প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
শেখ হাসিনার স্বপ্নের বাংলাদেশ
বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ এই শব্দ তিনটি একইসূত্রে গাঁথা। প্রতিটি শব্দই একে অপরের পরিপূরক। একটিকে বাদ দিয়ে অপরটি কল্পনাও করা যায় না। বঙ্গবন্ধুর জাতিগত পরিচয়, জীবন, কর্মপরিধি ও দেশাত্মবোধ এতোই গভীরে প্রোথিত যে, আমার মতো একজন নগণ্য মানুষের পক্ষে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও শতাব্দীর মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু বলা সত্যিই দুরূহ কাজ।
গণতন্ত্রের মানসকন্যা, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্রমাগত উন্নয়ন, বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল, স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের পথে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের প্রেরণা ও আমাদের বিশ্বাস।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে পরোক্ষভাবে এবং ২৬ মার্চ প্রত্যক্ষভাবে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। তাই তিনি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। তাঁরই আহ্বানে ও নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে এবং ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয়ের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্র জন্ম নেয়। বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি জাতীয় পতাকা এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ দিয়েছেন। সে মূল্যায়নে তিনি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি। তিনি এ দেশের মুক্তির লক্ষ্যে তাঁর জীবনের এক চতুর্থাংশেরও বেশি সোনালি সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের স্মরণীয় অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ এর সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নাম একই সূত্রে গাঁথা। তাই বঙ্গবন্ধু মানেই সোনার বাংলা এবং স্বপ্নের বাংলাদেশ।
১৯৭১ সালের পহেলা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময়টি ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে ঘটনাবহুল অধ্যায়। এর মধ্যে ৭ মার্চের ভাষণ জাতিকে নতুন পথ দেখায়। কোনো প্রকার কাগজী সহায়তা ছাড়া আঠারো মিনিটের যে বক্তৃতা তিনি করলেন, তা রীতিমত যুদ্ধের অপারেশন অর্ডার। যেন আজ তিনি এক গেরিলা যুদ্ধের অভিজ্ঞ সেনাপতি হিসেবে আবির্র্ভূত হয়েছেন। বক্তৃতার প্রতিটি শব্দ, বাক্য, কণ্ঠের উত্থান-পতন সবই ছিল চুম্বকের ন্যায়, আকর্ষণীয় মন্ত্রমুগ্ধকর এবং সর্বোপরি সময়োপযোগী। শাসক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র নিয়ে শঙ্কিত শেখ মুজিব বলেন, ‘‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল... আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, রাস্তা-ঘাট যা কিছু আছে, তোমরা সব বন্ধ করে দেবে... এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’’ বঙ্গবন্ধু তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে সাড়ে সাত কোটি মানুষকে সবুজ সংকেত দিয়ে দিলেন।
যুগে যুগে অসংখ্য দেশপ্রেমিক বিপ্লবী ও নেতার জন্ম হয়েছিল এই দেশে: কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানই কেবল হেমিলনের বংশীবাদকের ন্যায় এই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে যে মোহনায় নিয়ে এসেছিলেন, সেখানেই সাক্ষাৎ হয়েছিল স্বাধীনতার। জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। অতএব সৃষ্টিকর্তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাঙালিদের মুক্ত করতে এই বাংলায় প্রেরণের জন্যে। এই দেশের যে কোনো কঠিন পরিস্থিতির জন্য বারবার যেন জন্ম হয় শেখ মুজিবুর রহমানের। অন্নদা শংকর রায়ের ভাষায় বলতে ইচ্ছে হয়--
‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’
স্বাধীনতা লাভের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে বাংলাদেশকে তুলে আনতে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে নিরলস পরিশ্রম করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। ক্ষুধা, দুর্নীতি, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক স্বনির্ভর এক উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেন তিনি। প্রবর্তন করে ছিলেন ‘সবুজ বিপ্লব’ কর্মসূচি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের মদদপুষ্ট কতিপয় উচ্চাভিলাষী, পথভ্রষ্ট সামরিক কর্মকর্তার নির্মম হত্যাযজ্ঞের মধ্যদিয়ে তাঁর সে অগ্রযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ পথ হারিয়ে এক অনিশ্চিত গন্তব্যে চলতে শুরু করে। স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি রাজাকাররা আবার পুনর্বাসিত হয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয় এবং স্বৈরাচার ও সামরিক জান্তার কবলে পড়ে দীর্ঘ একুশ বছর বাংলাদেশ এক অনিশ্চিত গন্তব্যে নিমজ্জিত হয়।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শেখ হাসিনার জীবনে যে দুঃসহ বেদনা এনে দিয়েছে, এই শোক তাঁকে শক্তিশালী ও দায়িত্বশীল করেছে দেশের মানুষের জন্যে কাজ করে যেতে। সেই বেদনাকে সঙ্গী করে দেশী-বিদেশী সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে তিনি তাঁর পিতার অসমাপ্ত কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি, আজ তাঁরই সুযেগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন বিশ্বদরবারে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। স্বপ্নবাজ নেতা হিসেবে তিনি আমাদের একের পর এক স্বপ্ন দেখিয়ে যাচ্ছেন এবং তার সফল বাস্তবায়নও করে দেখাচ্ছেন। তাঁরই সুযোগ্য নেতৃত্বে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রা ও উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে গড়ে উঠছে অসম্প্রাদায়িক, আত্মনির্ভরশীল ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ। তার ২১ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তা প্রশংসনীয়। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটির সমন্বয়ে ২০৪১ সালে আমরা পাব একটি স্শ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ। আগামীতে আত্মজার হাতে পিতা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স¦প্ন সফল হবে, ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়নের পর জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিকরা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াবে-এই বিশ্বাস আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবে।
লেখক : মোঃ আনোয়ার হাবিব কাজল, সাংবাদিক ও কলামিস্ট, সম্মানিত সদস্য, চাঁদপুর প্রেস ক্লাব।