শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:৩৬

২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন : কে যাচ্ছেন বঙ্গভবনে?

অনলাইন ডেস্ক
২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন : কে যাচ্ছেন বঙ্গভবনে?

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গত দুই মেয়াদে তিনি দেশের শীর্ষ পদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী ২৪ এপ্রিল মেয়াদ শেষ হচ্ছে সফল এ রাষ্ট্রনায়কের। এরই মধ্যে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি, কার জন্য অপেক্ষা করছে বঙ্গভবন?

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই নির্বাচনের মাধ্যমে চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতির নাম। সংসদে যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ, সেহেতু আওয়ামী লীগের প্রার্থীই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন— মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দেশের সিনিয়র আইনজীবীরা।

রাষ্ট্রপতির নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, তার (রাষ্ট্রপতি) মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই স্পিকারের সঙ্গে পরামর্শ করে শিডিউল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। তারপর তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী আসবে। আসার পর ভোট হবে। কিন্তু এখন তো এগুলোর কিছুই দরকার হবে বলে মনে হয় না। কারণ, আগেও সেটার দরকার হয়নি। পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা যখন থাকে তখন বাইরে থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে দল ক্ষমতায় আছে, তারা যাকে বলবে তিনিই রাষ্ট্রপতি হয়ে যাবেন। অন্য চিন্তা-ভাবনার কোনো সুযোগ নেই, নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করারও দরকার নেই।’

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, তিনবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে কেউ থাকতে পারবেন না। সর্বোচ্চ দুবার থাকতে পারবেন দেশের শীর্ষ পদে। বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অর্থাৎ আগামী ২৩ এপ্রিলের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। সেই হিসাবে খুব বেশি সময় নেই রাষ্ট্রপতিপ্রার্থী নির্বাচন করার। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকারকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, তিনবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে কেউ থাকতে পারবেন না। সর্বোচ্চ দুবার থাকতে পারবেন দেশের শীর্ষ পদে। বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অর্থাৎ আগামী ২৩ এপ্রিলের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। সেই হিসাবে খুব বেশি সময় নেই রাষ্ট্রপতিপ্রার্থী নির্বাচন করার। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকারকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি— এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। রাষ্ট্রের শীর্ষ পদটির জন্য অনেকের নামও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কেউ এখনও মুখ খুলছেন না। তবে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে জোর আলোচনা চলছে।

তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রমুখের নাম।

পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে আপনার নাম আসছে— এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ওই পদে বসার যোগ্যতা আমার নেই। দলে সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন। তিনি ভাবছেন। খোঁজখবর নিচ্ছেন, তার মাথায় কেউ থাকতেও পারেন।’

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আবদুল হামিদকে তৃতীয় মেয়াদের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করতে হলে সংবিধান পাল্টাতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংবিধান পাল্টানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।’ এখন তো এগুলোর কিছুই দরকার হবে বলে মনে হয় না। কারণ, আগেও সেটার দরকার হয়নি। পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা যখন থাকে তখন বাইরে থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে দল ক্ষমতায় আছে, তারা যাকে বলবে তিনিই রাষ্ট্রপতি হয়ে যাবেন। অন্য চিন্তা-ভাবনার কোনো সুযোগ নেই, নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করারও দরকার নেই। দলীয় সূত্র মতে, আগামী ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বিএনপি অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় আনতে পারবেন— এমন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাছাই করতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে, দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কোনো ‘রাজনৈতিক’ ব্যক্তিত্বকে এ পদে দেখতে চাচ্ছেন।

সূত্র মতে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং এ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করায় শূন্য হওয়া ছয়টি আসনের উপনির্বাচন হবে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। সেই নির্বাচন শেষে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন। এরপরই নির্বাচন নিয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন নির্বাচন-কর্তাব্যক্তিরা। বৈঠকে তফসিল ও ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ হবে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এ বৈঠক হতে পারে।

সংবিধানে যা আছে

সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- (১) রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে এ পদ শূন্য হলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধান মতে, ‘একাদিক্রমে হউক না হউক- দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকিবেন না। সংবিধানের বিধানাবলীসাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসরের মেয়াদে তাঁহার পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁহার উত্তরাধিকারী-কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।’

পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী (বাঁ থেকে), আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক / ঢাকা পোস্ট

‘স্পিকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন। রাষ্ট্রপতি তাঁহার কার্যভারকালে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন না এবং কোনো সংসদ-সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হইলে রাষ্ট্রপতিরূপে তাঁহার কার্যভার গ্রহণের দিনে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে।’

পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রমুখের নাম

তবে, দেশের এ গুরুত্বপূর্ণ পদে চাইলেই সবাই নির্বাচন করতে পারবেন না। সংবিধান মতে, ‘কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি-পঁয়ত্রিশ বৎসরের কম বয়স্ক হন; অথবা সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য না হন; অথবা কখনও এই সংবিধানের অধীন অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ হইতে অপসারিত হইয়া থাকেন।’

সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয় ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি। ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ থাকলেও একক প্রার্থী হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত হন মো. আবদুল হামিদ।

আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২৪ এপ্রিলের মধ্যেই ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নতুন কারও শপথ নেওয়ার কথা।

সাবেক রাষ্ট্রপতিরা, কে কী করতেন

স্বাধীনতার ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ১৭জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের আটজন, বিএনপির পাঁচজন, নির্দলীয় তিনজন এবং বাকশালের একজন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তবে, একই মেয়াদে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির (অস্থায়ী) দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এ কারণে তার হয়ে দেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন নজরুল ইসলাম।

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির পদটি ফের অলংকৃত করেন শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময়ে তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) থেকে প্রার্থী হন।

আবু সাঈদ চৌধুরী, পেশায় ছিলেন একজন বিচারপতি। এছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার ছিলেন। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৪৬ দিন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আবু সাঈদ চৌধুরীর মেয়াদকাল শেষ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান মোহাম্মদ মোহাম্মদউল্লাহ। তিনি একাধারে দুবার অর্থাৎ ১৯৭৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৪ সালের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এবং ১৯৭৪ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এক বছর ৩২ দিন দায়িত্বপালন করেন। তিনিও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে রাষ্ট্রপতির পদে আসেন। আইনজীবীর পাশাপাশি রাজনীতিবিদও ছিলেন তিনি।

খন্দকার মোশতাক আহমাদ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত অঘোষিতভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মোট ৮৩ দিন দায়িত্বে থাকেন। এরপর বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতি হন। তিনি প্রখ্যাত আইনবিদ ও প্রথম প্রধান বিচারপতি ছিলেন। বাংলাদেশের ষষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর থেকে ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। স্বাধীনতার পর থেকে ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ১৭জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের আটজন, বিএনপির পাঁচজন, নির্দলীয় তিনজন এবং বাকশালের ছিলেন একজন

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সরিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। চার বছর বাংলাদেশ শাসন করার পর ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে নির্মমভাবে নিহত হন তিনি।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর প্রথমে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন আব্দুস সাত্তার। ১৯৮১ সালের ৩০ মে থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত, পরবর্তীতে ১৯৮১ সালের ২০ নভেম্বর থেকে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮২ সালে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তার জায়গায় সামরিক আইন জারির মাধ্যমে প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে চলে যায়। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত পদটি খালি ছিল। এ সময়ে সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও ‘ডি ফ্যাক্টো’ (অঘোষিত) রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে আসেন আবুল ফজল মোহাম্মদ আহসানউদ্দিন চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের ১১তম রাষ্ট্রপতি। ১৯৮২ সালের ২৭ মার্চ থেকে ১৯৮৩ সালের ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছর ২৫৮ দিন ছিল তার মেয়াদকাল। হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ১৯৭৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান ও রাজনীতিবিদ, যিনি ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টি থেকে মনোনীত হয়ে ছয় বছর ৩৬০ দিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশ পরিচালনা করেন।

বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ দুবার দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রপতি। তিনি পেশায় আইনবিদ ও ষষ্ঠ প্রধান বিচারপতি ছিলেন। প্রথমে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতি হন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। প্রথম দফায় ৩০৮ দিন এবং দ্বিতীয় দফায় পাঁচ বছর ৩৬ দিন এ পদে ছিলেন তিনি।

আবদুর রহমান বিশ্বাস। পেশায় তিনি স্থানীয় সমবায় ব্যাংকের সভাপতি, শিক্ষক ও আইনজীবী ছিলেন। তবে, মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন। ১৯৯১ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ১৯৯৬ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে মনোনীত প্রার্থী ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি হন অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ২০০১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্ষমতায় আসার পর তিনি প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন। পরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ২০০২ সালের ২১ জুন পর্যন্ত ২১৯ দিন দায়িত্ব পালন করেন। তিনিও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন।

এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পর রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে আসেন ব্যারিস্টার জমিরুদ্দিন সরকার। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রথম সারির প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা। পেশায় ছিলেন আইনজীবী। ২০০২ সালের ২১ জুন থেকে ২০০২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনোনীত হয়ে ৭৭ দিন দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ২০০২ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন। ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি এ পদ ত্যাগ করেন এবং পরের দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করেন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।

২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমান বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি ২০১৩ সালের ২০ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। এরপর ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। তিনি ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত টানা দুবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী ২৩ এপ্রিল তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়