প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৪, ২৩:৪৮
ফরিদগঞ্জে মসজিদের ইমাম লাঞ্ছিত, প্রতিবাদে মানববন্ধন
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে জামে মসজিদের ইমামকে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে মসজিদে নামাজ আদায় করছেন না মুসল্লিরা। লাঞ্ছিতের ঘটনা যিনি ঘটিয়েছেন তিনি একাই মসজিদে আজান দিচ্ছেন এবং একাই নামাজ পড়ছেন। আযানের পর মাইকে সবাইকে মসজিদে আসার আহবান করলেও কেউ মসজিদে আসছেন না। অন্যদিকে ইমামকে পূর্ণ বহালের দাবী জানিয়ে এবং লাঞ্ছনাকারীর বিচার চেয়ে মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২ জুন) বিকেলে মসজিদের সামনে এ মানববন্ধনে প্রায় দুই শতাধীক ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশ গ্রহণ করেন। এর আগে শনিবার (১ জুন) ফজরের নামাজের পর মসজিদের ইমামকে বের করে দেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম।
সরেজমিনে জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের খুরমখালী পুরান বাড়ী জামে মসজিদে দীর্ঘদিন যাবত ইমামতি করে আসছেন গাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা মো. ফয়েজ উল্যাহ। তার সুমিষ্ট ও সুললিত কণ্ঠে কোরআন তেলোয়াত ও জুমার নামাজের পূর্বে নসিহত শুনে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা ইতোমধ্যে মসজিদ মুখী হতে শুরু করেছে। প্রতি জুমার নামাজের পূর্ব মুহুর্তে নসিহতের অংশ হিসেবে শুক্রবার (৩১ মে) তিনি এলাকার মানুষকে ইসলামের সঠিক পথে চলার জন্য কোরআন ও হাদিস থেকে আলোচনা করেন। মসজিদে প্রায় তিন শতাধীক মুসল্লি থাকলেও ইমামের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলেননি। শুধুই একা মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম ক্ষিপ্ত হয়ে ইমামকে বকাঝকা করতে থাকেন। ইমামকে রাষ্ট্রদ্রোহীতার নানান তকমা দিয়ে পরেরদিন শনিবার (১ জুন) সকালে মসজিদ থেকে ইমাম ফয়েজ উল্যাকে বের করে দেন তিনি। এঘটনা এলাকাতে মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে মুসল্লিদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মসজিদে ইমামকে পূর্ণ বহাল না করলে মসজিদে নামাজ আদায় না করার সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা। এর পর থেকে মসজিদে একাই আজান দেন এবং নামাজ পড়েন আবুল হাসেম।
মসজিদের মুয়াজ্জিন ও মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেমের ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, জুমার মসজিদে হুজুরে হালাল হারামের উপর নসিহত পেশ করেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে হুজুরে কোন বক্তব্য দেন নাই। আমার ভাই নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য হুজুরের উপর অন্যায় অত্যাচার করছেন। শুধু এই হুজুর নয়, আরো অন্যান্য ইমাম ও মোয়াজ্জেনদেরকেও লাঞ্ছিত করেছেন তিনি। কেউ তার প্রতিবাদ করলে তাকে মামলার ভয় দেখাচ্ছেন তিনি।
মসজিদের সাবেক মুয়াজ্জিন তাজুল ইসলামের ছেলে রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমার বাবাকেও আবুল হাসেম লাঞ্ছিত করে মসজিদ থেকে বের করে দিয়েছেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম ‘মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট’ ব্যবহার করে মানুষকে হয়রানী করায় তার নেশা।
মানববন্ধনে অংশ গ্রহণকারী মসজিদ কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন মনু মিয়া বলেন, আমাদের মসজিদের ইমাম ফয়েজ উল্যাহ যখনি চাকুরী শুরু করেছেন, তখন থেকেই মসজিদে মুসুল্লির সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। মসজিদে এলাকার অনেক শিক্ষিত মানুষ শুক্রবারে নামাজ আদায় করেছেন, হুজুরে সরকারের বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য রাখেননি। প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেন নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য হুজুরসহ মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে।
মসজিদ থেকে ইমামকে বের করে দেয়ার কথা স্কীকার করে মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম বলেন, হুজুরে জঙ্গীবাদকে উৎসাহি করে বক্তব্য দিয়েছে। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে মসজিদ থেকে বের করে দিয়েছি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম বলেন, শুক্রবারে মসজিদে আমি নিজেও নামাজ পড়েছি। যতক্ষন আমি মসজিদে ছিলাম ততক্ষনে হুজুরকে সরকারের বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে শুনিনি। হুজুরকে বের করে দেয়ার পর এখন মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম নিজে মসজিদে আজান দেন ও নামাজ পড়েন। আমি চাই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বিষয়টি সমাধানে এগিয়ে আসবেন।
লাঞ্ছনার স্বাীকার ইমাম সাংবাদিকদের বলেন- আমি রাষ্ট্র বিরোধী কোনো আলোচনা রাখিনি। কোরআন হাদীসের আলোকে ঘুষ, দুর্নীতি, হালাল-হারাম এবং লোক দেখানো ইবাদত বিষয়ে আলোচনা রেখেছি। আলোচনা রাখতে গিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কারো নাম উল্লেখ করিনি।