প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪
রাখাইনে স্বাধীন রাষ্ট্রের সম্ভাবনা, বাংলাদেশে নতুন সংকটের আশঙ্কা
বাংলাদেশের জন্য নতুন একটি ভূরাজনৈতিক সংকটের আগমন ঘটতে পারে, যা প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। চলতি মাসে, মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীকে পরাজিত করে রাখাইনের প্রায় ৮০ শতাংশ অঞ্চল দখল করে নিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য নতুন ধরনের সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
|আরো খবর
রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে তার কার্যক্রম শুরু করে। এই গোষ্ঠী, যা রাখাইন নৃগোষ্ঠীর বৌদ্ধদের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে, দ্রুত মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে সফলতা অর্জন করেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন রাষ্ট্রের সূচনা হওয়ার সম্ভাবনা এখন অনেকটাই দৃশ্যমান।
বিশ্বের শীর্ষ পরাশক্তি, যেমন ভারত, চীন, ও যুক্তরাষ্ট্র, ইতোমধ্যে এই অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের কৌশল তৈরি করতে শুরু করেছে। বিশেষ করে, চীন রাখাইনে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেছে যা বঙ্গোপসাগরে তার প্রভাবকে শক্তিশালী করেছে এবং সড়কপথ ও সাগরপথে গ্যাস পরিবহনে সাহায্য করছে। ভারতও রাখাইনে তার প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে, যা তাদের সেভেন সিস্টার রাজ্য এবং কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ আরও সহজ করবে।
তবে, বাংলাদেশের জন্য পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। সীমান্তবর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ, যা মিয়ানমারের সঙ্গে ইতোমধ্যে সম্পর্কের অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে, এবার নতুন সংকটে পড়তে পারে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে সীমান্তে চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি, আরাকান আর্মির স্বাধীনতা ঘোষণা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর নতুন ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই উদ্বেগ প্রকাশিত হয়েছে যে, ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী যদি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফলে বাংলাদেশে ঢলে পড়েন, তবে সংকট আরও গভীর হবে।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের প্রতি সমর্থন জানানো কিছু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সদস্যরা, যাদের মধ্যে অনেকেই রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণ করেছে। এই কারণে, রোহিঙ্গা এবং আরাকান আর্মির মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা বাংলাদেশের জন্য নতুন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশকে অবশ্যই এখনই এই নতুন পরিস্থিতিতে কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনও ধরনের সংকট থেকে রক্ষা পেতে পারে।
রাখাইনের এই পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, এই সংকট বাংলাদেশের সামরিক, কূটনৈতিক ও মানবিক পরিস্থিতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।