শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:২৮

ভারতের 'পাখা' কাটলো পাকিস্তান: দৈনিক ক্ষতির অঙ্ক আকাশ ছুঁয়েছে!

নজিরবিহীন পদক্ষেপ ইসলামাবাদের: আকাশপথ বন্ধের মাধ্যমে বিশ্বকে বার্তা?

বিশেষ প্রতিবেদক: মো. জাকির হোসেন
ভারতের 'পাখা' কাটলো পাকিস্তান: দৈনিক ক্ষতির অঙ্ক আকাশ ছুঁয়েছে!
ছবি: পাকিস্তান ও ভারতের আকাশপথের ম্যাপ, রুট পরিবর্তনের দৃশ্য।

কাশ্মীর উপত্যকায় সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী হামলার পর উত্তেজনা চরমে

কাশ্মীর উপত্যকায় সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী হামলার পর ভারতের সাথে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে পাকিস্তান এক কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে—ভারতীয় নিবন্ধিত সব ধরনের বেসামরিক ও সামরিক বিমানের জন্য তাদের আকাশসীমা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। পাকিস্তান সিভিল এভিয়েশন অথরিটির জারি করা একটি নতুন নোটিশ অনুযায়ী, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ভারতীয় সংস্থাগুলোর ভাড়া করা বিমানগুলোও পাকিস্তানের আকাশে প্রবেশ করতে পারবে না।

ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচলে বিরাট প্রভাব

বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের এ সিদ্ধান্ত ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটাবে। এআরওয়াই নিউজ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ১০০টিরও বেশি ভারতীয় ফ্লাইট পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে থাকে। ফলে এখন প্রতিটি ফ্লাইটের জন্য গড়ে অতিরিক্ত দুই ঘণ্টা পথ ঘুরতে হবে, যা প্রতিদিনই মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত খরচ বাড়াবে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর ওপর। বিশেষ করে এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, আদিত্য জেট, ইন্ডিগো এয়ার ও আকাসা এয়ারের মতো বড় সংস্থাগুলো সরাসরি এ ক্ষতির মুখে পড়েছে। শুধু কয়েকদিনের আকাশসীমা বন্ধ থাকায় ভারতীয় এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি ইতিমধ্যেই প্রায় ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

নয়াদিল্লি বিমানবন্দরে সরাসরি প্রভাব

রয়টার্সের পৃথক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ হওয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে নয়াদিল্লি ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-এর ওপর, যেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপগামী ফ্লাইটের সংখ্যা অত্যধিক।

নয়াদিল্লি থেকে দুবাই, আবুধাবি, দোহা কিংবা লন্ডনগামী বিমানের জন্য এখন এক থেকে দেড় ঘণ্টা বেশি সময় লাগবে। এতে করে জ্বালানির অতিরিক্ত খরচ ও পণ্য পরিবহন ক্ষমতা হ্রাস পাবে

"আমাদের ফ্লাইটগুলোকে এখন গুজরাটের ওপর দিয়ে আরব সাগরে ঢুকে ইরান হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। সময় ও খরচ—দুটোই দ্বিগুণ হচ্ছে।"

ফ্লাইট ট্র্যাকিংয়ে বিপর্যয়

ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়্যার-এর তথ্য অনুযায়ী, উদাহরণস্বরূপ, ইন্ডিগোর একটি ফ্লাইট, যা সাধারণত নয়াদিল্লি থেকে বাকু যেতে চার ঘণ্টারও কম সময় নেয়, তা বৃহস্পতিবার ৫ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট সময় নিয়েছে।

ভুগছে শুধু বিমান সংস্থাই নয়, ভ্রমণকারীরাও

পাকিস্তানের সিদ্ধান্তের ফলে শুধু বিমান সংস্থাগুলো নয়, যাত্রীদেরও ভ্রমণ ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিরিক্ত সময় লাগার কারণে টিকিটের দামও বাড়ছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসী কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ভুগছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে পাকিস্তান যদি এই আকাশসীমা বন্ধ অব্যাহত রাখে, তবে ভারতীয় বেসামরিক বিমান চলাচল খাতে বার্ষিক শত শত মিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপগামী এয়ার কার্গো পরিষেবার ওপরও বড়সড় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

পাকিস্তানের কৌশলগত বার্তা

পাকিস্তানের এই পদক্ষেপকে বিশ্লেষকরা একে কৌশলগত চাপ হিসেবে দেখছেন। কূটনৈতিক মহলের ধারণা, ভারতের ওপর অর্থনৈতিক ও পরিবহন খাতে সরাসরি চাপ সৃষ্টি করে কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো পাকিস্তানের মূল লক্ষ্য

বিশেষ করে এই মুহূর্তে যখন ভারতের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, তখন পাকিস্তান আকাশসীমা বন্ধ করে ভারতকে একটি কৌশলগত বিপাকে ফেলতে চাইছে।

ভারতীয় প্রতিক্রিয়া

ভারতের পক্ষ থেকে এখনও পাকিস্তানের এই সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সূত্রমতে, ভারতীয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (DGCA) এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় পরিস্থিতি মনিটর করছে এবং বিকল্প রুটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা যদি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার আকাশপথ দীর্ঘস্থায়ী সংকটে পড়তে পারে। এবং এর খেসারত দিতে হবে কেবল ভারত নয়, গোটা এশিয়া-ইউরোপ আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থাকেই।
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়