল মুনতাহা। আমি (তথায়) আরো দেখতে পেলাম চারটি নহর। দু’টি নহর অপ্রকাশ্য, আর দুটি প্রকাশ্য। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরীল! এ নহরের তৎপর্য কি? তিনি বললেন, অপ্রকাশ্য দুটি হলো জান্নাতে প্রবাহিত দুটি নহর। আর প্রকাশ্য দুটি হলো (মিসরের) নীল এবং (ইরাকের) ফুরাত নদী। অতঃপর আমাকে বায়তুল মা’মূর দেখানো হলো। তারপর আমার সামনে হাজির করা হলো এক পাত্র মদ, এক পাত্র দুধ ও এক পাত্র মধু। তার মধ্য হতে আমি দুধ গ্রহণ করলাম (এবং তা পান করলাম)। তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, এটা ফিত্বরাত'-এর (স্বভাব-ধর্মের) নিদর্শন। আপনি এবং আপনার উম্মত সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবেন।

অতঃপর আমার ওপর দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করা হলো। আমি (তা গ্রহণ করে) প্রত্যাবর্তন করলাম। মূসা আলায়হিস সালাম-এর সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি (আমাকে) বললেন, আপনাকে কি করতে আদেশ করা হয়েছে? আমি বললাম, দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত সম্পাদনে সক্ষম হবে না। আল্লাহর শপথ! আপনার পূর্বে আমি (বানী ইসরাঈলের) লোকেদেরকে পরখ করে দেখেছি এবং বানী ইসরাঈলদের হিদায়াতের জন্য আমি যথাসাধ্য পরিশ্রম করেছি। অতএব আপনি আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের পক্ষে (সালাত) আরো হ্রাস করার জন্যে আবেদন করুন। তখন আমি ফিরে গেলাম (এবং ঐভাবে প্রার্থনা জানালে) আল্লাহ তা’আলা আমার ওপর হতে দশ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিলেন। তারপর আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসালাম। তিনি এবারও অনুরূপ কথা বললেন। ফলে আমি আমি পুনরায় আল্লাহর কাছে ফিরে গেলাম। তিনি আমার ওপর হতে আরো দশ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিলেন। আবার আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসালাম। তিনি অনুরূপ কথাই বললেন। তাই আমি (আবার) ফিরে গেলাম। তখন আল্লাহ তা’আলা আরো দশ (ওয়াক্ত সালাত) মাফ করে দিলেন। অতঃপর আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসলে আবারো তিনি ঐ কথাই বললেন। আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা’আলা আমার জন্য দশ ওয়াক্ত সালাত কম করে দিলেন এবং আমাকে প্রত্যহ দশ ওয়াক্ত সালাতের আদেশ করা হলো। আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসালাম। এবারও তিনি অনুরূপ কথাই বললেন। ফলে আমি পুনরায় ফিরে গেলে আমাকে প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের আদেশ করা হলো। আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে পুনরায় ফিরে আসলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনাকে (সর্বশেষ) কি করতে আদেশ করা হলো? আমি বললাম, আমাকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের আদেশ করা হয়েছে।

