প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৩
হাইমচর চরের জমি কেলেঙ্কারি: দীপু মনির ভাইয়ের নেতৃত্বে ৪৮ একর জমি দখল, দুদকের অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
৪৮ একর চরের জমি নিয়ে তোলপাড়

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পশ্চিমে জেগে ওঠা ৪৮ দশমিক ৫২৫ একর সরকারি চরের জমি জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন কারাবন্দি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বড় ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাওয়াদুর রহিম টিপু। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি ও তার সহযোগী চক্র স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় এই জমি দখল করে নিয়েছেন।
|আরো খবর
জালিয়াত চক্র ও দলিল জালিয়াতি
হাইমচর সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জমির জালিয়াতির সঙ্গে জাওয়াদুর রহিম টিপু ছাড়াও জড়িত ছিলেন:
- সালাউদ্দিন সরদার (তৎকালীন চেয়ারম্যান, নীলকমল ইউনিয়ন পরিষদ)
- হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী (উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা)
- মুনুসর আহমেদ (ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা)
- অ্যাডভোকেট সাইফুদ্দিন বাবু (সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির প্রতিনিধি)
তাদের সহযোগিতায় ২০১৯ সালে একাধিক দলিলের মাধ্যমে জমি নিজেদের নামে দলিল সম্পাদন করা হয়।
দুদকের তদন্ত: ভূমি অফিসের ভেতর থেকে সহায়তা!
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আজগর হোসেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) হাইমচর উপজেলা ভূমি অফিস ও সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করেছে।
গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান:
- জমিগুলোর কোনো সরকারি খতিয়ান বা দাগ নম্বর ছিল না, কিন্তু ২০১৯ সালে হঠাৎ করেই জমির দলিল তৈরি হয়।
- সাব-কবলা দলিলের মাধ্যমে জমির মালিকানা স্থানান্তর করা হয়েছে, অথচ সরকারি রেকর্ডে এসব জমি খাসজমি হিসেবে চিহ্নিত।
- দখলের পর সেখানে “টিপু নগর” নামে নতুন বসতি স্থাপন করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ
দীর্ঘদিন ধরে চরাঞ্চলে চাষাবাদ করা স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, তাদের জমির প্রকৃত মালিকানা থাকা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রশাসনিক সহযোগিতার মাধ্যমে সিন্ডিকেট তাদের জমি আত্মসাৎ করেছে।
কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের দাদার আমল থেকে এই জমিতে চাষ করি, সরকারকে খাজনা দিই। কিন্তু কিছুদিন আগে শুনলাম, আমাদের জমি অন্য লোকের হয়ে গেছে! কেমনে হলো বুঝতে পারছি না!”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ পাওয়ার পর চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি। তবে বিএনপি নেতারা এটিকে আওয়ামী লীগের দুর্নীতির আরেকটি বড় উদাহরণ বলে অভিহিত করেছেন।
চাঁদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “এটা স্পষ্ট প্রমাণ যে, আওয়ামী লীগ শুধু জনগণের ভোট লুটই নয়, তাদের জমিও লুটপাট করছে। এই দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।”
নতুন চক্রান্ত: শুধু হাইমচর নয়, আশপাশের জমিও টার্গেটে!
দুদকের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এই সিন্ডিকেট শুধু হাইমচরের ৪৮ একর জমি নয়, আশেপাশের আরও চরের জমি দখলের চেষ্টা করছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “ওরা এখানেই থামেনি, আরও জমির কাগজপত্র তৈরির চেষ্টা চলছে।”
আইনি পদক্ষেপ ও দুদকের পরবর্তী পদক্ষেপ
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আজগর হোসেন বলেন, “আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। বেশ কিছু জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছি। পরবর্তী তদন্ত শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
চাঁদপুরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জমি দখল কেলেঙ্কারির এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে, ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
ডিসিকে/এমজেডএইচ