বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   সৌদি প্রবাসীদের অনলাইন প্রতারণা থেকে সতর্ক করলো বাংলাদেশ দূতাবাস
  •   বরিশালে কৃষক দলের হামলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির কর্মসূচি পণ্ড
  •   শ্রীনগরে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন
  •   গুমের ভয়াবহ চিত্র: তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য
  •   চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ লেখা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেপ্তা

প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩০

প্যারালাইসিসের কারণ ও প্রতিকার

ডা. পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
প্যারালাইসিসের কারণ ও প্রতিকার

প্যারালাইসিস মানে হলো দেহের কোন অঙ্গ বা মাংসপেশিতে স্নায়বিক দুর্বলতার কারণে তার সঞ্চালন ক্ষমতা আংশিক হ্রাস পাওয়া বা সম্পূর্ণ রহিত হওয়া। প্যারালাইসিসের প্যারা শব্দের অর্থ হলো দুর্বলতা। লাইসিস মানে হলো বিশ্লিষ্ট হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ প্যারালাইসিস মানে হলো কোন মাংসপেশি দুর্বলতায় ভেঙে পড়া। আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে দু ধরনের স্নায়ুকোষ থাকে। এক ধরনের স্নায়ু কোষ হলো দেহের প্রান্তীয় অঞ্চল থেকে মস্তিষ্কে বা কেন্দ্রে সংবেদন বা বোধ বহন করে নিয়ে যায়। আরেক ধরনের স্নায়ুকোষ আছে যারা মস্তিষ্ক হতে ঐ প্রান্তীয় অঞ্চলে করণীয় সম্পর্কে সেই সংবেদনের জবাবে আজ্ঞা বা সিদ্ধান্ত বহন করে আনে। যে সমস্ত মাংসপেশিতে এই আজ্ঞাবাহী স্নায়ু দুর্বল হয়ে যায়, তাদের সঞ্চালন ক্ষমতা কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়। মূলত এটাই হলো মাংসপেশির প্যারালাইসিস যা সংশ্লিষ্ট অঙ্গকে আংশিক বা পূর্ণভাবে অনড় বা অক্ষম করে তোলে। প্যারালাইসিসে আক্রান্ত মাংসপেশির সংবেদনশীলতাও কমে যায়। অর্থাৎ তাদের বোধশক্তিও কমে যায় এবং তারা জড় ও বিবশ হয়ে যায়। কখনও কখনও কোন অঙ্গের অংশবিশেষ, কখনও পুরো অঙ্গ আর কখনওবা দেহের অর্ধেক অংশ পুরোটাই প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে যায়। প্যারালাইসিসের সাথে যদি কোন মাংসপেশি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাঁপতে থাকে তখন তাকে পলসি (চধষংু) বলে। প্যারালাইসিস পক্ষাঘাত বা অর্ধাঙ্গ ব্যারাম নামেও পরিচিত।

প্যারালাইসিসের কারণ

* স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি হওয়া

* ব্রেন স্ট্রোক

* দুর্ঘটনায় স্নায়ু আহত হওয়া

* পোলিও মায়েলাইটিস

* মস্তিষ্কের পলসি

* প্রান্তীয় স্নায়ুর দুর্বলতা

* পার্কিনসনের রোগ

* বটুলিজম

* নিউরাল টিউবের খুঁত থাকা (স্পাইনা বাইফিডা)

* মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস

* গিলেইন ব্যারে সিন্ড্রোম ( জিবিএস)

* নিদ্রাজনিত প্যারালাইসিস

* ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা : ডায়রিয়া, তীব্র বমি, ডিহাইড্রেশন ইত্যাদি।

* হিস্টিরিয়া বা কনভার্সন ডিজঅর্ডার

* ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া

* হাইপোগ্লাইসেমিয়া

* স্যাটারডে নাইট সিন্ড্রোম

প্যারালাইসিসের ধরন

১. কোনো একটা স্থানে নির্দিষ্ট : মুখমণ্ডল, হাত, পা বা স্বরযন্ত্র

২. সারাদেহে বিস্তৃত :

ক. ডিপ্লেজিয়া : দেহের উভয় পাশে একই স্থান আক্রান্ত হয়। যেমন : উভয় বাহু, উভয় পা, মুখের উভয় পাশের মাংসপেশি ইত্যাদি।

খ. হেমিপ্লেজিয়া বা হেমিপ্যারেসিস : দেহের এক পাশ সম্পূর্ণ প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হওয়া

গ. মনোপ্লেজিয়া : কেবল একটি অঙ্গ (একটি পা বা হাত প্যারালাইসিস হওয়া)

ঘ. প্যারাপ্লেজিয়া : উভয় পা প্যারালাইসিস হওয়া

ঙ. কোয়াড্রিপ্লেজিয়া বা টেট্রাপ্লেজিয়া : দুই পা এবং দুই হাত একসাথে প্যারালাইজড্ হওয়া

প্রয়োজনীয় পরীক্ষণ

* আক্রান্ত অংশের এক্স-রে

* ব্রেনের সিটি ক্যান বা এমআরআই

* মায়েলোগ্রাম : যাতে স্নায়ু বা স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি বুঝা যায়

* ইলেক্ট্রোমায়েলোগ্রাম : যাতে স্নায়ু ও পেশির তড়িৎ সঞ্চালনা বুঝা যায়

* লাম্বার পাঙ্কচার বা স্পাইনাল ট্যাপ : সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড ( যে তরলে মস্তিষ্ক ভাসমান থাকে) অধ্যয়ন ও মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, জীবাণু সংক্রমণ এবং প্রদাহ নিরূপণ।

চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা

* যথাযথ পরিচর্যা নিশ্চিত করা

* ফিজিওথেরাপী প্রদান

* প্যারালাইসিসের অন্তর্গত কারণ অনুসন্ধান ও চিকিৎসা ( উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ রক্ত-শর্করা, উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা)

* উপযুক্ত পুষ্টি নিশ্চিতকরণ

* ডিহাইড্রেশন সংশোধন করা

* ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতাকে সংশোধন করা

প্যারালাইসিসের জটিলতা

* আক্রান্ত অঙ্গ অব্যবহারজনিত কারণে শুকিয়ে যায়

* বিছানায় শয্যাশায়ী হওয়ার কারণে বেড সোর বা ঘা হয়ে যায়

* বিছানায় মল-মূত্র ত্যাগ করতে হয়

* একজন সাহায্যকারী প্রয়োজন হয়

* চলাফেরা করতে না পারার কারণে হৃদরোগ দেখা দেয়।

* সংসারজীবন অচল হয়ে যায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়