প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৫, ০০:৫৫
ইরান চালাচ্ছে ব্যাপক সামরিক মহড়া, নতুন অস্ত্র পরীক্ষা
"ইরানের সামরিক মহড়া: শক্তি প্রদর্শন না আত্মরক্ষা?"

ইরান গত তিন মাস ধরে ব্যাপক পরিসরে সামরিক মহড়া চালিয়েছে, যেখানে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এবং ইরানের সেনাবাহিনী একযোগে নতুন প্রতিরক্ষা এবং আক্রমণাত্মক অস্ত্র পরীক্ষা করেছে। এই সামরিক মহড়া ২০২৫ সালের জন্য তেহেরানকে একটি শক্তিশালী প্রস্তুতি অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আয়োজিত হচ্ছে। ইরান তাদের সামরিক সক্ষমতা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে যে অবস্থান দৃঢ় করার চেষ্টা করছে, তা এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য।।
মহড়ার উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য:
ইরানের সামরিক বাহিনী ও আইআরজিসি গত তিন মাস ধরে ব্যাপক মহড়া চালানোর মাধ্যমে তাদের সামরিক সক্ষমতা শক্তিশালী করতে এবং সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তেহেরান নতুন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি এবং আক্রমণাত্মক অস্ত্র ব্যবহার করে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করার দিকে মনোনিবেশ করছে।।
মহড়ার অন্যতম লক্ষ্য হলো:
১. ইরানের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি: নতুন অস্ত্র এবং প্রযুক্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ইরান তাদের সামরিক শক্তি তুলে ধরতে চায়। এতে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও কার্যকর হবে, যা তারা আঞ্চলিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে।।
২. আঞ্চলিক শক্তির অবস্থান দৃঢ় করা: ইরান তার সীমান্তের নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য এই মহড়া চালাচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে অন্যান্য শক্তিশালী দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতার জন্য ইরান একটি সুসংহত সামরিক অবস্থান তৈরি করতে চায়।।
৩. নতুন অস্ত্র ও প্রযুক্তি পরীক্ষা: ইরান তার সামরিক বাহিনীর কাছে নতুন ধরনের অস্ত্র, যেমন ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য আক্রমণাত্মক সমরাস্ত্র পরীক্ষা করছে। বিশেষত, দেশটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে সাফল্য অর্জন করেছে, যা তাদের প্রতিরক্ষা কাঠামোর শক্তি বৃদ্ধি করবে।।
মহড়ায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও প্রযুক্তি:
এই মহড়ায় ইরান বিভিন্ন ধরনের নতুন প্রযুক্তি এবং অস্ত্র পরীক্ষা করেছে:।
ড্রোন ও স্বচালিত যন্ত্রপাতি: নতুন ড্রোনের পরীক্ষা যা আকাশ ও স্থল আক্রমণ করতে সক্ষম। এসব ড্রোন ইরানকে দ্রুত ও সুনির্দিষ্ট আক্রমণ চালানোর ক্ষমতা দেবে।।
ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি: ইরান তাদের দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে, যা প্রতিরক্ষা এবং আক্রমণের জন্য ব্যবহার করা যাবে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইরানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করবে এবং অঞ্চলভিত্তিক প্রভাব বিস্তার করবে।।
নতুন ধরনের ট্যাঙ্ক ও মিসাইল: আইআরজিসি নতুন ধরনের ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য সামরিক যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করেছে, যা যুদ্ধের ময়দানে তাদের সক্ষমতা আরও বাড়াবে।।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
এই মহড়ার ফলে ইরান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা, ইরানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইরান তাদের সামরিক সক্ষমতা পরীক্ষা করার পাশাপাশি, প্রতিরক্ষা বিষয়ে তাদের জাতীয় নিরাপত্তা নীতি আরও কঠোর করতে চায়, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মধ্যে আরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।।
অন্যদিকে, ইরান এই মহড়ার মাধ্যমে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করছে যে, তারা তাদের সীমান্তে নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় কোন ধরনের আপস করবে না। বিশেষ করে, মধ্যপ্রাচ্যের অঞ্চলে প্রতিপক্ষ দেশগুলোর সাথে টানাপোড়েন চলমান রয়েছে, এবং এই সামরিক মহড়া তারই একটি অংশ।
ইরানের সামরিক কৌশল:
এই মহড়া ইরানের সামরিক কৌশলের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলকে আধুনিকীকরণ করা এবং আঞ্চলিক শক্তির সাথে ভারসাম্য বজায় রাখা। ইরান আক্রমণাত্মক ক্ষমতার সাথে নিজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করে একটি অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যা মধ্যপ্রাচ্যে তার নেতৃত্বকে আরও সুসংহত করবে।
ইরান সম্প্রতি যে সামরিক মহড়া চালিয়েছে, তা দেশের শক্তি প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নতুন অস্ত্র পরীক্ষা এবং সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ইরানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত করতে পারে। তবে, এই মহড়ার ফলস্বরূপ আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সম্পর্কের উপর যে প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে পরবর্তী সময়ে আরও বিশদ আলোচনা প্রয়োজন।
ডিসিকে/এমজেডএইচ