প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
আজ থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরা ও বেচাকেনা নিষিদ্ধ
সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও গতকাল বৃহস্পতিবার ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয় ২২ দিনের জন্য শেষ হয়েছে। আজ ৭ অক্টোবর শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ২২ দিনের অভিযান। ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে তথা মা ইলিশ যেনো নিরাপদে নির্বিঘেœ ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য ৭ অক্টোবর থেকে ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময় ইলিশ আহরণে বিরত থাকা জেলেদের ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। এ ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন অমান্যকারী কমপক্ষে ১ থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
|আরো খবর
ইলিশ সম্পদ রক্ষায় অতীতের মতো এবারও অসাধু জেলে ও ব্যক্তিদের ছাড় দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। ইলিশ সম্পদ ধ্বংসকারী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দিনে অভিযানের পাশাপাশি রাতেও অভিযান জোরদার চলবে বলে টাস্কফোর্সের প্রস্তুতিমূলক সভায় জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ইলিশের নিরাপদ প্রজননের মাধ্যমে ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে যা যা করা দরকার তা করতে হবে। জেলা-উপজেলা মৎস্য বিভাগ জেলে, আড়তদারসহ ইলিশ-সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জনসচেতনতামূলক সভা করেছে।
নৌ পুলিশের পক্ষ থেকেও র্যালি ও জেলে সমাবেশ করে জেলেদের সচেতন করা হয়। প্রায় ১৫শ’ নৌ পুলিশ নদীতে মোতায়েন করে টহল ব্যবস্থা জোরদার রাখবে বলে নৌ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চাঁদপুর সফরে এসে আভাস দিয়েছেন। পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও জেলা পুলিশের তৎপরতাও থাকবে।
সরজমিনে গতকাল লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সকালে কয়েকশ’ মণ ইলিশ বিভিন্ন আড়তে এসেছে। মুহূর্তের মধ্যে সেই মাছ বিক্রি হয়ে গেছে। অন্যান্য বছর এ সময় ঘাটে ভরপুর মাছ থাকতো। সাধারণ মানুষ ৪/৫শ’ টাকা কেজি দরে ইলিশ কিনতে পেরেছিলো। এ বছর চাঁদপুর ইলিশ বন্দরে ইলিশ এসেছে খুবই কম, দামও অনেক বেশি।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি মানিক জমাদার জানিয়েছেন, অভিযান শুরুর আগের দিন বৃহস্পতিবার চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে ইলিশের তেমন চাপ ছিলো না। নিষেধাজ্ঞার কথা মাথায় রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আড়তের সব ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হয়ে গেছে। অভিযানের সময় আমাদের ঘাটে ইলিশের কোনো চিহ্ন থাকবে না।
তিনি মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের সফলতা কামনা করেন এবং এই ২২ দিন প্রশাসনিক কাজে সমিতির পক্ষে সহযোগিতা থাকবে বলে জানান।
হরিণা ঘাটের আড়তদার কালু (৫৫) জানান, মা ইলিশের অভিযানকে সামনে রেখে গত ১৫-২০ দিন স্থানীয় জেলেরা কিছু মাছ পেয়েছে। এতে লোকালে মাছ না পাবার দুঃখণ্ডহতাশা কিছুটা কেটেছে। জেলেরা মাছের দামও ভালো পেয়ে খুশি।
অধিকাংশ জেলে তাদের জাল নৌকা গুটিয়ে ডাঙ্গায় তুলে ফেলেছে। এবার ইলিশের সবচেয়ে বড় মৌসুমের এ সময়ের শেষ প্রান্তে এসে দেখা যাচ্ছে, দাম অপেক্ষাকৃত বেশি। মৎস্যজীবী, বিভিন্ন প্রান্তের আড়তদার, ঢাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। তারা বলছেন, ইলিশের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ আছে। এর মধ্যে একটি হলো কম বৃষ্টি হওয়া। আর এজন্যে ইলিশ পাওয়া গেছে কম। আবার ইলিশ মৌসুমের বড় সময়ে সমুদ্র উত্তাল থাকায় মাছ ধরতে বাধা পাওয়ার কথা বলেছেন মৎস্যজীবীরা। ট্রলার ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, ইলিশ মৌসুমে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ইলিশ আহরণের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। আবার এর পরিবহনের খরচেও প্রভাব পড়েছে। তাই দামও বেড়েছে।