প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
শেখ হাসিনার জন্মদিনে ১০ জনের মরণোত্তর অঙ্গ ও দেহদানে অঙ্গীকারনামার সূচনা
কোনো অনুদান না নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে জীবনদীপ যে সেবা দিচ্ছে তা সত্যি বিরল
----------জেলা ও দায়রা জজ এস এম জিয়াউর রহমান
‘জীবন জয়ের হৃদ্যতা নিয়ে দাঁড়াও পাশে বন্ধু, মানবের কল্যাণে তোমার জয় অনিবার্য।’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে সেবামূলক সংগঠন জীবনদীপ চাঁদপুরে সর্বপ্রথম আয়োজন করেছে মরণোত্তর অঙ্গ ও দেহদানের অঙ্গীকার কর্মসূচি।
|আরো খবর
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিনকে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে গতকাল ২৮ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেলে চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আইনজীবী, স্বেচ্ছায় রক্তদাতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ব্যাপক উপস্থিতিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা ও দায়রা জজ এসএম জিয়াউর রহমান। তিনি জীবনদীপের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদারসহ যারা দেহ ও অঙ্গদানে অঙ্গীকারনামা করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, রক্তদান সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা রয়েছে। রক্ত দেয়া কোনো ক্ষতিকর কাজ নয়, কিন্তু দেহ দান বা অঙ্গ দানের মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সত্যি একটি কঠিন কাজ। যারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদেরকে স্বাগত জানাই। স্বাগত জানাই জীবনদীপের প্রতিষ্ঠাতাকে, যিনি এ ধরনের সেবামূলক কাজে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছেন। যারা আজ দেহদানে অঙ্গীকার করেছেন তাদের এই মহতী সিদ্ধান্তের প্রতি মানুষ উদ্বুদ্ধ হবে এবং একাজে অনেকেই এগিয়ে আসবেন। তিনি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান আমাদের শক্তি ও প্রেরণা। আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিনে দেহ ও অঙ্গদানে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে জীবনদীপের এমন একটি সুন্দর আয়োজনকে আমি স্বাগত জানাই। জীবনদীপ কোনো অর্থ না নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে মানুষের জন্যে যে সেবা দিয়ে যাচ্ছে তা সত্যি বিরল। তিনি আরো বলেন, আমার মা ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় জরুরিভাবে রক্তের প্রয়োজন দেখা দিলে ঢাকা বসেই জীবনদীপের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা দুজন রক্তদান করেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এদেশে কোনো সরকারই সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেয় না। তিনি গত বছর দুর্গাপূজা চলাকালীন যে ঘটনা ঘটেছে তাতে চাঁদপুর জেলারও কিছু বদনাম হয়েছে। যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সেদিকে সকলকে দৃষ্টি রাখতে হবে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ-এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আমরা এগিয়ে যাবো। তিনি শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব উপলক্ষে সকলকে অভিনন্দন জানান।
অঙ্গীকারনামার উদ্বোধন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল চাঁদপুরের বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে। যদি এই মানবিকতা নিয়ে কাজ করা হয় তাহলে জীবনদীপ এগিয়ে যাবে। তিনি জীবনদীপের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন। অনুষ্ঠাানের শুরুতে প্রধান অতিথি, উদ্বোধক ও অতিথিগণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। অনুষ্ঠানে অতিথিদের মাঝে বক্তব্য রাখেন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সামছুল ইসলাম।
জীবনদীপের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংগঠক অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদারের সভাপ্রধানে ও জীবনদীপের উপদেষ্টা শেখ মহিউদ্দীন রাসেলের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডঃ মোঃ জহিরুল ইসলাম, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডঃ সেলিম আকবর, জিপি অ্যাডঃ আব্দুর রহমান, বিশিষ্ট আইনজীবী সাইয়েদুল ইসলাম বাবু ও অ্যাডঃ খোরশেদ আলম শাওন। দেহ ও অঙ্গদানকারীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা। এদিন জীবনদীপের ডাকে সাড়া দিয়ে যারা স্বেচ্ছায় দেহ ও অঙ্গদানে অঙ্গীকারনামা প্রদান করেছেন তারা হলেন : বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা, তার সহধর্মিণী কণ্ঠযোদ্ধা কৃষ্ণা সাহা, পুত্রবধূ হ্যাপী সাহা, বীর মুক্তিযোদ্ধা বাসুদেব মজুমদার ও তার সহধর্মিণী জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী লীলা মজুমদার, কানু দেবনাথ ও তার সহধর্মিণী শোভা রাণী বিশ্বাস, সোহেল আহমেদ ভূঁইয়া, জেলা মহিলা পরিষদ নেত্রী শিখা চক্রবর্তী ও সাগরিকা মজুমদার। তারা সকলেই স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তিনামা পূর্বক দেহ ও অঙ্গদানে অঙ্গীকার প্রদান করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন অ্যাডঃ মোবারক হোসেন, আর পবিত্র গীতা পাঠ করেন জীবনদীপের অন্যতম উপদেষ্টা মৃদুল কান্তি দাস।
উপস্থিত দর্শকদের অনুরোধে কণ্ঠশিল্পী কৃষ্ণা সাহা পরিবেশন করেন ‘আমি স্বপ্নে দেখেছি সেদিন বঙ্গবন্ধুকে। আমি তোদের মাঝে রেখে এসেছি শেখ হাসিনাকে, শেখ রেহানাকে’। গানটি চলাকালীন উপস্থিত দর্শকদের মাঝে নীরবতা নেমে আসে।
উল্লেখ্য, জীবনদীপ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সেবামূলক কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে স্বেচ্ছায় রক্তদান, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, অসহায় মানুষকে সাহায্যকরণসহ ব্যাপকভাবে সেবামূলক কাজ করে আসছে। পূর্বে যেখানে জেলা শহরে এক ব্যাগ রক্তের জন্যে মানুষকে ছোটাছুটি করতে হতো, বর্তমানে মানুষের সেই দুর্ভোগ লাগবে জীবনদীপ অনেকটা সফল হয়েছেন বলেই অনেকের বিশ্বাস রয়েছে । জীবনদীপ যাতে তার সেবামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারে সেজন্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন জীবনদীপের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার।