বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শ্রীনগর কাঁপছে
  •   হাজীগঞ্জে সাদপন্থীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি
  •   অবক্ষয়ের কারণে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে চলছে
  •   মুন্সিগঞ্জে মানবতার স্পর্শ
  •   স্বপ্নের বই হাতে পেয়ে আনন্দে ফেটে পড়ল চাঁদপুরের শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:২৫

মাওলানা ফারুকীকে মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে খুন করে জেএমবি

অনলাইন ডেস্ক
মাওলানা ফারুকীকে মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে খুন করে জেএমবি

জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক মাওলানা শায়খ নুরুল ইসলাম ফারুকীকে ইসলামি মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে খুন করে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সদস্যরা। আর এই খুনের নেতৃত্বে ছিলেন জেএমবির এক সময়কার অপারেশন প্রধান জামাই ফারুক। ইসলামি বক্তা ফারুকী হত্যা মামলায় আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) এ কথা উল্লেখ করা হয়।

গত ৫ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার কেএম আবুল কাশেম এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন-হাদিসুর রহমান সাগর, আবদুল্লাহ আল তাসনিম নাহিদ, রফিকুল ইসলাম ফারদিন, আবু রায়হান মাহমুদ আবদুল হাদী, মাহমুদ ইবনে বাশার ও রতন চৌধুরী ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রকিবুল ইসলাম রিয়াজ। এদের মধ্যে সাগর, নাহিদ ও রতন এখন কারাগারে এবং তিনজন পলাতক। এরা সবাই জেএমবির সক্রিয় সদস্য ও বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকারী নেতা।

জামাই ফারুকের নির্দেশ ও প্রত্যক্ষ মদদে মাওলানা ফারুকীকে নির্মমভাবে খুন করা হলেও জামাই ফারুককে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এই খুনে অংশগ্রহণ করা আরও চারজন ঢাকা বিভাগের জেএমবি প্রধানের দায়িত্ব পালন করা নাঈম, জেএমবির সদস্য ইমন, হাফেজ কবির ও আশফাক ই আজিমকেও অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, জামাই ফারুকসহ এই পাঁচজনের খুনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও তাদের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের আপাতত অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হলো। ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগপত্র দেয়া হবে।

এদিকে জঙ্গি তৎপরতায় সংশ্লিষ্টতা থাকা ও ফারুকী হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে খোরশেদ আলম ওরফে রুবেলসহ ১৭জনকে আটক করা হয়। তবে তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাদেরকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, খুনিরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন-জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তারা বিশ্বাস করেছিল যে, নুরুল ইসলাম ফারুকী গণমাধ্যমে ইসলাম, নবী, রসুল ও আল্লাহ সম্পর্কে নতুন নতুন কথা বলেছিলেন, যা সরাসরি ইসলামে নিষিদ্ধ। এই কারণে জেএমবি মাওলানা ফারুকীকে খুনের পরিকল্পনা করে। জেএমবির অপারেশন হেড হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জামাই ফারুক তার সহযোগীদের খুনের নির্দেশ দেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ফারুকীকে খুনের আগে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের একটি বাসায় এবং আশুলিয়ার কামারপাড়া ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজের পাশে একটি বাড়িতে খুনিদের নিয়ে সভা হয়। ওই সভায় জামাই ফারুক ছাড়াও আসামি তাসনিম নেতৃত্ব দেন।

২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের বাড়িতে ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। পরদিন তাঁর ছেলে ফয়সাল ফারুকী বাদী হয়ে আট থেকে নয়জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

প্রায় ৬০ বছর বয়সী ফারুকী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। তিনি ফারুকী ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি হজ্ব এজেন্সির মালিক ছিলেন এবং দুটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ৯টি ইসলামিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন।

সেদিন যা ঘটেছিল

মামলার বর্ণনা থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর কয়েকজন ব্যক্তি ফারুকীর বাসার কলিং বেল চেপে ভেতরে প্রবেশ করে। খুনিরা ওই বাসায় থাকা ফারুকীর আত্মীয় মারুফ হাসান ও ফারুকীর মা, নানী, গৃহকর্মী ও অন্যদের হাত-মুখ বেঁধে ফেলে। যারা ঢুকেছিল তাদের প্রত্যেকের হাতে অস্ত্রসহ দা, ছুরি, চাপাতি ছিল। তারা এ সময় ফারুকীর হাত-পা-মুখ বেঁধে গলা কেটে ফেলে।

ঘটনার পর গ্রেপ্তার করা হয় জেএমবি সদস্য হাদীসুর রহমান সাগর ও আব্দুল্লাহ তাসনিমকে। তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ফারুকীকে হত্যার ঘটনা বর্ণনা করেন। তারাই বলেন, জেএমবির তৎকালীন অপারেশন চীফ জামাই ফারুকের নির্দেশে ফারুকীকে খুন করা হয়েছে। জেএমবির সঙ্গে ইসলামি মতাদর্শে পার্থক্য হওয়ায় এই খুনের পরিকল্পনা হয় এবং পরিকল্পনা সফল করা হয়।

উল্লেখ্য, জামাই ফারুক ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে জেএমবির তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত। ওই সময়ে তাকে ধরিয়ে দিতে ৩০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করে বাংলাদেশ পুলিশ। তবে পরে জানা যায়, জামাই ফারুক ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিলো। সেখানে সে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়