প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২০, ১৭:২০
মধ্যরাত থেকে ইলিশ শিকারে নামছে জেলেরা
আজ বুধবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে উঠে যাচ্ছে মা ইলিশ রক্ষার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। তাই উপকূলীয় দ্বীপজেলা ভোলায় জেলেরা নতুন উদ্দ্যোমে নদীতে মাছ শিকারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জেলেপাড়ায় মৎস্যজীবীদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। তারা আশা করছে, অভিযান শেষে তাদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে। সেই ইলিশ বিক্রি করে বিগত সময়ের লোকসান পুষিয়ে ধারদেনা পরিশোধ করতে পারবে।
দীর্ঘ ২২ দিন ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিলো। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় আজ বুধবার রাত ১২টা থেকে নদীতে মাছ শিকারে নামবে জেলেরা।
ভোলা মৎস্য বিভাগ বলছে, এবারের অভিযান প্রায় শতভাগ সফল হয়েছে।
ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে মা ইলিশ রক্ষায় গেলো ১৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ভোলায় প্রায় ২ লাখ জেলে বেকার হয়ে পরে। সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলেরা ২০ কেজি করে চাল পেলেও পরিবার পরিজন নিয়ে অভাব অনটনে চরম সঙ্কটে পড়ে জেলে পরিবারগুলো। এনজিওর ঋণ ও মহাজনের দাদনের বোঝা মাথায় নিয়ে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় পার করে তারা। অধিকাংশ জেলেই নদীতে এবার মাছ ধরতে যায়নি।
৪ নভেম্বর মধ্য রাত থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে, তাই জেলেরা তাদের নৌকা-ট্রলার আর জাল নিয়ে নদীতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে খুশির আমেজ। রূপালী ইলিশ ধরার আশায় বুক বেধেছে তারা।
এদিকে নিষেধাজ্ঞাকালীন প্রকৃত জেলেরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলেও অনেক অসাধু জেলে মাছ শিকারে লিপ্ত ছিলো। তাদের অনেকেই প্রশাসনের হাতে ধরা পড়ে। তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া হয়।
নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে অনেক জেলে পুরনো জাল সেলাই ও নৌকা মেরামত করে সময় পার করেছেন। আবার অনেকে অলস বেকার সময় পার করেছে। এ সময় ১ লাখ ২০ হাজার জেলেকে ২০ কেজি করে ভিজিএফএর চাল দেয়া হয়।
সরেজমিনে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা মাছ ঘাট, ভোলার খাল ও মাঝির হাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইতিমধ্যেই ইলিশ ধরার জাল সেলাই করা থেকে শুরু করে নৌকার ভাঙা অংশ মেরামত ও ইঞ্জিনসহ সবকিছু ঠিক করে নিয়েছেন জেলেরা।
জেলে হেজু মাঝি ও কামাল মাঝিসহ একাধিক জেলে জানান, যারা প্রকৃত জেলে তারা সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে মাছ ধরতে নামেনি। কিন্তু প্রকৃত অনেক জেলে চাল না পেলেও যারা জেলে নয়, এমন অনেকেই চাল পেয়েছে।
জেলেরা আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় আমরা বিভিন্ন জনের নিকট থেকে ধারদেনা করে সংসার চালিয়েছি। এখন জালে মাছ পেলে সংসারের খরচ যোগাতে পারবো, নয়তো দুর্ভোগের অন্ত থাকবে না।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২৫৬টি অভিযান চালানো হয়েছে। এতে সাড়ে ৩৮১ কেজি মা ইলিশ, ১২ লাখ ১৫ হাজার ৭০০ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরার অপরাধে ২৬০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়ার পাশাপাশি ৩১১ জনকে ১৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো: আসাদুজ্জামান জানান, ভোলায় সরকারি হিসেবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা এক লাখ ৩২ হাজার ২৬০ জন। জেলেদের সচেতনতা ও ভিজিএফএর চাল সঠিক সময়ে বিতরণ করায় এবার মা ইলিশ রক্ষার অভিযান প্রায় শতভাগ সফল হয়েছে। অসাধু জেলেরা ইলিশ শিকার করলেও তাদেরকে ধরে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ বছর প্রচুর ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়তে পেরেছে। এর ফলে ভোলা জেলার যে ইলিশ আহরণের লক্ষমাত্র রয়েছে, তা অর্জন সফল হবে।
ভোলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, এ বছর ভোলা জেলায় ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৬৫ হাজার মে. টন। মৌসুমের প্রথম ৪ মাসেই ধরা পড়েছে প্রায় ৭০ হাজার মে. টন ইলিশ।