বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কচুয়ায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ
  •   নির্মাণের এক বছর না যেতেই ফরিদগঞ্জ কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদের বেহাল দশা
  •   শেষ হলো পদ্মা-মেঘনায় জাল ফেলার নিষেধাজ্ঞা
  •   ফরিদগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার
  •   মোবাইল ব্যবহারে নিষেধ করায় শিশু শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:৩২

মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল্যার খুনি শনাক্ত!

খুনির আত্মহত্যা না-কি হত্যা করা হয়েছে ?

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট
মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল্যার খুনি শনাক্ত!

অবশেষে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ বীর মুক্তিযোদ্ধা, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও শহীদ জাবেদ মুক্ত স্কাউট দলের সভাপতি রফিকুল্যা খুনের ঘটনায় খুনিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে আশ্চর্যজনক হলো, খুনি ঘটনার পর ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। কিন্তু তার কোনো পরিচয় না পাওয়া যাওয়ায় বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে আঞ্জুমানে খাদেমুল ইনসানের মাধ্যমে লাশ দাফন করা হয়।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার পর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। পাশাপাশি নিহত রফিকুল্যার বাসায় থাকা কেয়ারটেকার মিরাজের জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা ঘটনা উদ্ঘাটনে মরিয়া হয়ে কাজ করে। এক পর্যায়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় এ ঘটনায় নিহতের সাথে সখ্যতা রয়েছে এমন লোক ঘটিয়েছে। পরবর্তীতে তারা খুনিকে

শনাক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে এবং তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতা নেয়। এরপর তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ খুনিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়।

এদিকে ঘটনার পর সকল দিক থেকে একটি কথা প্রচার হতে থাকে, নিহত রফিকুল্যার সাথে চাঁদপুর শহরের কোনো এক তরুণের সু-সম্পর্কের রেশ ধরে ঐ তরুণ গত কয়েক মাস যাবত রফিকুল্যার বাসায় আসা-যাওয়া করতো। এই তরুণই খুনের ঘটনা ঘটালো কিনা। তবে তার ঠিকানা কারো জানা ছিলো না। অবশেষে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমু থেকে ঐ তরুণের সকল কিছু সংগ্রহ করে তাকে পুলিশ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

জানা যায়, নিহত রফিকুল্যাহর খুনি চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের দাসপাড়ার গণেশ দাসের বাড়ির বাসিন্দা। তার নাম অমিত দাস। বয়স ১৬, পিতা গৌতম দাস। সে শহরের গণি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র।

এদিকে খুনি অমিত দাস ঘটনার দিন ঘটনা ঘটিয়ে নতুনবাজারস্থ পালপাড়া দিয়ে বের হয়ে মিশন রোড হয়ে রেললাইন দিয়ে শহরের গুচ্ছগ্রাম এলাকায় চলে যায়। ঐ এলাকায় ঘটনার পর থেকে সারারাত আত্মগোপনে থাকে। এরপর ভোরে অমিত শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের শেষ প্রান্তে চাঁদপুর-রায়পুর সড়কের রেলক্রসিংয়ের কাছাকাছি স্থানে অবস্থান নেয়।

এদিকে ২৫ সেপ্টেম্বর ভোরে মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন আসার সময়ে রেলক্রসিংয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী দেখেন এক তরুণ রেল লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ট্রেনটি চাঁদপুর কোর্ট স্টেশন থেকে ছেড়ে ঐ এলাকা অতিক্রমকালে তরুণ হঠাৎ করে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেয়। তার দেহটি ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। পরে রেলওয়ে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে এবং পিবিআই গিয়ে লাশের বিভিন্ন আলামত জব্দ করে রাখে। পরে লাশটির কোনো স্বজনের খোঁজ না পাওয়ায় বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়।

এদিকে অমিত ঘটনার দিন বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে সারারাত বাসায় না যাওয়া এবং আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করে না পাওয়ায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করা হয়।

এক পর্যায়ে পুলিশ অমিতকে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করার পর ঘটনার দিনের পোশাকসহ বিভিন্ন আলামত এবং সিসিটিভির ফুটেজের পোশাক ও পিবিআইর কাছে থাকা ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে পড়া তরুণের আলামত নিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়, এই অমিতই নিহত রফিকুল্যার খুনি।

পরবর্তীতে পুলিশ অমিতের পোশাকসহ লাশের ছবি ও অন্যান্য আলামত নিয়ে পুরাণবাজারস্থ অমিতের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তাদের মাধ্যমে পুলিশ আরো শতভাগ নিশ্চিত হয় আত্মহত্যাকারী তরুণ হলো অমিত এবং এই অমিতই হলো মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল্যার খুনি।

এদিকে খুনের ঘটনার ১দিন পর নিহত রফিকুল্যার ভাতিজা মুহাম্মদ মারনুছ মাহমুদ তন্ময় বাদী হয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং-৫৩। তাং- ২৬/৯/২০২২ খ্রিঃ। যদিও উক্ত মামলার এজাহারে কোনো আসামীর নাম দেয়া হয়নি। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ হেফাজতে থাকা নিহত রফিকুল্যার সার্বক্ষণিক দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মিরাজ খুনির পোশাকসহ বিভিন্ন আলামত দেখে পুলিশকে নিশ্চিত করেন এই-ই রফিকুল্যার খুনি।

মিরাজের তথ্য মতে, খুনি অমিতের সাথে ৩ থেকে ৫ মাসের মতো পরিচয় হয় তার চাচা রফিকুল্যার। খুনি অমিত মাঝে মধ্যে রফিকুল্যার নিকট আসতো এবং তারা দুজন অনেকক্ষণ একান্তেই সময় কাটিয়ে আবার অমিত চলে যেতো। মিরাজ বেশ কয়েকবার অমিতের পরিচয় জানতে চাইলেও রফিকুল্যাহর অপারগতার কারণে জানতে পারেনি। তাই পরবর্তীতে মিরাজ অমিতের পরিচয় জানার আগ্রহ দেখায়নি। মিরাজের তথ্য মতে, অমিত প্রায়ই রফিকুল্যার নিকট থেকে টাকা নিতো। কিছুদিন পূর্বে অমিত রফিকুল্যার বাসায় এসে মিরাজের মোবাইল ক্রয়ের জন্য জোগানো ১৫ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে রফিকুল্যাকে জানালে তিনি মিরাজকে অমিতের চুরি করে নিয়ে যাওয়া ১৫ হাজার টাকা জরিমানাও দেন। মিরাজের তথ্য মতে, খুনি অমিত পড়াশোনার পাশাপাশি শহরের একটি সংগীত প্রতিষ্ঠানে গান শিখতো।

এদিকে নিহত রফিকুল্যার নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা অমিতকে শনাক্ত করার পর তার আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা গুঞ্জন। নিকট স্বজন এবং সতীর্থরা এ ঘটনা নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পর অমিত নিজেই আত্মহত্যা করেছে না-কি হত্যার পেছনে কোনো বড় ধরনের রহস্য লুকিয়ে থাকায় অমিতকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুর রশীদের সাথে কথা হলে তিনি রহস্য উদ্ঘাটনের কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে আরো অধিকতর তদন্ত চলছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অমিত সরাসরি খুনি বা সে নিজে খুন করেছে এটি আমাদের চূড়ান্ত তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়