প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৯
ফরিদগঞ্জের স্বর্ণের দোকান থেকে চুরি হওয়া স্বর্ণ উদ্ধার, কথিত সাংবাদিকসহ আটক ২

ফরিদগঞ্জ বাজারের মা জুয়েলার্সে চুরির ঘটনায় দু চোর আটক এবং চুরি হওয়া প্রায় ৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। আটককৃত চোরেরা হলো : চাঁদপুর থেকে আটক পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানির খলিল মৃধা (৪০) ও রাজধানী টেলিভিশনের খুলনার ব্যুরো প্রধান, সাবেক জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতা কামাল পারভেজ মিলন (৪৬)।
|আরো খবর
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর ২০২৫) বেলা সাড়ে ১১টায় চাঁদপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, পিপিএম ।
এ সময় তিনি বলেন, ফরিদগঞ্জ বাজারের মা জুয়েলার্সে গত ১৫ অক্টোবর রাতে দোকানের সাটারের তালা ভেঙ্গে দোকানে থাকা প্রায় ২৪.৯ ভরি স্বর্ণ ও ৩৫ ভরি রূপা এবং নগদ ২৫ হাজার টাকা নিয়ে যায় চোরের দল। এরপর থেকে পুলিশ বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুলনায় প্রায় তিনদিন অভিযান পরিচালনা করে বুধবার (২৯ অক্টোবর ২০২৫) রাতে শীর্ষ চোর কামাল পারভেজ মিলন (৪৬)কে চোরাইকৃত ৭ ভরি ১ আনা ২ রর্তি স্বর্ণ, ২ টি মোবাইল ফোন ও চোরাই কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ গ্রেফতার করে। তার দেয়া তথ্য মতে, চাঁদপুরের শেখের হাট থেকে অপর চোর খলিল মৃধা(৪০)কে চোরাই স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির ৫ লাখ টাকা সহ গ্রেফতার করা হয়।
জানা যায়, গ্রেফতারকৃত কামাল পারভেজ মিলন (৪৬) সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার খাজারি ইউনিয়নের পিরোজপুর এলাকার ইসমাইল সর্দার প্রকাশ আলী হোসেন
হোসেনের ছেলে। সে ওই এলাকার জামায়াতে ইসলামীর নেতা সহিদুল ইসলাম ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের ভাই। মিলন খুলনা শহরের নিরালা আবাসিক এলাকায় থাকতো। এছাড়া মিলন আইপি টেলিভিশন রাজধানী টিভির খুলনার ব্যুরো চীফ বলে সে জানায়। সে ২০১৬ সালে সাতক্ষীরা জেলার ৮নং খাজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। যদিও হাইকোর্ট ওই নির্বাচন স্থগিত করে দেয় পরবর্তীতে। অপর আসামি মো. খলিল মৃধা পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি উপজেলার দক্ষিণ ইন্দুরকানি এলাকার নেছার উদ্দিন মৃধার ছেলে। সে চাঁদপুর সদর উপজেলার এনায়েতনগর শেখের হাটে (আশ্রয় দেয়া বাড়িতে) থাকতো।
পারভেজ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, চুরি করে নেয়া স্বর্ণালংকারের মধ্যে ১২ ভরি স্বর্ণালংকার বিভিন্ন জায়গায় ১৩ লাখ ১০ হাজার টাকা দামে বিক্রি করেছে এবং ওই টাকা হতে তার সহযোগী খলিল মৃধাকে ৫ লাখ টাকা দেয়। খলিলের কাছ থেকে পুলিশ ওই ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করে। বাকি ৫ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে প্রেস ব্রিফিংকালে জানানো হয় ।
পুলিশ সুপার বলেন, কামাল পারভেজ মিলন একজন আন্তঃজেলা চোর চক্রের মূল হোতা। সে তার সহযোগী অন্যান্য আসামির সহায়তায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় স্বর্ণালংকার দোকানে কৌশলে চুরি করে আসছে। তার বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতিসহ ৭টি মামলা এবং খলিল মৃধার বিরুদ্ধে দুটি সিআর মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদেরকে আজই (বৃহস্পতিবার) চাঁদপুর আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে।
ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ জানায়, গত ১৫ অক্টোবর দিনগত রাতে বাজারের থানা মোড় এলাকার মন্টু কর্মকারের মা জুয়েলার্সে চুরির ঘটনা ঘটে। অজ্ঞাতনামা চোর চক্র তার দোকানের ক্যাশ বক্সের তালা ভেঙ্গে নগদ প্রায় ২৫ হাজার টাকা ও দোকানের ভেতরে থাকা সিন্দুকের তালা ভেঙ্গে ২৪ ভরি ৯ আনা স্বর্ণ, যার আনুমানিক মূল্য ৫০লাখ টাকা এবং ৩৫ ভরি রূপা, যার আনুমানিক মূল্য ১ লাখ ৫ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়।
এই ঘটনায় ব্যবসায়ী মন্টু কর্মকার ২২ অক্টোবর ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান।
জানা যায়, ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহ্ আলমের তত্ত্বাবধানে একটি চৌকস দল তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে মূল আসামি পারভেজকে ২৯ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে খুলনা শহরের নিউ মার্কেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। তার দেয়া তথ্য মতে থানার অপর একটি টিম চাঁদপুর সদর উপজেলার এনায়েতনগর থেকে একই দিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে খলিলকে গ্রেপ্তার করেন।
প্রেস ব্রিফিংকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মুকুর চাকমা, ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহ আলম, ওসি (তদন্ত) রাজিব চক্রবর্তী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।