তিনি বললেন, আপনার উম্মত প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সমাপনে সক্ষম হবে না। আপনার পূর্বে আমি (বানী ইসরাঈলের) লোকেদেরকে বিশেষভাবে পরখ করে দেখেছি এবং বানী ইসরাঈলের হিদায়াতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা ও কষ্ট স্বীকার করেছি, তাই আপনি আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের জন্য আরো কম করার প্রার্থনা করুন। তিনি (সাঃ) বললেন, আমি আমার প্রভুর কাছে (স্বীয় কর্তব্য পালনের জন্য) এতো অধিকবার প্রার্থনা জানিয়েছি যে, পুনরায় প্রার্থনা জানাতে আমি লজ্জাবোধ করছি, বরং আমি (আল্লাহর এ নির্দেশের উপর) সন্তুষ্ট এবং আমি (আমার ও আমার উম্মতের ব্যাপার) আল্লাহর ওপর অর্পণ করছি। তিনি (সাঃ) বলেন, আমি যখন মূসা আলায়হিস সালাম-কে অতিক্রম করে সম্মুখে অগ্রসর হলাম, তখন (আল্লাহর পক্ষ হতে) ঘোষণাকারী ঘোষণা দিলেন, আমার অবশ্য পালনীয় আদেশটি আমি চালু করে দিলাম এবং বান্দাদের জন্য সহজ করে দিলাম। (বুখারী ও মুসলিম) হাদিসটি সহীহ : বুখারী ৩২০৭, মুসলিম ২৬৪-(১৬৪), নাসায়ী ৪৪৮, সহীহুল জামি' ২৮৬৬, মুসনাদে আহমাদ ১৭৮৬৭, সহীহ ইবনু খুযায়মা ৩০১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৮, আস্ সুনানুস্ সুগরা ২২৯। ৫৮৬৩-[২] সাবিত আল বুনানী (রহিমাহুল্লাহ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমার সামনে বুরাক’ উপস্থিত করা হলো। তা শ্বেত বর্ণের লম্বা কায়াবিশিষ্ট একটি জানোয়ার, গাধার চেয়ে বড় এবং খচ্চর অপেক্ষা ছোট। তার দৃষ্টি যত দূর যেত সেখানে পা রাখত। আমি তাতে আরোহণ করে বায়তুল মাক্বদিসে এসে পৌঁছলাম এবং অন্যান্য নবীগণ যে স্থানে নিজেদের বাহন বাঁধতেন, আমিও আমার বাহনকে সেখানে বাঁধলাম। নবী (সাঃ) বলেন, অতঃপর বায়তুল মাকদিসের মাসজিদে প্রবেশ করে সেখানে দু'রাকআত সালাত আদায় করলাম। তারপর মাসজিদ হতে বের হলাম, তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম আমার কাছে এক পাত্র মদ ও এক পাত্র দুধ নিয়ে আসলেন। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, আপনি (ইসালামরূপী) ফিত্বরাত (স্বভাব-ধর্ম ইসালাম গ্রহণ করেছেন। অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে আকাশের দিকে নিয়ে চললেন, এর পরবর্তী অংশ সাবিত আল বুনানী (রহিমাহুল্লাহ) আনাস (রাঃ) হতে পূর্ববর্ণিত হাদীসটির মর্মানুরূপ বর্ণনা করেছেন।

নবী (সাঃ) বলেন, হঠাৎ আমি আদম আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। তিনি আমাকে সাদর সম্ভাষণ জানালেন এবং আমার জন্য ভালো দু'আ করলেন। নবী (সাঃ) এটাও বলেছেন যে, তিনি তৃতীয় আকাশের ইউসুফ আলায়হিস সালাম-এর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন। তিনি এমন লোক যে, তাঁকে (গোটা পৃথিবীর) অর্ধেক সৌন্দর্য দান করা হয়েছে। তিনিও আমাকে সাদর অভিনন্দন জানিয়ে আমার জন্য ভালো দুআ করলেন। সাবিত (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এবং মূসা আলায়হিস সালাম এর কান্নার বিষয়টি এতে উল্লেখ নেই।

নবী (সাঃ) আরো বলেছেন, সপ্তম আকাশে আমি ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম যে, তিনি বায়তুল মা'মূরের সাথে পিঠ লাগিয়ে বসে আছেন। সে ঘরে দৈনিক সত্তর হাজার মালাক (ফেরেশতা) প্রবেশ করেন। যারা একবার বের হয়েছেন, পুনরায় তারা আর প্রবেশ করার সুযোগ পাবেন না। অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে গেলেন। তার পাতাগুলো হাতির কানের মতো এবং তার ফল মটকার মতো। এরপর উক্ত গাছটি আল্লাহ তা’আলার নির্দেশে এমন একটি আবৃতকারী বস্তুতে পরিবর্তিত হয় যে, আল্লাহর সৃষ্ট কোন মাখলুক যার সৌন্দর্যের কোন প্রকার বর্ণনা দিতে সক্ষম হবে না।

