রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল হোক
অনলাইন ডেস্ক

আমরা এখন এক বিশেষ সময় অতিক্রম করছি। যার সাথে আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি এবং জীবন-জীবিকার একটি অংশ জড়িত। আমার এ লেখার সফলতা আসবে যদি এর মাধ্যমে একজন মানুষও সচেতন করা যায়। রূপালি ঝিলিক। জাদুকরী স্বাদ। নাম তার ইলিশ। সোনালি আভায় ছড়ানো ইলিশ। রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক উপঢৌকনে এ মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ইলিশ আমাদের ভৌগলিক নির্দেশক। ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ এবং জাতীয় সম্পদ। এর মাধ্যমে অর্জিত হয় বৈদেশিক মুদ্রা। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমরা বলতে পারি ইলিশের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক এবং ইলিশ একটি অতি উপাদেয় ও পুষ্টিকর খাদ্য। ইলিশ পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই ইলিশ রক্ষার দায়িত্ব আমার, আপনার সবার।

আমাদের সফলতার প্রতীকের নাম ইলিশ। ইলিশ এখন দেশের গ-ির বাইরে গিয়েও পররাষ্ট্র নীতিতেও ভূমিকা রাখছে। একটি মা ইলিশ প্রায় ২৩ লাখ ডিম ছাড়ে। প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশকে রক্ষা করতে না পারলে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে আমাদের অর্থনীতির ওপর। আমাদের জীবনযাপনের ওপর। আমদের মৎস্য সম্পদের ওপর। আমাদের খাদ্যের ওপর। মৎস্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ফিস’ ২০২০-এর তথ্য অনুযায়ী বিশে^র মোট ইলিশের ৮৬ ভাগ ইলিশ বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। পলিবিধৌত মহিসোপানকে বলা হয় ইলিশের শ্রেষ্ঠ চারণভূমি। ভৌগলিক অর্থনীতিতে শুধু নয়, জাতীয় অর্থনীতিতেও একটি সম্ভাবনাময় ইলিশ সম্পদ। পৃথিবীর বিখ্যাত বাংলাদেশের ইলিশের চাহিদাও বিশ্বব্যাপী। বিশেষ করে চাঁদপুরের ইলিশের স্বাদ ও খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তাই চাঁদপুরকে বলা হয় ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর।

আমাদের ভৌগলিক টিকিয়ে রাখতে হলে মা ইলিশ রক্ষার কোনো বিকল্প নাই। চলছে মা ইলিশ রক্ষার অভিযান। ইলিশ প্রজনন মৌসুম ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষার অভিযান শুরু হয়েছে। আমরা মা ইলিশ রক্ষার এ অভিযানের সফলতা কামনা করি। ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ মাছ ধরা, বিক্রি ও মজুত নিষিদ্ধি করেছে সরকার। রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রের জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে মা ইলিশ রক্ষা করার অভিযানকে সফল করতে হবে যে কোনো মূল্যে।

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা থাকলেও কিছু অসাধু ব্যক্তির অতিমাত্রার লোভের কারণে গত কয়েক বছর যাবৎ এ পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। কিছু অসাধু জেলে নামধারী জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ নিধন করে চলছে।

পৃথিবীর সুস্বাদু মাছের মধ্যে ইলিশ অন্যতম। পৃথিবীর মোট উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি ইলিশ আমাদের দেশে উৎপাদন হয়। ইলিশ বাস করে সমুদ্রে এবং নদীতে। কিন্তু ডিম পাড়ে নদীতে এবং ডিম পাড়ার জন্যে ঝাঁকে ঝাঁকে সমুদ্র থেকে নদীতে চলে আসে। অর্থাৎ মিঠা পানিতে এবং মিঠা পানিতেই বাচ্চা ফুটে। নদী এবং নদীর মোহনা হলো ইলিশের প্রাকৃতিক হ্যাচারি। পদ্মা-মেঘনা-যমুনাকে বলা হয় ইলিশের আঁতুরঘর। আমাদের নদীগুলো ইলিশের ডিম ছাড়ার জন্যে যথেষ্ট উপযুক্ত। আমাদের নদীগুলো মা ইলিশের বাপের বাড়ি। সন্তান প্রসবের জন্যে বাপের বাড়ি যেমন একজন মায়ের জন্যে নিরাপদ ঠিক তেমনি ডিম ছড়ার জন্যে এবং বাচ্চা ফুটানোর জন্যে নিরাপদ আমাদের নদীগুলো। তাই ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি কারর জন্যে নিষেধাঙ্গা চলাকালে ইলিশ ধরা যাবে না।

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই একটা নির্দিষ্ট সময়ে সমুদ্রে এবং নদী মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। ইলিশ মাছ দেশের মোট উৎপাদনের শতকরা ১২ ভাগ দখল করে আছে। জাতীয় রপ্তানি খাতে এই খাতের আয় শতকরা চার ভাগ। কিন্তু নির্বিচারে মা ইলিশ এবং জাটকা আহরন ও নিধনের ফলে এর উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সে কারণে মৎস্য সংরক্ষণ আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন, ইলিশের অভয়াশ্রম নির্ধারণ ও তা কার্যকরকরণ প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ আহরণ বন্ধ রাখা ও জাটকা নিধন বন্ধকরণ কর্মসূচিকে জোরদার করতে হবে। আমাদের খাদ্য তালিকায় প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৫৮ ভাগ আসে মাছ থেকে। প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি দূর করতে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। আমাদের অর্থনৈতিকক উন্নয়নে, কর্মসংস্থানে, দারিদ্র্য মোচনে এবং প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি দূরীকরণে মৎস্য খাতের উন্নয়ন নিতান্ত অপরিহার্য।

