প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫, ০১:১০
কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা!
মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনা, আকাশসীমা বন্ধ করলো কাতার, ‘Shelter-in-place’ নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে!

কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় সামরিক ঘাঁটি ‘আল-উদেইদ’ লক্ষ্য করে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এই হামলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা এক ভয়াবহ মোড় নিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা 'তাসনিম' নিশ্চিত করেছে, হামলার নামকরণ করা হয়েছে ‘Operation Victory Message’।
বিশ্ব মিডিয়া যেমন এপিএন, আল-জাজিরা ও সিবিএস নিউজ সূত্রে জানা যায়— ইরান ছয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চ করে কাতারের দোহায় অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটির দিকে। রাতের আকাশে বিস্ফোরণ ও ফ্লেয়ার দেখা গেছে।
‘আল-উদেইদ’ ঘাঁটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিমান ও লজিস্টিক কেন্দ্র। এখনও পর্যন্ত কোনো প্রাণহানি বা ক্ষতির নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
হামলার পরপরই কাতার সরকার আকাশসীমা সাময়িক বন্ধ করে দেয়। দোহার মার্কিন দূতাবাস ‘shelter-in-place’ সতর্কবার্তা জারি করে, স্থানীয় মার্কিন নাগরিকদের ঘরের ভিতরে অবস্থান করতে বলা হয়। দোহার নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, রাতভর গুজব ও ভীতি দেখা দেয়।
ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্য সমর্থন দেওয়ায় ইরান এই হামলার সিদ্ধান্ত নেয় বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। ইরান জানায়, "আমরা যুদ্ধ শুরু করিনি, কিন্তু প্রতিশোধ না নিয়ে ছাড়ব না।"
এই হামলা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া ও ইরাকের ইরানপন্থী মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে বিমান হামলার প্রতিক্রিয়া।
জাতিসংঘের মহাসচিব এই ঘটনার “অত্যন্ত গভীর উদ্বেগ” প্রকাশ করে বলেন, “মধ্যপ্রাচ্য আরেকটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে।” যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা দপ্তর এই হামলাকে “ইরানের যুদ্ধ ঘোষণার সমান” বলে উল্লেখ করেছে।
ইসরায়েল এখন পুরোপুরি যুদ্ধ প্রস্তুতিতে রয়েছে, এবং কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইরানের এই পদক্ষেপকে অনেকেই ‘বেপরোয়া প্রতিরোধের বার্তা’ হিসেবে দেখছেন।
বাংলাদেশসহ অন্যান্য শান্তিপূর্ণ দেশের জন্যও এই যুদ্ধের প্রভাব পড়তে পারে—বিশেষ করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, রেমিট্যান্সে প্রভাব ও কূটনৈতিক চাপে।
ঢাকাভিত্তিক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ড. সাইফুল আজম বলেন— "ইরান এই হামলার মাধ্যমে কৌশলগত বার্তা দিয়েছে: ‘আমরাও আঘাত হানতে পারি, তাও মার্কিন ঘাঁটির ওপর।’"
বিশ্ব পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, এই ঘটনার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সরাসরি ইরানভিত্তিক সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় হামলার দিকে এগোতে পারে। এতে করে গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ভয়াবহ অস্থিরতা ও মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো—আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা, যাতে করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সারা বিশ্বের দৃষ্টি এখন ওয়াশিংটন ও তেহরানের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।
তথ্যসূত্র: AP News, Al Jazeera, CBS News, Tasnim News Agency, UN Press