প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২১, ২২:০০
চাঁদপুরে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু : স্বজনদের আহাজারি (দেখুন : ভিডিও ক্লিপ)
চাঁদপুরে চাহিদার অর্ধেক অক্সিজেন সরবরাহ থাকায় অক্সিজেন নিয়ে চলছে হাহাকার। ২৫০ শয্যার চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রোগীর স্বজনদের মধ্যে চলছে টানাহেঁচড়া। রোগীর চাপে করোনার চিকিৎসায় হিমশিম অবস্থা। গতকাল বুধবার রাত ১০টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১১ জন রোগীর মৃত্যু ঘটেছে।
|আরো খবর
করোনায় আক্রান্ত জটিল রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হন অক্সিজেনের জন্য, আর সেই অক্সিজেন নিয়েই চলছে হাহাকার। সেই সাথে অস্বাভাবিক হারে রোগী বেড়ে যাওয়ায় রোগীর স্বজনদের পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
একাধিক রোগীর স্বজনরা জানান, মূলত: অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে তারা রোগী নিয়ে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে আসেন। বেড কিংবা ফ্লোরে জায়গা পেলেও অক্সিজেন পাওয়া যেন ভাগ্যের ব্যাপার। ভর্তি হওয়ার চার/পাঁচ ঘণ্টা পরও একটু অক্সিজেন পাওয়া যায় না । দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে দেখা মিলছে না অক্সিজেন সিলিন্ডারের।
হাসপাতালের স্টাফরা জানান, এক বা একাধিক অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে তারা করোনা ওয়ার্ডে প্রবেশ করলে রোগীর স্বজনরা সেসব সিলিন্ডার নিয়ে কাড়াকাড়ি ও টানাহেঁচড়া শুরু করেন।এনিয়ে স্বজনদের মধ্যে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় উৎকণ্ঠা ও অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। আর এ কারণেই অক্সিজেন সাপোর্ট না পেয়ে গত কয়েকদিনে এখানে কয়েকজন রোগী মৃত্যু হয়েছে।
তীব্র অক্সিজেন সংকটের কথা স্বীকার করে সদর হাসপাতালের করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল জানান, মাত্রাতিরিক্ত রোগী বেড়ে যাওয়ায় এবং ভর্তিকৃত প্রায় সবার অক্সিজেন প্রয়োজন হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া দূরহ হয়ে পড়েছে। গত তিন চার দিনে এমন জটিল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চাহিদার অর্ধেক অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে না । তাই সব রোগীকে অক্সিজেন সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না । তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০০ লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন। সেখানে বুধবার আবুল খায়ের গ্রুপ থেকে ১১০ লিটার এবং কুমিল্লা থেকে সরকারিভাবে ৬০ লিটার অক্সিজেন পাওয়া গেছে। চেষ্টা তদবির করেও বেশি মাত্রায় অক্সিজেন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে অন্যান্য জেলার চেয়ে আমরা বেশি অক্সিজেন পেলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
চাঁদপুর সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, মাত্র ৩০ বেডে হাই ফ্লো অক্সিজেন সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি বেডের অক্সিজেন সার্ভিস বিকল। অক্সিজেন কনসেনটেটর মেশিন আছে ২৪ টি। অক্সিজেন সিলিন্ডার ১৮০টি । কিন্তু মিটার আছে মাত্র ৬০টি। অথচ বুধবার বেলা ৩টা পর্যন্ত একদিনে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন ১৬১ জন।
ইউনিসেফ এর উদ্যোগে চাঁদপুর সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বসানো লিকুইড অক্সিজেন প্লান চালু হলে অক্সিজেন সংকটের সমাধান সম্ভব বলে জানান সংশ্লিষ্টরা । তারা আশা প্রকাশ করছেন আগামী সপ্তাহেই এ প্লান চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সকল সিভিল সার্জন ডাক্তার মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, চাঁদপুরের করোনা পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী। এ পর্যন্ত আমরা এক লক্ষ ৪০ হাজার মানুষকে টিকা দিতে সক্ষম হয়েছে। টিকাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।