সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:১৩

কিডনি পাথর প্রতিরোধের উপায়

হাকীম মো. মিজানুর রহমান
কিডনি পাথর প্রতিরোধের উপায়

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু মানুষ কিডনি পাথরের সমস্যায় ভোগেন। এটি একটি সাধারণ কিন্তু যন্ত্রণাদায়ক রোগ, যা সময়মতো চিকিৎসা না করলে জটিলতায় রূপ নিতে পারে। কিডনি পাথর মূলত প্রস্রাবে অতিরিক্ত খনিজ পদার্থ জমে গিয়ে কঠিন স্ফটিক আকারে তৈরি হয়। এই লেখায় আমরা জানব কিডনি পাথর কেন হয়, কী লক্ষণ দেখা দেয়, কীভাবে প্রতিকার করা যায় এবং কীভাবে প্রতিরোধ সম্ভব।

কিডনি পাথর কী?

কিডনি পাথর বা রেনাল ক্যালকুলি হলো কিডনি বা মূত্রনালীর মধ্যে গঠিত কঠিন খনিজ স্ফটিক। এটি সাধারণত ক্যালসিয়াম, অক্সালেট, ইউরিক অ্যাসিড বা সিস্টাইন জাতীয় পদার্থের অতিরিক্ত ঘনত্বের ফলে তৈরি হয়। পাথরের আকার হতে পারে বালির দানার মতো ছোট, আবার কখনো তা বড় হয়ে প্রস্রাবের পথ আটকে দিতে পারে।

কিডনি পাথরের ধরন

১. ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর-সবচেয়ে সাধারণ ধরনের পাথর

২. ক্যালসিয়াম ফসফেট পাথর-সাধারণত ইউরিনের অতিরিক্ত ক্ষারত্বে তৈরি হয়

৩. ইউরিক অ্যাসিড পাথর-প্রোটিন বেশি খাওয়ার ফলে তৈরি হয়

৪. সিস্টাইন পাথর-জেনেটিক কারণে তৈরি হয়, তুলনামূলকভাবে বিরল

কিডনি পাথরের কারণ

-পর্যাপ্ত পানি না পান করা

-অতিরিক্ত লবণ, প্রোটিন ও অক্সালেটযুক্ত খাবার গ্রহণ

-জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাস

-মূত্রনালীর সংক্রমণ বা প্রদাহ

-অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণ (যেমন: ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট)

-অতিরিক্ত ঘাম, পানিশূন্যতা বা গরম আবহাওয়া

-বেশি সময় বসে থাকা বা কম শারীরিক পরিশ্রম

লক্ষণসমূহ

-তীব্র পিঠ বা কোমরের ব্যথা

-প্রস্রাবে জ্বালা বা রক্ত

-ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ

-বমি ভাব বা বমি

-জ্বর ও শীত লাগা (সংক্রমণ হলে)

-প্রস্রাব আটকে যাওয়া বা ব্যথাসহ প্রস্রাব

প্রতিকার

১. চিকিৎসকের পরামর্শ

প্রথমেই আল্ট্রাসনোগ্রাম বা ঈঞ স্ক্যান করে পাথরের আকার ও অবস্থান নির্ধারণ করতে হবে। ছোট পাথর হলে ওষুধ ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনেই তা বের হয়ে যেতে পারে।

২. ওষুধ

-পেইন রিলিভার : ব্যথা কমাতে

-ডায়ুরেটিক: প্রস্রাব বাড়িয়ে পাথর বের করতে

-অ্যান্টিবায়োটিক : সংক্রমণ হলে

-আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি ভেষজ: যেমন পাশানভেদা, শিলাপুষ্পা, গোখরু

৩. অস্ত্রোপচার

-ESWL (Shock Wave Lithotripsy) : শক ওয়েভ দিয়ে পাথর ভাঙা

-URS (Ureteroscopy) : ইউরিনারি ট্র্যাকের পাথর অপসারণ

-PCNL (Percutaneous Nephrolithotomy) : বড় পাথর অপসারণে ব্যবহৃত

৪. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন

-অক্সালেটযুক্ত খাবার (পালং শাক, বিট, বাদাম) কম খাওয়া

-লবণ ও প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ

-লেবু পানি বা সাইট্রিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ পানীয় গ্রহণ

-পর্যাপ্ত পানি পান (প্রতিদিন ২.৫-৩ লিটার)

প্রতিরোধের উপায়

-প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান

-খাদ্যাভ্যাসে ভারসাম্য বজায় রাখা

-নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম

-প্রস্রাব আটকে না রাখা

-কিডনি ও ইউরিনারি ট্র্যাকের সংক্রমণ হলে দ্রুত চিকিৎসা

-চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ

ভেষজ চিকিৎসা ও প্রাকৃতিক উপাদান

পাশানভেদা (Saxifraga Ligulata)

-মূত্রবর্ধক ও প্রদাহনাশক

-ছোট পাথর প্রস্রাবের সঙ্গে বের করে দিতে সহায়ক

শিলাপুষ্পা (Didzmocarpus pedicellata)

-পাথর গলাতে সাহায্য করে

-অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণসম্পন্ন

গোখরু (Tribulus terrestris)

-প্রস্রাবের জ্বালা, রক্ত ও সংক্রমণ কমায়

-ইউরিনারি ট্র্যাকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে

সতর্কতা

-গর্ভবতী নারী, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা জরুরি

-নিজে থেকে ওষুধ বন্ধ করবেন না

-নিয়মিত ফলোআপ ও রক্ত/প্রস্রাব পরীক্ষা করান

কিডনি পাথর একটি চিকিৎসাযোগ্য সমস্যা, তবে সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে তা জটিলতায় রূপ নিতে পারে। সচেতনতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান এবং নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্ভব। আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসা পদ্ধতিতেও কিডনি পাথরের জন্য কার্যকর ভেষজ উপাদান রয়েছে, যা সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়