এরপর আল্লাহ তা’আলা আমার কাছে ওয়াহী পাঠালেন, যা তিনি পাঠিয়েছেন এবং আমার ওপরে দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করলেন। ফেরার সময় আমি মুসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে আসলে তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন আপনার প্রভু আপনার উম্মতের ওপর কি ফরয করেছেন? আমি বললাম, দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তিনি আমাকে (পরামর্শস্বরূপ) বললেন, আপনি আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান এবং (সালাতের সংখ্যা) কম করার জন্য তার কাছে আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মত এটা দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত সম্পাদন করতে সক্ষম হবে না। আমি বানী ইসরাঈলকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি।

তিনি (সাঃ) বলেন, তখন আমি আমার প্রভুর কাছে ফিরে গিয়ে বললাম, হে আমার প্রভু! আমার উম্মাতের ওপর হতে কম করে দিন। তখন আমার ওপর হতে পাঁচ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিলেন। অতঃপর আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে ফিরে এসে বললাম, আল্লাহ তা’আলা আমার ওপর হতে পাঁচ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিয়েছেন। মূসা আলায়হিস সালাম বললেন, আপনার উম্মত তা সম্পাদনেও সমর্থ হবে না। কাজেই আপনি পুনরায় আপনার প্রভুর কাছে যান এবং আরো কম করার জন্য আবেদন করুন।

নবী (সাঃ) বলেন, আমি এভাবে আমার প্রভু ও মূসা আলায়হিস সালাম-এর মাঝে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম এবং বার বার সালাতের সংখ্যা কমিয়ে আনতে থাকলাম। তিনি (সাঃ) বলেন, সর্বশেষে আমার প্রভু বললেন, হে মুহাম্মাদ! দৈনিক ফরয় তো এই পাঁচ সালাত এবং প্রত্যেক সালাতের সাওয়াব দশ সালাতের সমান। ফলে এটা (পাঁচ ওয়াক্ত) পঞ্চাশ সালাতের সমান। যে লোক কোন একটি ভালো কাজ করার সংকল্প করবে, কিন্তু তা সম্পাদন করেনি, তার জন্য একটি পুণ্য লেখা হবে এবং সে কাজটি সম্পাদন করলে তার জন্য দশটি পুণ্য লেখা হবে। আর যে লোক কোন একটি খারাপ কাজ করার সংকল্প করে তা বাস্তবায়ন না করে, তার জন্য কিছুই লেখা হবে না। অবশ্য যদি সে উক্ত কাজটি বাস্তবায়ন করে, তবে তার জন্য একটি গুনাহই লেখা হবে।

তিনি (সাঃ) বলেন, অতঃপর আমি অবতরণ করে যখন মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট পৌঁছলাম, তখন তাঁকে পূর্ণ বিবরণ জানালাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, আবারও আপনার প্রভুর কাছে যান এবং আরো কিছু কমিয়ে দেয়ার জন্য। অনুরোধ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, আমি বললাম, আমি আমার প্রভুর কাছে বার বার গিয়েছি। এখন পুনরায় যেতে আমার লজ্জাবোধ হচ্ছে। (মুসলিম) হাদিসটি সহীহ : মুসলিম ২৫৯-(১৬২), মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৬০, মুসনাদে আহমাদ ২৩৩৮০, আবূ ইয়া’লা ৩৩৭৫।

