প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
বিশ্বস্ত দুই কর্মচারীর হাতে খুন হলেন মতলবের স্বর্ণ ব্যবসায়ী অমর সরকার
আইপিএল-বিপিএলসহ বিভিন্ন জুয়া খেলার ধার-দেনা মিটাতেই খুন
আইপিএল ও বিপিএল খেলায় বাজিসহ বিভিন্ন জুয়া খেলায় প্রায় ৩/৪ লাখ টাকার ধার-দেনা মিটাতেই বিশ^স্ত দুই কর্মচারীর হাতেই খুন হন মতলবের স্বর্ণ ব্যবসায়ী অমর ভক্ত প্রকাশ অমর সরকার। গতকাল ২৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার চাঁদপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার)।
পুলিশ সুপার জানান, অমর সরকার একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তার পিতা রবি ভক্ত। তার বাড়ি মতলব দক্ষিণের সারপাড় গ্রামে। মতলবের নারায়ণপুর বাজারে মাধবী শিল্পালয় নামে একটি জুয়েলারি দোকানের মালিক অমর। তিনি প্রায় প্রতিদিন ব্যবসার কাজ শেষ করে রাত ৯টা হতে ১০টার মধ্যে বাড়ি ফেরেন।
২১ ফেব্রুয়ারি অমর সরকার প্রতিদিনের ন্যায় ব্যবসায়িক কাজে মতলব যাওয়ায় বাড়ি ফিরতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। অমর তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাধবী শিল্পালয় বন্ধ করে নগদ ১৮,২০০ টাকা ও প্রায় ৪০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার (যার বর্তমান মূল্য ৩০ লাখ টাকা) নিয়ে রাত সাড়ে ১২টার সময় তার দোকানের বর্তমান কর্মচারী জয় বিশ^াস প্রকাশ অনিক (২২)সহ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন।
অমর সরকার বাড়ির সামনে পৌঁছামাত্র তার দোকানের পূর্বের কর্মচারী হৃদয় সূত্রধর (২২) এবং বর্তমান কর্মচারী অনিক তাকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরে গলা কেটে হত্যা করে এবং স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। হৃদয় সূত্রধর স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা নিয়ে অন্যত্র চলে যায় এবং বর্তমান কর্মচারী অনিক অজ্ঞান হওয়ার অভিনয় করে পড়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর অর্থাৎ রাত আড়াইটার সময় অনিক অভিনয়কৃত অজ্ঞানাবস্থা থেকে উঠে অমর সরকারের বাসায় এসে তার পিতা রবি ভক্তের কাছে অমরের গলা কাটা লাশের কথা জানায়। কে বা কারা অমরের গলা কেটেছে তা সে দেখতে পায়নি বলে জানায়।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) সুদীপ্ত রায়, সহকারী পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল), অফিসার ইনচার্জ মতলব দক্ষিণ থানা ও মামলার তদন্তকারী অফিসার ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্যে মর্গে প্রেরণ করেন।
এদিকে পুলিশ ঘটনার বিবরণী জয় বিশ^াস প্রকাশ অনিকের মুখে শুনতে পেয়ে গভীর ও নিবিড়ভাবে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে খুনের সাথে জয় বিশ^াসের সম্পৃক্ততা বুঝতে পেরে তাকে আটক করে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে জয় বিশ^াসকে তাৎক্ষণিক আদালতে সোপর্দ করা হয়। জয় বিশ^াস আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি প্রদান করে এবং এই খুনের সাথে সম্পৃক্ত মাধবী শিল্পালয়ের পূর্বের কর্মচারী হৃদয় সূত্রধরের কথা জানায়। আদালত অনিককে ওইদিনই আদালতে প্রেরণ করে। জয় বিশ^াসের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানার শুভরিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম অর্জুন বিশ^াস।
এদিকে জয় বিশ^াস প্রকাশ অনিকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ পূর্বের কর্মচারী হৃদয় সূত্রধরকে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মতলব থেকে আটক করে। হৃদয় সূত্রধরের কথামতে, পুলিশ অমর সরকারের বাড়ির প্রায় ২ কিলোমিটার দূর থেকে মাটির নিচে লুক্কায়িত ৪০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ১৮,২০০ টাকা উদ্ধার করে। আর মতলব বাজারের ডাস্টবিন থেকে রক্তমাখা হ্যান্ডগ্লাভস্ ও ২টি কাপড়ের হ্যান্ডব্যাগ উদ্ধার করে। এছাড়া ওই রাতেই পুকুরে ফেলে দেয়া হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ধারালো ছুরি ডুবুরিদের সহায়তায় উদ্ধার করে।
একান্ত আলাপচারিতায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) সুদীপ্ত রায় থেকে জানা যায়, ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে নিজ বাড়ির উঠোনে যখন স্বর্ণ ব্যবসায়ী খুন হয়, সেখানে আগ থেকেই লুক্কায়িত ছিলো হৃদয় সূত্রধর। মূলত খুনের পূর্ব মুহূর্ত থেকে খুন হওয়া পর্যন্ত দুজনের যোগাযোগ ছিলো। যখন অমর সরকার দোকান থেকে বের হন এবং মতলব বাজারের দিকে যান তখন থেকেই অনিকের সাথে হৃদয়ের কথোপকথন হয়।
তিনি বলেন, অনিক যখন অমর সরকারের কথা বাসায় এসে জানায়, এর কিছুক্ষণ পরই আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। অনিকের কাছ থেকে পূর্বেকার ঘটনা শোনাকালীন আমরা তার হাতের কবজিতে রক্ত দেখতে পাই। তখন থেকে আমাদের তার প্রতি সন্দেহ হয়। আমরা ওই রক্তের কথা জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, খুন হওয়া অমর সরকারকে ধরার জন্যে গেলে তার গা থেকে এ রক্ত লাগে। তারপর আমরা অনিককে ওইদিনকার পুরো ঘটনা এবং সে কোথায় কী করেছে জানতে চাই। তখন অনিক পুরো দিনের ও রাতের ঘটনা বলতে থাকে। যখন আমরা কিছুক্ষণ পর আবার তাকে পূর্বেকার ঘটনা বলতে বলি, তখন ঐ কথার সাথে পূর্বেকার কথার কোনো মিল না পেলে তাকে সরাসরি আটক করি। এছাড়া রাতের বেলা অনিক কোথায় কোথায় গিয়েছে, কার কার সাথে মোবাইলে কথা বলেছে সেগুলো ট্র্যাক করে যা পাই, তা তার দেয়া কথার সাথে মিলছিলো না। পরবর্তীতে আমরা স্মরণ করিয়ে দিই, সে কোথায় কী কী করেছে এবং তাকে আটক করি।
তিনি জানান, মূলত অনিকেরই ছিলো মূল মাস্টারপ্লান। অমর সরকার মূলত খুন হন রাত সাড়ে বারোটায়। খুনি অনিক অমর সরকারের বাসায় এসে খুনের ঘটনা জানায় রাত আড়াইটায়। এই দু ঘণ্টায় অনিক ও হৃদয় ৪০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা অন্যত্র সরিয়ে রাখে। পরবর্তীতে হৃদয় অন্যত্র চলে যায় এবং অনিক অমর সরকারের বাসায় এসে বিষয়টি জানায়।
উল্লেখ্য, ২১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে এ হত্যাকা- ঘটে।