রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৪৫

প্রশান্তি আর ক্ষমা পথে পথে

সাঈদা আক্তার
প্রশান্তি আর ক্ষমা পথে পথে

এ-ই কিছু দিন আগেও আমার নিজের বিরুদ্ধে আমার সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল আমি অনেক বেশি অনুভূতিশীল মানুষ। এরকম মানুষদের সুবিধা, অসুবিধা দুটোই অনেক বেশি। এরা বুঝতে পারে বেশি। খুব সহজে এরা আনন্দিত হয়, খুব ছোট ছোট বিষয়ে এরা মুগ্ধ হয়। এদের কাছে জীবন খুব অসাধারণ ভাবে ধরা দেয়। জীবনের সব রঙের আলোর সমাবেশ ঘটে এদের জীবনে। তাতে জীবন আলাদা মাত্রা পায়। তেমনি এরা মানুষের ভিতর টা দেখতে পায়। বুঝতে পারে। তাই তাদের কষ্টের তীব্রতা অনেক বেশি। অনুভব করতে পারে বলে অন্য সব কিছু থেকে এরা সমান অনুভব আশা করে। আদতে তা সম্ভব না।

জীবনে প্রথম মদিনায় নেমে ইমিগ্রেশন শেষে বাইরে এসে দাঁড়ালাম যখন, অদ্ভুত, অন্য রকম, পরম প্রশান্তির একটা বাতাস ছুঁয়ে গেল। ভিতর থেকে বাইরে সবটুকু জুড়িয়ে গেলো। মনে হলো এ শহর সোনার মদিনা। শব্দটা প্রথম শুনেছিলাম শিল্পীর মুখে। হজ্জ বা ওমরাহর করে আসা অনেকের সাথে কথা হয়েছে বহু বার। ২০১৯ শিল্পীর মুখে ওর ওমরাহর কথা শুনতে গিয়ে প্রথম ফোনের এপাশে আমার চোখ ভিজে যাচ্ছিল। প্রথম মনে হয়েছিল আমি যেতে চাই। ওর মুখেই সোনার মদিনা শব্দটা প্রথম শোনা। আর ২০২১ ৯ ই ডিসেম্বর আল্লাহর অশেষ রহমত এ আমি সোনার মদিনার মাটিতে পা দিয়ে বুঝতে পারলাম, আল্লাহ আমাকে অনুভব করার যে আলাদা মন টুকু দিয়েছেন তা আমার জন্য অশেষ নেয়ামত।

মদিনা নবীর আশ্রয়। মদিনা নবীর শান্তির জীবনের প্রহর। এ শহর শান্তির। এ-র বাতাস, মানুষ এ-র সব কিছুতে আপনি আলাদা কিছু খুঁজে পাবেন। মদিনার বাতাস আপনাকে মনে করিয়ে দেবে, এখানে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে। তাঁর পদ ধূলি লেগে আছে এ শহরের আনাচে কানাচে। মক্কা এবং মদিনা দুটো শহরেই আমার মনে হচ্ছিল এ শহরের কোথায় কোন ধূলিকনায় নবী করিম (সাঃ) পায়ের সাথে লেগে থাকা ধূলিকণা পড়ে আছে আজও। যা হয়তো আমার সৌভাগ্য হলো ছুঁয়ে থাকার মূহুর্তের জন্য।

রাতে হোটেলে পৌঁছে, সকালে প্রথম তাহাজ্জুদ এ-র আযান শোনা। আযানের সুর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুর, পড়েছি বহু বার। কিন্তু প্রথম প্রহরে নরম আলোর প্রহরী হয়ে আসা সেই আযানের সুর আমাকে ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিল। প্রতিটি শব্দ আমাকে পৃথিবীর সব কিছু থেকে আলাদা করে শুধু নামাজের দিকে টেনে নিচ্ছিল। হোটেল থেকে বের হয়ে রাস্তা পার হলেই মসজিদে নববী। আমার একটা হাত কাশ্মিরীর হাতে। আমি প্রথম আমার চোখের সামনে স্বপ্নের মতো সত্যি হয়ে যাওয়া ঘটনার মাঝে দাঁড়িয়ে। আমি জানিনা আমার কী হচ্ছিল। আমার নিজের ভিতরের শুদ্ধতা টুকু আয়নার মতো স্বচ্ছতা পেয়ে চোখের কোল বেয়ে ঝরে পড়ছিল। মসজিদে নববী। এটা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওজা। তিনি এখানে ঘুমিয়ে আছেন। আপনি অন্য রকম কিছু অনুভব করবেন। পৃথিবীর সব কিছু মূহুর্তে অর্থহীন হয়ে যাবে। কতোটা বিস্ময় আপনাকে ঘিরে ফেলবে তা বুঝানো যাবে না। প্রথম কোন মসজিদে প্রবেশ। মসজিদের নিজস্ব কিছু আদব - কায়দা আছে। প্রতিটি মসজিদে প্রবেশের পর ২ রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। এখনকার যারা ইমাম তাদের নামাজ পড়ানোর বিষয় টা শিল্পের পর্যায়ে উপনীত। আপনার মনের অতল তলে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। অদ্ভুত সুন্দর চারপাশের পরিবেশ। ভিতরটা শান্ত, ধীর এক জলের তোড়ে ভেসে যাওয়া ভালোবাসায় ভরে উঠবে। আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির পূর্নতা এখানে চোখের সামনে এনে দেন। মসজিদে নববী, অসাধারণ সুন্দর এক সৃষ্টি। ছোট বেলা থেকে কিছু দিন আগ পর্যন্ত কতো হাজার বার টিভির পর্দায় দেখেছি। কিন্তু শুধু বলতে পারি কোন মাধ্যমে একে দেখার জন্য নয়। এ-র সবটুকু আলাপন জমে উঠে নিজের চোখের সামনে দেখার মাঝ দিয়ে। এটা দেখেও আপনি অনুভব করতে পারবেন, আল্লাহর সৃষ্টি কতো নিখুঁত। এখানে আপনি আপনার ভিতরটা দেখতে পারবেন। যে যেমন তাঁর সেই রুপটুকু অনায়াসে ধরা দেয়।

লেখক : সাঈদা আক্তার।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়