মালিক ইবনু সা‘সা‘ থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ...এখানে তিনি মেরাজের হাদিস বর্ণনা করেন, তাতে রয়েছে, “অতঃপর আমার ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়, অতঃপর আমি এগিয়ে মুসা পর্যন্ত আসি, তিনি বলেন, কি করেছ? আমি বললাম, আমার ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষ সম্পর্কে তোমার চেয়ে আমি বেশি জানি, আমি বনি ইসরাইলকে কঠিনভাবে পরীক্ষা করেছি, তোমার উম্মত পারবে না, ফিরে যাও তোমার রবকে বল। আমি ফিরে যাই, অতঃপর তাকে বলি, তিনি তা চল্লিশ ওয়াক্ত করে দেন, অতঃপর অনুরূপ ঘটে, ফলে ত্রিশ করে দেন, অতঃপর অনুরূপ ঘটে, ফলে বিশ করে দেন, অতঃপর অনুরূপ ঘটে, ফলে দশ করে দেন, অতঃপর মুসার নিকট আসি, তিনি অনুরূপ বলেন, ফলে তা পাঁচ করে দেয়া হয়। অতঃপর মুসার নিকট আসি, তিনি বলেন, কি করেছ? আমি বললাম, পাঁচ ওয়াক্ত করে দিয়েছেন, তিনি অনুরূপ বলেন। আমি বললাম, আমি সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করেছি। অতঃপর ঘোষণা দেয়া হয়: নিশ্চয় আমি আমার ফরয বাস্তবায়ন করেছি, আমার বান্দাদের থেকে হালকা করেছি, আমি এক নেকির প্রতিদান দিব দশ”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।

আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার নিকট বোরাক নিয়ে আসা হল, বোরাক হচ্ছে চতুষ্পদ জন্তু সাদা, লম্বা, গাধার চেয়ে বড় ও খচ্চর থেকে ছোট, তার দৃষ্টির শেষ প্রান্তে সে তার পা রাখে, তিনি বলেন, আমি তাতে সওয়ার হলাম, অবশেষে আমাকে বায়তুল মাকদিস নিয়ে আসা হল, তিনি বলেন, আমি তাকে সে খুঁটির সাথে বাঁধলাম যার সাথে নবীগণ বাঁধেন। তিনি বলেন, অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করি, তাতে দু’রাকাত সালাত আদায় করি, অতঃপর বের হই। অতঃপর জিবরিল আমার নিকট মদের ও দুধের পাত্র নিয়ে আসেন, আমি দুধের পাত্র গ্রহণ করি, জিবরিল আমাকে বলেন, তুমি ফিতরাত (স্বভাব) গ্রহণ করেছ, অতঃপর আমাদের নিয়ে আসমানে চড়েন ...”। তিনি হাদিস উল্লেখ করেন, তাতে রয়েছে: “আমি আমার রব ও মুসা আলাইহিস সালামের মাঝে যাওয়া-আসা করতে ছিলাম, অবশেষে তিনি বলেন, হে মুহাম্মদ, প্রতি রাত-দিনে এ হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, প্রত্যেক সালাতের জন্য দশ, এভাবে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত। যে নেক কাজ করার ইচ্ছা করল কিন্তু তা করেনি, আমি তার জন্য একটি নেকি লেখি, যদি সে তা করে তার জন্য দশটি লেখা হয়। যে পাপ করার ইচ্ছা করে কিন্তু সে তা করে নি, তার জন্য কিছু লেখা হয় না, যদি সে তা করে তবে তার জন্য একটি পাপ লেখা হয়। তিনি বলেন, অতঃপর আমি অবতরণ করে মুসা আলাইহিস সালামের নিকট পৌঁছলাম এবং তাকে সংবাদ দিলাম, তিনি আমাকে বললেন: তোমার রবের নিকট ফিরে যাও, তার নিকট হ্রাসের দরখাস্ত কর, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি বললাম আমি আমার রবের নিকট বারবার গিয়েছি এখন লজ্জা করছি”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।

