প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২১, ১৯:৫৬
কবির মুক্তি চাই
আমি কারাগারে চিত হয়ে শুয়ে আছি। চোখে প্রচ- ঘুম। ¯œায়ু সজাগ। নাকে বিরিয়ানির গন্ধ আসছে! সারারাত একটুও ঘুমাতে পারিনি। রাতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে মশারা একটু বেশিই উত্তেজিত ছিলো। ফলে আমার সর্বাঙ্গে অকৃপণ চুম্বনে চুম্বনে ভালোবাসা দিয়ে সারারাত সজাগ রেখেছিলো। মশাদের ব্যাপারে আমার নানি বলতেন, ‘হারিকেনটা নিভাই রাখ্ তই মশা আঙ্গোরে দেখতো না!’ নানির যে এটা ভুল ধারণা সেটা আমি আজন্ম বুঝাইতে পারিনি।
|আরো খবর
-শেখ ভাই, শেখ ভাই।
-হুম।
-উডেন আন্নয়ের লগে বহুত জরুরি কতা আছে। তাছাড়া আন্নের লাই বিরিয়ানি আনছি।
আমি হঠাৎ উঠে বসলাম। সে একটু অবাক হয়েছে।
-ভাই, কইলেন না তো আপনি কি অপরাধ কইচ্ছেন? জেলে আইছেন কিল্লাই?আমি কোনো কথা বললাম না। সে একের পর এক প্রশ্ন করেই চলছে। আমি অসহ্য হয়ে উঠে দাঁড়ালাম। সে-ও দাঁড়ালো। আমি বাধ্য হয়ে কারাগার লাইব্রেরির দিকে এগিয়ে চললাম। সে-ও নাচরবান্দা। আমার পিছু ছাড়ছে না। সে আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো, ‘আন্নেরে বিরক্ত করার জন্যে আরে একটা তাপ্পর দেন। তবুও আই বেক হুনতে চাই’। কথাটা শুনতেই মায়া পড়ে গেলাম। পৃথিবীতে সবচেয়ে খারাপ জিনিস মায়া। যে একবার বিপরীতার উপর মায়া পড়ে যায়। সে সহজে সেই আসক্ত থেকে বেরতে না। অতঃপর আমি বলতে লাগলাম, আমার ফেসবুকে আইডি থেকে নাকি কাকে হুমকি-ধমকি দিয়েছি। তাই আমাকে পুলিশ ধরে এনেছে। যদিও আমি কিছুই করিনি। হয়তো আমার আইডি হ্যাকও হতে পারে। অজানা কারণেই আমি জেলে! শুনলাম আমার নামে আইসিটি মামলা হয়েছে কয়েকটা!
-আপনি কি লেখক?
-হুম।
-আপনি নিশ্চয়ই কারো বিপক্ষে লিখছেন?
-একটু-আধটু।
সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, এজন্যেই আপনাকে ষড়যন্ত্র করে আটকাইয়া রাখতে চাইতেছে। আর মনে হয় বাক্স্বাধীনতা এখন শিকলবন্দি। আমি বললাম, যাই হোক, আমি ভয় পাই না। কুদ্দুস মিয়া, তুমি জেলে কেনো?
-আমি আমার এক বন্ধু নিজের সিম চালাতে দিয়েছিলাম। তার তখন আঠারো বছর হয়নি। তাই বন্ধুত্ব রক্ষা করতে সিম দিয়েছিলাম। খুব ভদ্র ও বিশ্বাসযোগ্য ছিলো। কিন্তু একদিন শুনলাম একটা ছেলেকে আমার সিম ব্যবহার করে ডেকে এনে মেরে ফেলেছে। তারপর বিদেশে উধাও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অতঃপর সিআইডি আমাকে কারাগারে নিয়ে আসে। মামলার রায় হয়। আমার চৌদ্দ বছরের জেল হয়! বলতে পারেন খুনির বদলে জেল খাটতেছি।
খুনি মানে আমার বন্ধু অনেক টাকার মালিক। তারা আমাদের পরিবারকে বলেছিলো খাওয়াবে, ঘরবাড়ি করে দিবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সেই কথা তারা রাখেনি! আচ্ছা, এখন কত বছর ধরে জেলে আছো?
-সতেরো বছর।
-কি! তোমার নাকি চৌদ্দ বছরের জেল হয়েছে?
-হুম
-তাহলে তিনবছর ধরে বাড়তি জেল খাটছো যে?
-বাড়ি গিয়া খামু কি? তাছাড়া এখানে ইনকামও আছে। প্রতিদিন বিরিয়ানি-পোলাও খাই। সেটা কি করে কুদ্দুস মিয়া?
-আন্নে আগে কতা দেন আল্লাহ্ কসম খান কারোতেন কইতেন নো।
-বলবো না। কথা দিলামসে বিরতিহীন বলতে শুরু করলো, ওমুক দারোগা সাব একটা মোবাইল দিয়ে ব্যবসা ধরইয়া দিছে। লাভ ফিফটি-ফিফটি। ব্যবসাটা হলো যখন কোনো নতুন আসামীকে ধরে আনে। আসামী বাড়িতে কল করার জন্যে দেওয়ানা হয়ে যায়। তখন এক মিনিটে কারো কাছে একশ’, কারো কাছে পাঁচশ’, কারো কাছে হাজার টাকা নেই। মানুষ বুইজ্জা সিস্টেম করি। কিল্লাই জানি হান্নেরে কইতে সাহস হাই না। ধরেন, বাড়িতে ইচ্ছা হুরাই কতা কন, টিয়া লাগতো না। আচমকা গেইটের বাইরে থেকে শুনতে পেলাম। একদল মানুষ বলছে, তের ঘণ্টা কবিকে আটকে রাখা হয়েছে। কবিকে নিঃশর্তে মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত আমরা জেল গেটে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করলাম। হঠাৎ করেই মসজিদের মাইক থেকে ভেসে আসছে ‘উঠো উঠো আল্লাহর বান্দা ঘুম ছাড়িয়া দাও, মুয়াজ্জ্বিনের ডাকে আল্লাহর ঘরে যাও’।