সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪৫

সোনালী ব্যাংক ডিজিএম অফিসের পরিচ্ছন্ন কর্মীর লাশ বাথরুম থেকে উদ্ধার

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট
সোনালী ব্যাংক ডিজিএম অফিসের পরিচ্ছন্ন কর্মীর লাশ বাথরুম থেকে উদ্ধার

সোনালী ব্যাংক চাঁদপুর প্রধান শাখার ওপরে ডিজিএম অফিসের বাথরুম থেকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী মঙ্গল হরিজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

বুধবার (৮ অক্টোবর ২০২৫) রাত ১১টার দিকে চাঁদপুর শহরের চিত্রলেখা মোড়ের মোজাম্মেল প্লাজার ৪র্থ তলার

সোনালী ব্যাংক চাঁদপুরের ডিজিএম অফিসের বাথরুম থেকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী

মঙ্গল হরিজন (৬০) (পিতামৃত হরিলাল হরিজন, চাঁদপুর শহরের স্বর্ণখোলা, হরিজন কলোনির বাসিন্দা)-এর লাশ উদ্ধার করা হয়।

জানা যায়,

প্রতিদিনের ন্যায় বুধবার সকালে নিয়মিত রুটিন অনুযায়ী মঙ্গল হরিজন বাসা থেকে বের হয়ে দীর্ঘ দু যুগের কর্মস্থল সোনালী ব্যাংক চাঁদপুর প্রধান শাখার অফিসে আসেন।

কাজের নিয়মিত রুটিন অনুযায়ী সারাদিনের কাজ শেষে এ ব্যাংকের উপরে ডিজিএম অফিসে নিজের পরিচ্ছন্নতার জন্যে বাথরুমে ঢুকেন। নিজের সেই পরিচ্ছন্নতাই যে জীবনের শেষ পরিচ্ছন্নতা হবে, সেটি অজানা ছিলো।

ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকারী ও ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বক্তব্য মতে,

তিনি বাথরুমে ঢুকে পরিচ্ছন্ন হওয়ার জন্যে পানির কল চালিয়ে পরিচ্ছন্ন হওয়া অবস্থায় বাথরুমে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এদিকে মঙ্গল হরিজন সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী অফিসের কাজ শেষ করে যে সময়ে বাসায় চলে যাওয়ার কথা, ওই সময় পেরিয়ে আরো কয়েক ঘণ্টা সময় পার হয়ে যায়। কিন্তু তিনি বাসায় না ফেরায় তার পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে তাকে চারদিকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে।

এক পর্যায়ে মঙ্গল হরিজনের ছেলে সুদীপ হরিজন তাকে সোনালী ব্যাংকে খুঁজতে আসলে ব্যাংক কতৃপক্ষ জানায়, সে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে বাসায় চলে গেছে।

এরপরও পুরো শহরসহ নানা স্থানে তাঁকে খুঁজতে থাকে তাঁর ছেলে সুদীপ। কিন্তু কোথাও না পেয়ে পুনরায় ব্যাংকে ফিরে এসে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে সুদীপ উক্ত অফিসের বাথরুমগুলো ভালো করে চেক করতে গিয়ে দেখেন, তিনটি বাথরুমের মধ্যে দুটি বাথরুমের দরজা খোলা, একটি বন্ধ। বন্ধ বাথরুমের ভেতর দিয়ে সিটকিনি আটকানো এবং পানির কল দিয়ে পানি বের হচ্ছে। কিন্তু বহু শব্দ করার পরও এবং দরজাটি বার বার খোলার জন্যে বলা হলেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পাওয়ায় বিষয়টিতে সকলের সন্দেহ হয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি সোনালী ব্যাংক চাঁদপুরের ডিজিএম সঞ্জয় কুমার রায়কে অবহিত করা হলে তিনি নিজেও চেষ্টা করে দেখেন বাথরুমের দরজা খোলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি দেখে বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে তাৎক্ষণিক চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ বাহার মিয়াকে অবহিত করে এ বিষয়ে সহযোগিতা কামনা করেন। এ অবস্থায় মৃত মঙ্গল হরিজনের ছেলে সুদীপ হরিজন পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগেই বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে দেখেন, তার বাবার নিথর দেহ বাথরুমের মধ্যে পড়ে আছে।

তাৎক্ষণিক কর্মচারীরা সহ মৃত মঙ্গল হরিজনকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন ।

এদিকে তাৎক্ষণিক ঘটনাটি চাঁদপুরের হরিজন সম্প্রদায়ের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে সোনালী ব্যাংক চাঁদপুরের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ভিড় করতে থাকে। শুধু হরিজন সম্প্রদায়ের নয়, ঘটনাটি তাৎক্ষণিক পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়লে শত শত উৎসুক জনতা ব্যাংকের সামনে জড়ো হতে থাকে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জেলা পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা অবহিত হন।

তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেনো না ঘটে সেজন্যে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাহার মিয়া সহ ঘটনাস্থলে পুলিশের একাধিক টিম উপস্থিত হয়।