আবূ যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামথেকে বর্ণিত, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “এ হচ্ছে পাঁচ, অথচ তা পঞ্চাশ, আমার নিকট কথার (সিদ্ধান্তের) কোন পরিবর্তন নেই”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ। অর্থাৎ কর্মে পাঁচ কিন্তু সাওয়াবে পঞ্চাশ।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি মসজিদে কা‘বা হতে রাতে অনুষ্ঠিত ইসরা-এর ঘটনা বর্ণনা করছিলেন যে, তিন ব্যক্তি তাঁর নিকট হাযির হলেন মি’রাজ সম্পর্কে ওয়াহী অবতরণের পূর্বে। তখন তিনি মাসজিদুল হারামে ঘুমিয়ে ছিলেন। তাঁদের প্রথম জন বলল, তাদের কোন জন তিনি? মাঝের জন উত্তর দিল, তিনিই তাদের শ্রেষ্ঠ জন। আর শেষজন বলল, শ্রেষ্ঠ জনকে নিয়ে চল। এ রাতে এটুকুই হলো এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাদেরকে আর দেখেন নাই। অতঃপর আর এক রাতে তাঁরা আসলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্তর তা দেখতে পাচ্ছিল। যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চোখ ঘুমাত কিন্তু তাঁর অন্তর কখনও ঘুমাত না। এভাবে সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের চোখ ঘুমাত কিন্তু অন্তর ঘুমাত না। অতঃপর জিব্রাঈল (আঃ) দায়িত্ব গ্রহণ করলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিয়ে আকাশের দিকে চড়তে লাগলেন। (সহীহ বুখারী ৪৯৬৪, ৫৬১০, ৬৫৮১, ৭৫১৭, মুসলিম ১/৭৪ হাঃ ১৬২) (আধুনিক প্রকাশনী : ৩৩০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ৩৩১৪)

আল্লাহ তা’আলা বলেন, “পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রজনী যোগে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম হতে মসজিদে আক্সা পর্যন্ত-।” (বানী ইসরাঈল-১)

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, যখন কুরাইশরা আমাকে অস্বীকার করল, তখন আমি কা‘বার হিজর অংশে দাঁড়ালাম। আল্লাহ্ তা’আলা তখন আমার সামনে বায়তুল মুকাদ্দাসকে তুলে ধরলেন, যার কারণে আমি দেখে দেখে বাইতুল মুকাদ্দাসের নিদর্শনগুলো তাদের কাছে ব্যক্ত করছিলাম। (সহীহ বুখারী ৪৭১০, মুসলিম ১/৭৫, হাঃ নং ১৭০, আহমাদ ১৫০৩৮) (আধুনিক প্রকাশনী : ৩৫৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ৩৬০৪)

ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহ তা’আলার বাণী ‘আর আমি যে দৃশ্য আপনাকে দেখিয়েছি তা কেবল মানুষের পরীক্ষার জন্য’ (বনী ইসরাঈল : ২০) এর তাফসীরে বলেন, এটি হল প্রত্যক্ষভাবে চোখের দেখা যা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সে রাতে দেখানো হয়েছে যে রাতে তাঁকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়েছিল ইবনু ‘আববাস (রাঃ) আরো বলেন, কুরআনে যে অভিশপ্ত বৃক্ষের কথা বলা হয়েছে, তা হলো যাক্কুম বৃক্ষ। (বুখারী ৪৭১৬, ৬৬১৩) (আধুনিক প্রকাশনী : ৩৬০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ৩৬০৬)

মহান আল্লাহর বাণী : হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া আর আস্তানা ও ভাগ্য নির্ধারক তীর ঘৃণিত শয়তানী কাজ, তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সাফল্যম-িত হতে পার। সূরাহ আল-মায়িদাহ ৫ঃ৯০)

