বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫  |   ৩৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৮

মানসিক সুস্থতা আবশ্যক

কণিকা রানী
মানসিক সুস্থতা আবশ্যক

একটি কথা প্রচলিত রয়েছেÑ‘স্বাস্থ্যই সুখের মূল।’ মন আর শরীর একটি আরেকটির অবিচ্ছেদ্য অংশ। মন ও শরীরের সম্পর্ক নিবিড়। এরা একে অপরের পরিপূরক। অসুস্থ শরীরে অসুস্থ মনের বাস, তেমনিভাবে মন অসুস্থ হলে শরীরও অসুস্থ হয়ে পড়ে; কিন্তু আমরা শারীরিক অসুস্থতাকে যতটা গুরুত্ব দিই, মানসিক অসুস্থতার প্রতি ততটা গুরুত্ব দিই না। এ কারণে আত্মহত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, অন্যায়, অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েন অনেকে। এর সুদূরপ্রসারী অভিঘাতে হারিয়ে যায় কতশত জীবন! এভাবে মানসিক অসুস্থতাকে অবহেলার কারণে প্রতিদিন কত মানুষ যে মৃত্যুর পথ বেছে নিচ্ছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। আধুনিকতার এই যুগে মানুষ যন্ত্রনির্ভর হয়ে চরম একাকিত্বে ভোগে। আমরা দিনদিন এতটাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি যে, একে অন্যের সঙ্গে সময় কাটানোর মতো মানসিকতাও যেন হারিয়ে ফেলেছি। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক তথা সামষ্টিক জীবনে।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুসারে, মানসিক সুস্থতা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে মনের এমন একটি ভালো অবস্থা হিসেবে, যেখানে ব্যক্তি তার নিজস্ব দক্ষতা উপলব্ধি করে, জীবনের স্বাভাবিক চাপকে মোকাবিলা করতে পারে, উৎপাদনশীল ও ফলদায়কভাবে কাজ করতে পারে; কিন্তু দুঃখজনকভাবে বর্তমানে আমরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি ক্রমশ। এর বড় কারণÑবেকারত্ব, অভাব-অনটন, অসচেতনতা, নিঃসঙ্গতা, পারিবারিক সমস্যা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সম্পর্কে ব্যর্থতা, হতাশা, অতিরিক্ত স্মার্টফোনের ব্যবহার ইত্যাদি। বর্তমানে তরুণ সমাজের একটা বড় অংশ মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন। এমনকি মানসিক অসুস্থতার সঠিক চিকিৎসার অভাবে অনেকে বিপথগামীও হচ্ছেন। এসব নিয়ে কাজ করা অতি জরুরি। আমরা আমাদের আশপাশে লক্ষ্য করলেই অসংখ্য সরকারি, বেসরকারি শারীরিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র (হাসপাতাল, ক্লিনিক) দেখতে পাই; কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চোখে পড়ে না বললেই চলে। যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী জিন টুয়েনজ ও তার সহকর্মীরা যৌথভাবে একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেন। এতে দেখা যায়, বর্তমানে তরুণদের মধ্যে অধিক পরিমাণে হতাশা ও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ হতাশ হলে ঠুনকো কারণেও নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারে না। তখন তিনি নিজেকে ‘একা’ মনে করে এবং একটা পর্যায়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়! আপাতদৃষ্টিতে অন্যদের কাছে মৃত্যুর কারণ ছোট মনে হলেও ঐ কারণই ঐ মুহূর্তে ঐ ব্যক্তির জন্য অনেক বড় হয়ে সামনে আসে! ওয়েবিনারে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আজহারুল ইসলাম বলেন, বিষণ্নতা থেকেই মূলত মানুষ আত্মহত্যা করে। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ থেকে মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন ‘মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অ্যাকাডেমিক চাপের প্রভাব এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা’ শীর্ষক এক জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৭ দশমিক ৯৯ শতাংশই জানিয়েছেন শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত ভয় ও উদ্বেগ তাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে। এছাড়া ৮০ দশমিক ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছে, দৈনন্দিন আচার-আচরণ ও ব্যবহারে পরিবর্তন, যেমন—মন খারাপ হওয়া, হঠাৎ ক্লান্তিবোধ ইত্যাদি বিষয় শিক্ষাজীবনে প্রভাব ফেলছে। আঁচল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর আরো গুরুত্ব দিয়ে নাগরিকের বেঁচে থাকার পরিবেশ তৈরি রাষ্ট্র ও পরিবারের দায়িত্ব। এ বিষয়ে আঁচল ফাউন্ডশেনের গবেষণায় উঠে এসেছে, তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে হারে আত্মহত্যা বাড়ছে, সে হারে সচেতনতা বাড়ছে না। এমতাবস্থায়, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরো কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে একা না রাখা, ক্রাইসিস সেন্টার ও হটলাইন চালু করা, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগ করার মতো বিষয়গুলো। পর্যাপ্ত পরিমাণে মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা এবং সঠিক চিকিৎসা ও সেবার ব্যবস্থা করার বিষয়েও জোর দিতে হবে। মোটকথা, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে বেশি বেশি। এর সুফলও মিলবে হাতে হাতে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়