বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৫, ১০:০২

স্থায়ী ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন অনেক দূর এগিয়ে ॥ জেলা প্রশাসক বললেন, বন্ধ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ বন্ধ হওয়ার গুঞ্জন স্রেফ গুজব এবং হাস্যকর

ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান, ৭ হাজার স্কয়ার ফুটের নতুন ফ্লোর নেয়া হয়েছে একাডেমিক কার্যক্রমের জন্যে

এএইচএম আহসান উল্লাহ
চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ বন্ধ হওয়ার গুঞ্জন স্রেফ গুজব এবং হাস্যকর

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকার পরও কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা এবং সরকারের সদিচ্ছায় কলেজটির শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। এরই মধ্যে এই কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস পাস করে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ইন্টার্নি করছে। কলেজের শ্রেণি কক্ষ এবং ল্যারেটরির যে সংকট ছিলো তাও আগামী এক মাসের মধ্যে ঘুচবে বলে আশা করা হচ্ছে। চাঁদপুর পৌরসভার একটি মার্কেটে ৭ হাজার স্কয়ার ফুটের নতুন ফ্লোর নেয়া হয়েছে মেডিকেল কলেজের জন্যে। সেখানে একাডেমিক কার্যক্রমের অবকাশ নির্মাণ করা হবে। এই ফ্লোরে তিনটি ল্যাব স্থাপন এবং শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হবে। বর্তমানে যেখানে কার্যক্রম চলছে, সেটাও থাকবে। নতুন একাডেমিক স্পেসে কার্যক্রম শুরু হলে তখন আর শ্রেণি কক্ষ সংকট এবং ল্যাব সংকট থাকবে না। এসব তথ্য জানালেন চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেলা নাজনীন এবং কলেজের উপাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক মো. হারুন-অর-রশিদ।

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের প্রেক্ষিতে এটি বন্ধ হয়ে যাবে বলে যে গুঞ্জন চলছে তা নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে নেমে জানা গেলো প্রচারিত সংবাদগুলো ভিত্তিহীন এবং বন্ধ হওয়ার গুঞ্জন স্রেফ গুজব।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। এখন মাঠ পর্যায়ে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নানা কাজ চলছে। ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত যৌথ তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে। তবে কাজের গতি আরো বাড়ানো হলে চলতি বছরেই ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এটাই হচ্ছে স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্যে মূল কাজ।

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালে। ওই বছরের ১০ জানুয়ারি আড়াই শ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের চতুর্থ তলার একটি অংশে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনি সেদিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই মেডিকেল কলেজের আনুষ্ঠানিক পথচলা উদ্বোধন করেন। পঞ্চাশ আসন নিয়ে কলেজটির যাত্রা শুরু হয়। ইতোমধ্যে কলেজের প্রথম ব্যাচ এমবিবিএস পাস করে এখন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে ইন্টার্নি করছে।

এদিকে এই মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্যে চাঁদপুর শহরের আশেপাশে জায়গা দেখা হয় শুরু থেকেই। অনেক বাধা-বিপত্তি ও ষড়যন্ত্র পেরিয়ে অবশেষে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কের পাশে গাছতলা এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্যে জায়গা চূড়ান্ত হয়। মেডিকেল কলেজের জন্যে ৩০.১২ একর ভূমি এখানে অধিগ্রহণের জন্যে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পায়। এরই মধ্যে ২০২৩ সালে গাছতলা এলাকায় চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসের বরাদ্দ একনেকে অনুমোদন লাভ করে। বরাদ্দ হয় ১৩শ’ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

মূলত একনেকে অনুমোদন লাভের পর থেকেই শুরু হয় ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া। ৩০.১২ একর ভূমি গাছতলা এবং চরমেয়াশা মৌজায় স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্যে নির্ধারণ করে সেখানকার ভূমির মালিকদের চিঠি দেয়া হয় তাদের ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে। এসব তথ্য জানা গেলো চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও মেডিকেল কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং কলেজ নির্মাণ প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর ডা. মো. হারুন-অর-রশিদ থেকে। তিনি জানান, বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্যের জন্যে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে জানা যায়, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্যে ৩০.১২ একর জায়গা গাছতলা এবং চরমেয়াশা মৌজায় চূড়ান্ত হয়। বর্তমানে যৌথ তদন্ত কাজ চলছে। যৌথ তদন্তের বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে বলা হয়, যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে তাদের থেকে প্রাপ্ত দলিল এবং জমির অবস্থান সংক্রান্ত বিবরণের সঠিকতা যাচাইয়ে সরজমিনে তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে বরাদ্দ কমিটির একাধিক সভাও হয়েছে। যেই কমিটির সভাপতি হচ্ছেন জেলা প্রশাসক।

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা গুঞ্জন বিষয়ে কথা হয় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনের সাথে। তিনি চাঁদপুরবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণ কাজ চলমান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেখানে সরকারিভাবে অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়ে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস পাস করে তারা ইন্টার্নি করছে, সেই মেডিকেল কলেজ বন্ধ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। বরং এটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের কাজ চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে আরো কথা হয় মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেলা নাজনীন এবং কলেজের উপাধ্যক্ষ ও প্রজেক্টের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. মো. হারুন-অর-রশিদের সাথে। তাঁরা জানান, এই কলেজের জন্যে আমরা গত বছরের জুলাই মাসে চাঁদপুর পৌরসভার একটি মার্কেটের ৪র্থ ফ্লোর নিয়ে নিয়েছি। আগামী এপ্রিল/মে মাসে নতুন এই ভবনে কার্যক্রম শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি। সেখানে আমাদের মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবনের কার্যক্রম চলবে। বর্তমানে যেটা আছে সেটাও থাকবে। ৭ হাজার স্কয়ার ফুটের নতুন ভবনে তিনটি ল্যাব স্থাপন এবং শ্রেণি কার্যক্রম চলবে। তখন আর আমাদের কক্ষ সংকট থাকবে না। নতুন একাডেমিক ভবনটি হচ্ছে পালবাজারের সামনে যে পৌর মার্কেটটি রয়েছে সেটির চতুর্থ ফ্লোর। এই মার্কেটের তৃতীয় ফ্লোর নেয়ারও চিন্তা ভাবনা চলছে।

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মানের বিষয়ে বিভিন্ন মহলের নেতিবাচক মন্তব্যের ব্যাপারে অধ্যক্ষ বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলবো, অনেক প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ থেকে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের মান অনেক ভালো। আমাদের এখান থেকে এমবিবিএস পাস করার পর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা যে ইন্টার্নি করার সুযোগ পাচ্ছে, অনেক প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে তা মোটেই নেই। আমাদের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা প্রতিদিন গড়ে ২৮জন করে রোগী দেখছে। অনেক প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এর ধারেকাছেও নেই। আমাদের এটা সরকারি মেডিকেল কলেজ। এখানে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে ৭৮ নাম্বার পেয়ে। আর অনেক প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ আছে যেখানে ৪০ নাম্বার পেয়েও ভর্তি হয়। তাহলে মানের বিবেচনায় কারা ভালো?

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের হোস্টেল হচ্ছে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের একটি ভবনে এবং চাঁদপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটে। শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন, যেনো দ্রুত তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস আলোর মুখ দেখে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়