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইসরা (মি’রাজের) রাতে ঈলিয়া নামক স্থানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মুখে শরাব ও দুধের দু’টি পেয়ালা পেশ করা হল। তিনি উভয়টির প্রতি লক্ষ্য করলেন। এরপর দুধের পেয়ালাটি গ্রহণ করেন। তখন জিবরীল (আঃ) বললেন, যাবতীয় প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আপনাকে স্বভাবজাত দ্রব্যের দিকে পথ প্রদর্শন করেছেন। অথচ যদি আপনি শরাব গ্রহণ করতেন তাহলে আপনার উম্মাত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত। [বুখারী শরীফ ৩৩৯৪]

যুহরী (রহঃ) থেকে মা’মার, ইবনু হাদী, ‘উসমান, ইবনু ‘উমার ও যুবাইদী এরকম বর্ণনা করেছেন। আধুনিক প্রকাশনী-৫১৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-৫০৬৩)

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি মসজিদে কা’বা থেকে রাতে অনুষ্ঠিত ইসরা এর ঘটনা বর্ণনা করছিলেন যে, তিন ব্যাক্তি (ফিরিশতা) তাঁর নিকট হাজির হলেন মি’রাজ সম্পর্কে ওহী অবতরণের পূর্বে। তখন তিনি মাসজিদুল হারামে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। তাদের প্রথমজন বলল, তাদের (তিন জনের) কোন জন তিনি? (যেহেতু নবীজীর পাশে হামযা ও জাফর শুয়ে ছিলেন) মধ্যম জন উত্তর দিল, তিনই (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের শ্রেষ্ঠ জন। আর শেষ জন বলল, শ্রেষ্ঠ জনকে নিয়ে চল। এ রাত্রে এতটুকুই হল, এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহ্ িওয়াসাল্লামও তাদেরকে আর দেখেন নাই। অতঃপর আরেক রাতে তাঁরা আগমন করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তর তা দেখতে পাচ্ছিল। যেহেতু, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চোখ ঘুমাত কিন্তু তাঁর অন্তর সদা জাগ্রত থাকত। সকল আম্বিয়া কেরামের অবস্থা এরুপই ছিল যে, তাঁদের চোখ ঘুমাতো কিন্তু তাঁর অন্তর সদা জাগ্রত থাকত। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) (ভ্রমণের) দায়িত্ব গ্রহণ করলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে আকাশের দিকে চড়তে লাগলেন।(বুখারী শরীফ ৩৩১৭)

