শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪৯

মেঘনার বুকে ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ, হুমকিতে ইলিশের উৎপাদন

চাঁদপুর কন্ঠ রিপোর্ট
মেঘনার বুকে ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ, হুমকিতে ইলিশের উৎপাদন

চাঁদপুর-শরীয়তপুর জেলার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদীর বুকে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেতু কর্তৃপক্ষের দাবি, এরই মধ্যে শেষ হয়েছে ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ। কিন্তু বর্তমানে এ রুটে চলাচলকারী ফেরিগুলো ভুগছে যানবাহন সংকটে। মৎস্য গবেষক, ব্যবসায়ী ও জেলেরা বলছেন, মেঘনায় অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণে বিলুপ্ত হবে ইলিশ, হুমকিতে পড়বে শহর। জেলা প্রশাসক বলছেন, সব দিক বিবেচনা করে সেতু নির্মাণে নতুন করে সমীক্ষার কথা জানাবেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে।

ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুরের মেঘনা নদী। বিশেষ করে মা ইলিশের ডিম ছাড়া থেকে শুরু করে জাটকার বড়ো হওয়া পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভয়াশ্রম এই মেঘনা। সারা দেশে ইলিশের উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখে এই নদী। তবে নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হলে নষ্ট হবে ইলিশের অভয়াশ্রম, বলছেন জেলেরা।

জেলেদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ব্রিজ যদি হয়, তাহলে এ নদীতে মা ইলিশ রক্ষা হবে না, মা ইলিশের ডিম এ নদীতে ছাড়লে টিকবে না।’

আরেকজন বলেন, ‘যদি গভীর পানি না হয়, তাহলে মা ইলিশ আসবে না, ডিমও দেবে না। আর এদিকে চর পড়ে গেলে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে।’

চাঁদপুরের জেলা মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল বারী জমাদার মানিক বলেন, ‘আমরা মনে করি এ চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুটে যে ব্রিজটা করার পরিকল্পনা করছে সরকার, সেটা যদি গতানুগতিক পদ্ধতিতে করা হয়, তাহলে আমাদের চাঁদপুরের এ মেঘনা নদী আর থাকবে না।’

ইলিশ উৎপাদনের পরিবেশ ঠিক রেখে সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন ইলিশ গবেষকরা।

ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘ইলিশ যেহেতু একটি পরিভ্রমণশীল স্বভাবের মাছ, সেহেতু তাদের চলাচলের পথে যদি কোনো ব্রিজ বা অনুরূপ কোনো স্থাপনা নির্মিত হয়, অর্থাৎ সামান্যতম বাধা পেলেও তাদের জীবন চলাচল এবং উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়তেই পারে।’

এদিকে চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌ-রূটে চলাচল করে ৫টি ফেরি। বর্তমানে যানবাহন সংকটে প্রতিদিন চলাচল করছে ২টি ফেরি। এক সময় এ ঘাটে যানবাহন পারাপারের চাপ থাকলেও পদ্মা সেতু নির্মাণের পর কমেছে চাপ। তাই মেঘনা নদীর ওপর চাঁদপুর-শরীয়তপুরকে সংযুক্ত করায় সেতু নির্মাণ তেমন লাভ হবে না বলে দাবি স্থানীয়দের।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) চাঁদপুরের বাণিজ্য সহ-মহাব্যবস্থাপক মো. ফয়সাল আলম চৌধুরী বলেন, ‘শরীয়তপুর রুটে এখন ৫টি ফেরি চলাচল করছে। এর মধ্যে একটি বড়ো এবং একটি ছোট ফেরি। আমাদের এখন গাড়ি স্বল্পতার কারণে প্রতিদিন দুটি করে ফেরি রোস্টার করে চলাচল করছে।’

কর্তৃপক্ষে বলছে, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে উঠে এসেছে সেতুটি যেমন পরিবেশ বান্ধব তেমনি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে কম খরচে সেতুটি নির্মিত হবে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক মো. ভিখারুদ্দৌলা চৌধুরী বলেন, ‘এটার যে ফিন্যান্সিয়াল এবং ইকোনমিক্যাল প্রতিবেদন ওনারা দিয়েছেন, এর দুটাই খুব ভায়াবল, লাভজনক একটি প্রজেক্ট। এর পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের যে যোগাযোগ, এটাকে ঢাকা শহরকে হ্যাম্পার না করে, এর যোগাযোগটা স্থাপন হবে।’

তবে সেতু নির্মাণের সময় নদীর দিক পরিবর্তন হতে পারে বলে আশঙ্কা পরিবেশ বিজ্ঞানের এক শিক্ষকের। আর নতুন করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানালেন জেলা প্রশাসক।

চাঁদপুর সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুলতানা তৌফিকা আক্তার বলেন, ‘যে কোনো ব্রিজ করার ক্ষেত্রেই যা হয়, শুরুতেই নদীর দু অংশে কিছু নদী শাসন করতে হয়। এতে নদীর স্বাভাবিক যে প্রবাহটা ছিল, সেটা অনেকটাই সংকুচিত হয়ে আসবে। এতে প্রবাহটা পরিবর্তন হবে।’

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘মেঘনা নদীতে কী পরিমাণ শাসন হবে, মানুষ কতোটা উপকৃত হবে বা পরিবেশের কতোটা ক্ষতি হবে, নৌ-পথটা কতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বা ইলিশের কী পরিমাণে ক্ষতি হবে—এটা নিয়ে আরও ভালো ফিজিবিলিটি স্টাডি হওয়া উচিত।’

অভয়াশ্রম ধ্বংস করে ব্রিজ নির্মাণ হলে ইলিশের উৎপাদন হ্রাস পাবে সারা দেশে। তাই সেতু নির্মাণের আগে পুনরায় সমীক্ষার দাবি সচেতন মহলের। সূত্র : এখন টিভি।

ডিসিকে /এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়