বিগত বছরগুলোতে গণমাধ্যমসূত্রে আমরা দেখেছি, মা ইলিশ রক্ষার অভিযান চলাকালে জেলেদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হলেও কিছু অসাধু এবং অতিলোভী জেলে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মা ইলিশ নিধনে মেতে উঠে। এভাবে ইলিশ নিধন করতে থাকলে আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশের অস্তিত্বের সংকটের মুখে পড়বে এবং ইলিশ হয়ে পড়বে দুঃষ্প্রাপ্য।

ইলিশের যেমন আছে পুষ্টিগুণ তেমনি আছে অর্থনৈতিক গুরুত্ব। ইলিশেল মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে দেশের এক শতাংশ মানুষ এবং জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইলিশকে বলা হয় আমাদের দেশের সিলভার গোল্ড। ইলিশ রক্ষা করতে না পারলে আমাদের পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও বেড়ে যাবে। অর্থনীতিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। মা ইলিশ রক্ষা করতে পারলে সাধারণ জনগণের এবং রাষ্ট্রের যা না লাভ তার অনেক অনেক গুণ বেশি লাভ আমাদের দেশের জেলেদের। মা ইলিশ রক্ষার পাশাপাশি ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে নদীতে জেগে ওঠা ডুবোচর ও ভাসমান চরগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে খনন করতে হবে। আর এতে শুধু ইলিশ উৎপাদনই বৃদ্ধি পাবে না রোধ হবে নদী ভাঙ্গনও।

ইলিশ অনেক দ্রুতগতিসম্পন্ন মাছ। এরা সমুদ্র এবং নদীতে দলবেঁধে চলে। এরা যেই গতিতে সামনে যায় এবং চলার পথে বাধা পেলে তার চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে পেছনের দিকে ছুটে চলে। তাই ডুবোচর এবং ভাসমান চরের কারণে নদীতে ইলিশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে পক্ষান্তরে মিয়ানমারে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নদী দূষণ এবং নদী দখল ইলিশসহ মিঠা পানির অন্যান্য মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিও ক্ষেত্রে বড় বাধা। ইলিশসহ মিঠা পানির অন্যান্য মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে কর্তৃপক্ষকে নদী দূষণ রোধ এবং নদীকে দখলমুক্ত রাখতে হবে। মা ইলিশ রক্ষার অভিযানকে সফল করতে হলে প্রশাসনের নজরদারী বৃদ্ধি করতে হবে। ইলিশ রক্ষায় গৃহীত পদক্ষেপের কঠোরহস্তে সফল বাস্তবায়ন করতে হবে। অভিযানে কেউ যেনো কোনো প্রকার সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে সেইদিকে প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদেরকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের সেনাবাহিনীকেও ইলিশ রক্ষার অভিযানকে সফল করার জন্যে কাজে নিয়োজিত করা যেতে পারে। মা ইলিশ রক্ষার উপকারিতা মিডিয়ার মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে তুলে ধরতে হবে। এই অভিযানকে সফল করার জন্যে প্রশাসনের পাশাপাশি সচেতন নাগরিককেও এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনের যথাযথ দায়িত্ব পালন এবং জনসচেতনতাই পারে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানকে সফল করে তুলতে। নিষিদ্ধ সময়ে যারা জেলেদেরকে মা ইলিশ ধরার কাজে উৎসাহিত করে তারা দেশ ও জাতির জাতীয় শত্রু। তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে প্রশাসনের কোনো রকম অবহেলা পরিলক্ষিত হলে তাকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। নিষিদ্ধ সময়ে কোনো জেলে মাছ ধরলে তার জেলেকার্ড বাতিলসহ ন্যূনতম ১০ বছরের জামিন অযোগ্য সশ্রম কারাদ- দিতে হবে। টকশো, বিজ্ঞাপন চিত্রের মাধ্যমে এবং সামাজিক সচেতনার মাধ্যমে মানুষের নেতিবাচক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারলে মা ইলিশ রক্ষা করা সম্ভব হবে। আইনের সঠিক প্রয়োগ যেমন থাকতে হবে তেমনি থাকতে হবে সচতেনতামূলক কার্যক্রম। এই দুই সমান গতিতে চললেই রক্ষা পাবে পৃথিবী বিখ্যাত চাঁদপুরের ইলিশ এবং বাড়বে রপ্তানি আয়।

মা ইলিশ রক্ষা করতে হলে প্রতিটি মোহনায় নৌ-বাহিনী র‌্যাব ও বিজিপি টহল নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি বলে আমরা মনে করি। যে কোনো মূল্যে মা ইলিশ এবং ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষার অভিযানকে সফল করে তুলতে হবে। অপরাধীরা সংখ্যায় কম হয়েও আমাদের উপর কর্তৃত্ব করে যাচ্ছে যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

আমরা আশা করি, মা ইলিশ রক্ষার অভিযান সফল হবে। তা যতোই কঠোর ও কঠিনই হোক। অভিযান ব্যর্থ হলে তা আমাদের পরাজয়। আমরা আমাদের পরাজয় চাই না। তাই মা ইলিশ রক্ষার বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়