অন্যদিকে মৃত মঙ্গল হরিজনের ছেলে সুদীপ হরিজন হাসপাতাল থেকে লাশ অ্যাম্বুলেন্স যোগে ব্যাংকের সামনে নিয়ে আসে । পরে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্যে লাশটি থানা পুলিশের হেফাজতে নিয়ে যায়। এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও ব্যাংক কর্মকর্তা স্থানীয় সুধীজনদের ধারণা, মঙ্গল হরিজন বাথরুমের ভেতরেই হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে সেখানে লুটিয়ে পড়েন।

যদিও এ বিষয়ে মৃত মঙ্গল হরিজনের পরিবারের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে ঘটনার বিষয়ে হরিজন সম্প্রদায়ের বেশ কজন শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে কথা হলে

তারা বলেন, আপাতত বিষয়টি নিয়ে ভালো করে জেনেশুনে নেই। তারপর কথা বলবো। কিন্তু এ বিষয়ে এই মুহূর্তে কোনো কথা বলতে চাই না।

এদিকে এই বিষয়ে সোনালী ব্যাংক চাঁদপুর অঞ্চলের ডিজিএম সঞ্জয় কুমার রায় বলেন, আমাকে অফিসের সহকর্মী জানালেন, মৃত মঙ্গল হরিজন প্রতিদিনের ন্যায় কাজ শেষ করে যে সময় বাসায় চলে যাওয়ার কথা, সেই সময় পেরিয়ে অনেক সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও সে বাসায় না যাওয়ায় তার ছেলে অফিসে এসেছে। পরে অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে খুঁজে তাকে দেখতে পায় না। এরপর তারা বলেছে, কোথাও আছে কিনা বা কোনো স্বজনের বাসায় গেছে কিনা, খোঁজ নেওয়ার জন্যে বলেছে।।

পরে তার ছেলে বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিয়ে না পেয়ে পুনরায় আমাদের অফিসে এসে অফিসের লোকজনদেরকে নিয়ে এক পর্যায়ে বাথরুমগুলোতে আছে কিনা তা দেখতে গিয়ে এমন পরিস্থিতি দেখে আমাকে জানালে আমি তাৎক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি অবহিত করি। পরের ঘটনা তো আপনাদেরই জানা। তিনি প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই মুহূর্তে আমি কোনো কিছুই বলতে পারবো না। তবে মৃত মঙ্গল হরিজন আমাদের অফিসে দীর্ঘ দু যুগের মতো সময় ধরে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করছিলো। সে অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ ছিলো।

তিনি আরো বলেন, শুধু মঙ্গল হরিজনই নয়, তার বাবা-মা সোনালী ব্যাংকের পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে পূর্বে চাকরি করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় সেও আমাদের ব্যাংকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে চাকরিরত ছিলেন।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক চাঁদপুর শাখার এজিএম মানিক সরকার বলেন, ঘটনার বিষয়টি তাৎক্ষণিক ডিজিএম স্যার আমাকে জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে যা দেখার তা দেখলাম। আমাদের ধারণা কাজ শেষে প্রতিদিন সে নিজেও পরিচ্ছন্ন হয়ে বাসায় যায়।

হয়তো বাথরুমে ঢুকে পরিচ্ছন্ন হওয়ার সময হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানে মৃত্যু হয়।

তারপরও এহেন বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

এ বিষয়ে চাদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাহার মিয়া বলেন, ঘটনা শুনে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়েছি, লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। বাকি যা আছে সব আইনি প্রক্রিয়া কাজ সম্পন্ন করা হবে।

উল্লেখ্য, মঙ্গল হরিজন চাঁদপুর শহরের স্বর্ণখোলা হরিজন কলোনীর বাসিন্দা। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন।

পোস্টমর্টেম শেষে লাশ হস্তান্তর।। অপমৃত্যুর মামলা

সোনালী ব্যাংক চাঁদপুরের প্রধান শাখার পরিচ্ছন্নতা কর্মী মৃত মঙ্গল হরিজনের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার ( ৯ অক্টোবর ২০২৫) সকালে পরিচ্ছন্নতা কর্মী মঙ্গল হরিজানের লাশ পোস্টমর্টেম করা হয়। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত মঙ্গল হরিজনের একমাত্র ছেলে সুদীপ হরিজন চাঁদপুর সদর মডেল থানা থেকে লাশ গ্রহণ করেন।

সন্ধ্যায় চাঁদপুর শহরের ইচলীঘাটস্থ মহাশ্মশানে লাশ দাহ করা হয়।

অবশ্য মৃত মঙ্গল হরিজনের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই মুহূর্তে তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চান না। অপরদিকে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ বলছে, মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাইলে পুলিশের পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা করা হবে। তবে এই ঘটনায় মডেল থানা পুলিশের পক্ষ থেকে আপাতত একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান ইন্সপেক্টর মিন্টু দও।

সোনালী ব্যাংক চাঁদপুর শাখার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, মানবিক কারণে মঙ্গল হরিজনের পরিবারের পাশে আমরা আছি। এখন দাহ চলছে, পরবর্তীতে কথা বলবো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়