প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১৪:৫৮
এর নামই বাংলাদেশ ফেনীতে হিন্দু পরিবার আশ্রয় নিয়েছে মসজিদে
মহান স্রষ্টার সৃষ্টিকে বুঝার জন্য অনেক জ্ঞান যে অর্জন করতে হবে, খুব বেশি পড়াশোনা যে করতে হবে তেমনটি নয়। পবিত্র কোরআন মাজিদের প্রথম সূরা সূরাতুল ফাতিহা কার না জানা আছে! এই সূরার শুরুতেই আছে- "আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন"। এখানে মহান স্রষ্টাকে রাব্বুল আলামিন বলা হয়েছে। আর রাব্বুল আলামিনের অর্থও আমরা সকলে জানি- সমগ্র জাহানের প্রতিপালক। সৃষ্টি জগতকে যিনি লালন-পালন করেন তিনিই মহান রব, তিনিই মহান আল্লাহ। আমরা এও জানি সৃষ্টি জগতের মধ্যে সর্বোত্তম সৃষ্টি হচ্ছে মানবজাতি। আলো-আঁধার, রোদ-বৃষ্টি, বাতাস, ছায়া সব কিছুই মহান স্রষ্টার অনুগ্রহ। এসব অনুগ্রহ মানবজাতি তো বটেই, সকল সৃষ্টি ভোগ করে থাকে। এমন না যে আমরা আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামের অনুসারী, তাই আমরাই তাঁর সকল অনুগ্রহ বা দয়া ভোগ করবো, অন্য জাতি বা ধর্মের অনুসারীরা নয়। বরং তিনি রাব্বুল আলামিন, সমস্ত সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক। মানবজাতি ছাড়াও অন্য যত সৃষ্টি আছে সকল কিছুই তিনি লালন-পালন করেন। এটাই আমাদের ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিশ্বাস।
|আরো খবর
ইসলাম ধর্মের আরেকটি মৌলিক শিক্ষা হলো- জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে যথাযথ সম্মান মর্যাদা দিতে হবে, তার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কাউকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এক আদমের (আলাইহিসসালাম) সন্তান হিসেবে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের কাছে নিরাপদ থাকবে, একজন বিপদে পড়লে আরেকজনের কাছে আশ্রয় খুঁজে পাবে। এটাই হচ্ছে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, প্রকৃত মুসলমানের আদর্শ।
ইসলাম এবং মুসলিম জাতি যে অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহানুভূতিশীল তা ইসলামের প্রথম যুগ তথা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এঁর সময় থেকেই প্রমাণিত এবং প্রতিষ্ঠিত। ইসলাম যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল তা জগত জুড়ে সমাদৃত। ইসলাম যে কতটা উদার তার দৃষ্টান্ত রয়েছে ভুরি ভুরি। তারপরও ফেনীর একটি ঘটনা আমাদেরকে আরেকবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো ইসলামের আদর্শ কতো মহান!
ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় সব কিছু লণ্ডভণ্ড। সেখানে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে চরমভাবে। শুধু মানুষই নয়, পশু-পাখি, চতুষ্পদ জন্তুও আশ্রয়হীন। পানির তোড়ে ভেসে যেতে দেখা গেছে। মানুষ প্রাণ বাঁচাতে একটু আশ্রয়ের জায়গা খুঁজছে। কি মসজিদ, কি মাদ্রাসা! যেখানেই একটু শুঁকনো জায়গা পেয়েছে সেখানেই গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তেমনি এক দৃশ্য দেখা গেলো- ফেনীতে একটি মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে কয়েকটি হিন্দু পরিবার। এমন দৃশ্যের ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। তবে এমন দৃশ্যে আমি খুব অবাক হওয়ার কিছু দেখছি না। কারণ এটাই তো ইসলামের সৌন্দর্য, প্রকৃত আদর্শ। তারপরও এমন দৃশ্য কিছু অন্ধ লোককে এবং ইসলাম বিদ্বেষীদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়- দেখো ইসলামের আদর্শ কতো মহান। ইসলাম কতোই না সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়। মুসলমানদের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ পবিত্র স্থান হচ্ছে মসজিদ। আর সেই পবিত্র স্থানেই অন্য ধর্মের মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে, বুকে টেনে নিয়েছে। ইসলাম যে কতটা উদার! এর চেয়ে আর কী দৃষ্টান্ত হতে পারে! এমন দৃশ্য দেখে আমি নিজেকে একজন মুসলমান, একজন বাঙালি পরিচয়ে গর্বিত হই। হ্যাঁ এটাই তো আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। মহান স্রষ্টার কৃপায় এমন মহান ধর্মে এবং ভূখণ্ডে জন্মেছি। তাই তো আমি চিৎকার করে বলবো- আমি মুসলমান, আমি বাঙালি। আমি গর্বিত জাতি।