মে’রাজের সংক্ষিপ্ত ঘটনা

ইমাম ইবনে কাসীর তার তাফসীর গ্রন্থে আলোচ্য আয়াতের তাফসীর এবং সংশ্লিষ্ট হাদীসসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করার পর বলেন, সত্য কথা এই যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসরা সফর জাগ্রত অবস্থায় করেন; স্বপ্নে নয়। মক্কা মোকাররমা থেকে বাইতুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত এ সফর বোরাকযোগে করেন। তারপরের সংক্ষিপ্ত ঘটনা হলো, বায়তুল-মোকাদ্দাসের দ্বারে উপনীত হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বোরাকটি অদূরে বেঁধে দেন এবং বায়তুল মোকাদাসের মসজিদে প্রবেশ করেন এবং কেবলার দিকে মুখ করে দু'রাক’আত সালাত আদায় করেন। অতঃপর সিঁড়ি আনা হয়, যাতে নীচ থেকে উপরে যাওয়ার জন্য ধাপ বানানো ছিল। তিনি সিঁড়ির সাহায্যে প্রথমে প্রথম আসমানে, তারপর অবশিষ্ট আসমানসমূহে গমন করেন। এ সিঁড়িটি কি এবং কিরূপ ছিল, তার প্রকৃত স্বরূপ আল্লাহ তা’আলাই জানেন। প্রত্যেক আসমানে সেখানকার ফেরেশতারা তাকে অভ্যর্থনা জানায় এবং প্রত্যেক আসমানে সে সমস্ত নবী-রাসূলদের সাথে সাক্ষাত হয়, যাদের অবস্থান কোন নির্দিষ্ট আসমানে রয়েছে। যেমন, ষষ্ঠ আসমানে মূসা আলাইহিসসালাম এবং সপ্তম আসমানে ইবরাহীম আলাইহিসসালামের সাথে সাক্ষাৎ হয়। তারপর তিনি পয়গম্বর গণের স্থানসমূহও অতিক্রম করে এবং এক ময়দানে পৌঁছেন, যেখানে তাকদীর লেখার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। তিনি ‘সিদরাতুল-মুনতাহা’ দেখেন, যেখানে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে স্বর্ণের প্রজাপতি এবং বিভিন্ন রঙ এর প্ৰজাপতি ইতস্ততঃ ছোটাছুটি করছিল। ফেরেশতারা স্থানটিকে ঘিরে রেখেছিল। এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈলকে তাঁর স্বরূপে দেখেন। তাঁর ছয়শত পাখা ছিল। তিনি বায়তুল-মামুরও দেখেন। বায়তুল-মামুরের নিকটেই কা'বার প্রতিষ্ঠাতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম প্রাচীরের সাথে হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। এই বায়তুল মামুরে দৈনিক সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করে। কেয়ামত পর্যন্ত তাদের পুর্নবার প্রবেশ করার পালা আসবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বচক্ষে জান্নাত ও জাহান্নাম পরিদর্শন করেন। সে সময় তার উম্মতের জন্য প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সালাত ফরয হওয়ার নির্দেশ হয়। তারপর তা হ্রাস করে পাঁচ ওয়াক্ত করে দেয়া হয়। এ দ্বারা ইবাদতের মধ্যে সালাতের বিশেষ গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়। এরপর তিনি বায়তুল-মোকাদ্দাসে ফিরে আসেন এবং বিভিন্ন আসমানে যেসব পয়গম্বরের সাথে সাক্ষাত হয়েছিল তারা ও তাকে বিদায় সম্বর্ধনা জানাবার জন্য বায়তুল-মোকাদ্দাস পর্যন্ত আগমন করেন। তখন নামাযের সময় হয়ে যায় এবং তিনি পয়গম্বর গণের সাথে সালাত আদায় করেন। সেটা সে দিন কার ফজরের সালাত ও হতে পারে।

ইবনে-কাসীর বলেন, নামাযে পয়গম্বরগণের ইমাম হওয়ার এ ঘটনাটি কারও মতে আসমানে যাওয়ার পূর্বে সংঘটিত হয়। কিন্তু বাহ্যতঃ এ ঘটনাটি প্রত্যাবর্তনের পর ঘটে। কেননা, আসমানে নবী-রাসূলগণের সাথে সাক্ষাতের ঘটনায় একথা ও বর্ণিত রয়েছে যে, জিব্রাঈল সব পয়গম্বরগণের সাথে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন। ইমামতির ঘটনা প্রথমে হয়ে থাকলে এখানে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। এছাড়া সফরের আসল উদ্দেশ্য ছিল উর্ধ্ব জগতে গমন করা। কাজেই একাজটি প্রথমে সেরে নেয়াই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত মনে হয়। আসল কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর সব পয়গম্বর বিদায় দানের জন্যে তার সাথে বায়তুল-মোকাদ্দাস পর্যন্ত আসেন এবং জিব্রাঈলের ইঙ্গিতে তাকে সবাই ইমাম বানিয়ে কার্যতঃ তার নেতৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেয়া হয়। এরপর তিনি বায়তুল মোকাদ্দেস থেকে বিদায় নেন এবং বোরাক সওয়ার হয়ে অন্ধকার থাকতেই মক্কা মোকাররমা পৌঁছে যান।

পবিত্র কুরআন ও হাদিসের দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেরাজের সত্যতা এবং স্ব-শরীরে মেরাজ প্রমাণিত। আমরা এর দ্বারা আমাদের আমলী জিন্দেগি গঠন করবো। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দান করুক। আমীন।

মুফতি মুহাঃ আবু বকর বিন ফারুক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়