প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
ইলিশের নতুন প্রজনন এলাকা শনাক্ত
পূর্বের শনাক্তকৃত ৭০০০ বর্গ কি.মি.-এর সাথে যুক্ত হচ্ছে ৩৪৮ বর্গ কি.মি.
বলেশ্বর নদী ও মোহনা অঞ্চলে ইলিশের নতুন প্রজনন ক্ষেত্রের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বলেশ্বর নদীতে প্রায় ৫০ কি.মি. দৈর্ঘ্য এবং ৩৪৮ বর্গ কি.মি. বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে প্রজনন ক্ষেত্রের প্রস্তাব করা হয়েছে।
|আরো খবর
উল্লেখ্য, মায়ানী-মিরসরাই, পশ্চিম সৈয়দ আওলিয়া পয়েন্ট-তজুমুদ্দিন, গ-ামারা-বাঁশখালী এবং লতাচাপালি কলাপাড়া এলাকার মোহনা অঞ্চলে ইতোপূর্বে ৪টি প্রজনন এলাকা শনাক্ত করা হয়েছে। পূর্বে শনাক্তকৃত প্রজনন এলাকাসমূহের আয়তন প্রায় ৭০০০ বর্গ কি.মি.। প্রস্তাবিত অঞ্চলকে প্রজনন এলাকা হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে দেশে ইলিশের ৫ম প্রজনন এলাকা চিহ্নিত হবে এবং সর্বমোট ৭৩৪৮ বর্গ কি.মি. এলাকায় ইলিশ অবাধ প্রজননের সুযোগ পাবে।
প্রস্তাবিত প্রজনন এলাকা হচ্ছে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার বগী বন্দর থেকে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার পক্ষীর চর সংলগ্ন পয়েন্ট পর্যন্ত এবং পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা থেকে পটুয়াখালী (বরগুনা জেলার সীমানা সংলগ্ন) জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালী ইউনিয়নের লেবুর বাগান পয়েন্ট পর্যন্ত। গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম ব্যবহার করে এই প্রজনন এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বলেশ্বর নদীর মোহনা অঞ্চল ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদীটির মোহনা অঞ্চল হাব (কেন্দ্রস্থল) আকারে বিস্তৃত। এই হাব দিয়ে বলেশ্বর ছাড়াও বিষখালী, পায়রা, আন্ধারমানিক ও লতাচাপালী নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ বঙ্গোপসাগর থেকে নদীর উজানে প্রবেশ করে। এই নদীর পূর্ব অংশে সুন্দরবনের নদী ও খালসমূহ (ভোলা নদী, বেতমোরি গাঙ, সুপতি খাল, দুধমুখী খাল ও ছোট কটকা খাল) সংযুক্ত রয়েছে। বলেশ্বর নদী হয়ে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ এসব খাল ও নদীতে প্রবেশ করে।
ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-২০২১ মেয়াদে বলেশ্বর নদীতে ইলিশ মাছের প্রজনন ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটের ইলিশ বিজ্ঞানীরা গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। গবেষণায় জাটকার প্রাচুর্যতা, পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ, প্লাংকটন ও গাট কনন্টেট, মাছের শ্রেণী-দৈর্ঘ্য, প্রতি ইউনিটে মাছ ধরার প্রচেষ্টা, প্রজননোত্তর ইলিশের হার পর্যবেক্ষণ করা হয়।
তিন বছরের গবেষণালদ্ধ ফলাফল অনুযায়ী প্রস্তাবিত প্রজনন এলাকায় বছরওয়ারী ডিমওয়ালা মাছের সংখ্যা যথাক্রমে ৬৫, ৬৯ এবং ৫১ শতাংশ, ডিম ছাড়ারত (ওজিং) মাছের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৯, ৫৫ ও ৪৩ শতাংশ এবং ডিম ছেড়ে দেয়া (স্পেন্ট) মাছের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৫, ৫০ ও ৪০ শতাংশ নির্ণয় করা হয়। এছাড়া প্রজননোত্তর ইলিশ মাছের হার যথাক্রমে ৪৫, ৫০ ও ৪০ শতাংশ শনাক্ত করা হয়। একইভাবে নিষিক্ত ডিমের সংখ্যা যথাক্রমে ৩৮২২, ৪৫০৮ ও ২৬৬৬ কেজি নির্ণয় করা হয়। বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত প্রায় ৩৩০টি মাছ ধরার নৌকা, নদীর ১১টি পয়েন্টে আড়ৎ, মাছঘাট, জেলেপল্লী থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে ইউনিট প্রতি মাছ ধরার প্রচেষ্টা নির্ণয় করা হয়েছে।
গবেষণার তথ্যমতে, বলেশ্বর নদী ও মোহনা অঞ্চলে পানির গুণাগুণ ইলিশের প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য অনুকূলে রয়েছে। ইলিশসহ অন্যান্য মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বলেশ্বর নদীতে প্রজনন ক্ষেত্র ঘোষণা করা প্রয়োজন। বলেশ্বর নদী ও মোহনা অঞ্চল প্রজনন ক্ষেত্র ঘোষণা ও সুরক্ষা করা হলে প্রতিবছর অতিরিক্ত প্রায় অর্ধ লক্ষ মেট্রিক টন অধিক ইলিশ উৎপাদিত হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ২৬৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বলেশ্বর নদীতে ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ বিষয়ক অংশীজন বিষয়ক কর্মশালা ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় মন্ত্রী জনাব শ. ম. রেজাউল করিম এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী ও বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আমিন উল আহসান। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সভাপত্বিত করেন ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, মহাপরিচালক বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। কর্মশালার মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম। কর্মশালায় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, প্রকল্প পরিচালক, ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী, বরগুনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি এবং বরিশাল জেলার জেলা প্রশাসক, মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলে প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।