প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:১৩
যে দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না
আমাদের দেশে আশির দশকে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দকে বার বার একই মঞ্চে দেখা গেছে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে হটাতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া একই মঞ্চে পাশাপাশি বসেছেন। এমনকি স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত নেতৃবৃন্দও এঁদের পাশে বসার সুযোগ পেয়েছেন। নব্বইর গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের পতনের পর সরকার গঠনের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি হয়ে যায় পরস্পরের প্রতিপক্ষ। তারপর দু শীর্ষ নেতাসহ অন্য নেতৃবৃন্দকে এক মঞ্চে পাশাপাশি দেখার দৃশ্যটা বিরল হয়ে যায়। বিভিন্ন উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়ের রেওয়াজটাও ক্রমশ হ্রাস পেতে পেতে এখন শূন্যের কোটায়। সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে কদাচিৎ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ তো দূরের কথা, অন্য ছোট-বড় নেতাকেও পাশাপাশি দেখা যায় না।
|আরো খবর
ত্রিশ বছর ধরে চলমান চাঁদপুরের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মঞ্চে ক’ বছর আগেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃবৃন্দকে পাশাপাশি দেখা যেতো। এখন সেটিও দেখা যায় না। গত ৬ ডিসেম্বর ২০২১ সোমবার চাঁদপুরের অন্যতম প্রখ্যাত সমাজসেবক আলহাজ¦ মোস্তাক হায়দার চৌধুরীর জানাজায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক অংশগ্রহণ করলেও সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে সঞ্চালক তাঁকে পরিচয় পর্যন্ত করিয়ে দেননি। এ পর্বে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদকে বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্য সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে পরিচয় করিয়ে দেয়াসহ বক্তৃতা দেয়ার জন্যে ডাকা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় উক্ত জানাজায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিগত সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের প্রতি সংগত শিষ্টাচারটুকু প্রদর্শন করা হয়নি। এতে কম-বেশি দুঃখবোধে আক্রান্ত হয়েছেন বিএনপির অন্য নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।
এমন দুঃখবোধের পরদিন ৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার মধ্যাহ্নে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে দেখা গেলো ব্যতিক্রম দৃশ্য। এ দৃশ্যের অবতারণা করে ইউএসএইডের সহায়তাপুষ্ট সংগঠন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। এদের ১৮ তম ব্যাচের রাজনৈতিক ফেলো ইয়াং লিডার যথাক্রমে চাঁদপুর জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বাহার, জাতীয় ছাত্র সমাজ চাঁদপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক শরীফ হোসেন পাটওয়ারী ও চাঁদপুর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ মাসুদ উল আলম রনি যৌথভাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো, চাঁদপুর শহরের চেয়ারম্যানঘাটস্থ ডিসি অফিস ও জেলা আদালতের সম্মুখস্থ সড়কের ওপর একটি ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণ করা। এ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জেলা পর্যায়ের বেশ ক’জন শীর্ষ নেতাকে দেখা গেলেও আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দকে দেখা যায় নি। এমতাবস্থায় সেখানে উপস্থিত চাঁদপুরের সাংবাদিকরা ভেবেছেন, নিশ্চয়ই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আহূত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের এই আধিক্য। কিন্তু ব্যানারের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে সাংবাদিকদের বিভ্রান্তি ঘুচলো।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবে ক্ষুদ্র পরিসরে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আহূত সংবাদ সম্মেলনকে ঘিরে সকল অংশগ্রহণকারীর অভিব্যক্তি ছিলো ইতিবাচক। সাংবাদিকগণসহ অন্য সকল বক্তা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কমন যে কোনো বিষয় বা ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি করতে ভবিষ্যতে আরো উদ্যোগী হবার আহ্বান জানান। আমরাও এ আহ্বানে একাত্ম। আমরা বিশ^াস করি, এমন উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে একদিন সুন্দর রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার তৈরি হবে।