প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২১, ২২:৩২
টিকা নিয়ে টিপ্পনীর পরেও ঐতিহাসিক শুভযাত্রায় বাংলাদেশ
প্রথমে নিলে বলবে আগে নিজেই নিল কাউকে দিল না কোভিড ১৯ ভ্যাক্সিনেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২৭ শে জানুয়ারী ২০২১ বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে টিকাযজ্ঞের শুভ উদ্বোধন করে তিনি ইতিহাস গড়লেন যদিও বিশ্বের অনেক দেশ এখনো টিকা দেওয়া শুরু করতে পারে নি। সেখানে সীমিত শক্তির বাংলাদেশের এই কার্যক্রমকে নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক সোনালী দিন বলা যেতে পারে। ২০১৯ সালে ডিসেম্বর মাসের দিকে চীনের উহান প্রদেশ থেকে উৎপত্তি করোনা ভাইরাস সমগ্র দুনিয়াকে স্থবির করে দেয় এবং এখনো ভাইরাসটি মানুষকে ভোগাচ্ছে। সেই সময় থেকে বিজ্ঞানীদের বিরামহীন গবেষণা এবং কঠোর শ্রমের বিনিময়ে আজ এই ভাইরাসের টিকা আমাদের হাতের নাগালে এসেছে। দেহ ও মনের পরিপূর্ণ সুস্থতা মানুষের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা। অসুস্থতা একটা দুর্বহ বোঝা। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বা বিজ্ঞানের বিজয় বার্তা যাঁরা নিয়ে এসেছেন তাঁরা সর্বযুগেই সমাদৃত থাকবেন। বর্তমানে বিস্ময়কর অগ্রযাত্রায় প্রতিদিন আবিষ্কৃত হচ্ছে নতুন নতুন ঔষধ, প্রতিষেধক ও রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা। টিকা এদেশে প্রবেশ করা মাত্রই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে এর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, অপপ্রচার করতে দেখা যাচ্ছে। ভিত্তিহীন এবং অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা কিছু মানুষ অন্ধের মতো বিশ্বাস করে টিকা থেকে মুখ ফিরাতে চাইছে। প্রকৃতপক্ষে করোনা টিকা নেওয়ার পর দুনিয়ার কোথাও কোন বড় সমস্যা হয়নি। টিকা তৈরিতে আন্তর্জাতিক রেগুলেটারি গাইড লাইন অনুসরণ করার পর অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছাতে হয়। আবার সবার গভীর আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনতো আছেই। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ের পর সবাইকে স্বাগত জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। প্রথমেই টিকা নিয়ে ইতিহাস গড়লেন পাবনা চাটমোহরের মেয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা জানানোর পর তিনি নির্ধারিত চেয়ারে বসেন তখন প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন “তোমার ভয় লাগছে না তো”। প্রধানমন্ত্রীর এই প্রশ্নের উত্তরে “না” সূচক মাথা বাড়েন রুনু। পরে মুখে বলেন “না”। প্রধানমন্ত্রী বলেন “খুব সাহসী তুমি”। এর মধ্যে চলতে থাকে টিকা প্রয়োগের আগের প্রস্তুতি। টিকা দেওয়া শেষে উপস্থিত সবাই করতালি দিতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন “হয়ে গেল? রুনু তোমাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। তুমি সুস্থ থাক, ভাল থাক। আরো অনেক রোগীর সেবা কর, এই দোয়া করি”। অল্প কিছুক্ষণ বসে থাকার পর চেয়ার থেকে রুনু মুষ্টিবদ্ধ ডান হাত উঁচু করে বলেন, “জয় বাংলা”। এ সময় ভার্চুয়ালী অপর পাশে থাকা প্রধানমন্ত্রীও বলে উঠেন “জয় বাংলা” তখন মুহুর্মুহু করতালি বাজতে থাকে। স্বশরীরে অনুষ্ঠানে থাকতে না পারায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তাঁর সামনে যাঁরা টিকা নিয়েছেন তাঁদেরকে তিনি সাহস যোগান এবং হাসি মুখে কথা বলেন। টিকা গ্রহণকারীদের কোন কষ্টবোধ না হওয়া বা তাঁদের হাসি মাখা মুখ দেখে তিনি নিজেও উৎফুল্ল হন। শুধু তাই নয়, সবার টিকা নেওয়া দেখে তিনি নিজেই টিকা নিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। দ্বিতীয়ত টিকা নেন একজন চিকিৎসক। তৃতীয়ত টিকা নেন আমাদের সকলের পরিচিত মুখ দিনাজপুরের কৃতি সন্তান অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সালাম দিয়ে নিজের পরিচয় তুলে ধরেন। সালামের উত্তর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন “অভিনন্দন জানাচ্ছি, এই নার্ভাস লাগছে না তো নাসিমা? ঠিক আছ”? উত্তরে ডাঃ নাসিমা বলেন, “না”। সব ঠিক আছে।ওপাশ থেকে হেসে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন “মাসেল রিলাক্স থাকতে হবে।” টিকা নেওয়া শেষে ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে ডাঃ নাসিমা বলেন “অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী। আপনি আমাদের সঙ্গে আছেন। “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু”। অপর প্রান্তে থাকা প্রধানমন্ত্রীও বলে উঠেন “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু”। যাক সে দিনের কথা। এখন ভি.আই.পি, সি.আই.পি থেকে রাষ্ট্র ও সমাজের সকলে ভ্যাকসিন নিচ্ছেন এবং জনগণকে সেটা নেওয়ার জন্য মিডিয়ার সামনে উদাক্ত আহবান জানাচ্ছেন। এই টিকাটি ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড -অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যা দুনিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ টিকা। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যত টিকা আবিস্কৃত হয়েছে বিশেষজ্ঞদের মতে সেগুলোর মধ্যে এই টিকার মান প্রমাণিত। সঠিক ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে দেশের সর্বত্র এই টিকা বন্টন গাইড মেনে চলতে হবে। নিকট ভবিষ্যতে আরও বিভিন্নরকম টিকা আসবে। তবে সবখানেই সরকারকে কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে কারণ আমাদের মধ্যে কিছু ভুত আছে। আস্তে আস্তে জনগণের ভয় ও শঙ্কা কেটে যাছে এবং তাঁরা টিকা গ্রহণে উৎসাহী হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ বিশ্বের সাথে তালে তাল মিলিয়ে এই বৈশ্বিক সমস্যা বা আঁধার কেটে গিয়ে অচিরেই আগের মত আলোয় ভরে উঠবে আমাদের এই প্রাণপ্রিয় জন্মভূমি। লেখকঃ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট, ০১৭১৭-৯৭৭৬৩৪, শধরংধৎফরহধলঢ়ঁৎ@ুধযড়ড়.পড়স সদস্য, দিনাজপুর কলামিস্ট এসেসিয়েশন, দিনাজপুর । ০১৮১৮-২৩০৯৭০