বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

রমজানের শিক্ষা

সুধীর বরণ মাঝি
রমজানের শিক্ষা

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। এই পৃথিবী যতকাল থাকবে ততকালই রমজান মাস আসবে মানুষের কল্যাণের জন্য। রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস। যারা গুনাহগার ও পাপীবান্দা তাদের জন্য রমজান মাস একটি সুযোগ নিয়ে আসে, তাদের সমস্ত পাপ ও গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। মানুষ হিসেবে সেই সুযোগটির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। শুধু রোজা রাখলেই এই পাপ ও গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে ওয়াদা বন্দিগি করতে হবে এবং তওবা করতে হবে সে পূর্বের মতো আর কোন অন্যায়-অত্যাচার করবো না, মিথ্যা বলবো না কিংবা কোন প্রকার খারাপ কাজের সাথে যুক্ত থাকবো না। তাহলেই আল্লাহ তার পূর্বের সকল পাপ ও গুনাহ মাফ করবেন। পবিত্র হাদিসে বলা আছে, যে মুমিনবান্দা রমজান মাসে দিনে রোজা রেখেছে এবং বেশি বেশি এবাদত করেছে, আল্লাহ সেই ব্যক্তির অতীত এবং ভবিষ্যতের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন।

রোজা আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সংযম ও বিরত থাকা। আর এই সংযম হচ্ছে সকল প্রকার অনৈতিক ও নীতিবাচক কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার সংগ্রাম। আর এ সংগ্রাম ছাড়া মানুষের চরিত্র গঠন হয় না। রোজা বলতে শুধুমাত্র দিনের বেলা না খেয়ে থাকাকে বুঝায় না। দিনের বেলা না খেয়ে থাকার নাম রোজ নয়। এটাকে বরং উপবাস এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অনাহারী বলা যেতে পারে। প্রকৃত অর্থে রোজার অর্থ হলো একজন রোজাদার সকল প্রকার অন্যায় ও পাপাচার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবেন। যে শুধু দিনের বেলা না খেয়ে থাকল কিন্তু মিথ্যা কথা বলল, অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করলো, ওজনে কম দিল, মানুষের অধিকার কেড়ে নিল, মানুষের সাথে প্রতারণা করলো, মানুষের সাথে অন্যায়-অবিচার করলো, উৎকোচ প্রদান ও গ্রহণ করলো, খাদ্যে ভেজাল দিল, খাদ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অধিক মুনাফা করলো, মদ্য পান, জুয়া, খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ ইত্যাদি গর্হিত অপরাধ ও অশ্লীলতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারলো না, সমাজ ও জাতীয় জীবনে আইনশৃঙ্খলা ও শান্তি ভঙ্গ করলো এবং এমনিভাবে আল্লাহর আদেশ অমান্য করতে থাকলো, সেই মানুষ দিনের বেলা না খেয়ে থাকা আর রাতে খতম তারবিহ্ নামাজে শরিক হওয়া আল্লাহর দৃষ্টিতে নিরর্থক।

না খেয়ে থাকলাম, নামাজ পড়লাম আর সুযোগ পেলেই খাদ্যে ভেজাল দিলাম, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মূল্যবৃদ্ধি করে অধিক মুনাফা করলাম এতে রোজার সাওয়াব পওয়া যায় না। একটি হাদিসে বলা হয়েছে, রোজা রাখলো অথচ মিথ্যাচার ও অন্যান্য পাপাচার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারল না, আল্লাহর কাছে এই রোজার প্রয়োজন নেই। রমজান মাস যে উদ্দেশ্যে প্রতি বছর মুসলিম জাহানের সামনে আবির্ভূত হয়, আমরা এ দেশে নিজেদেরকে যারা মুসলমান বলে দাবি করি, পেরেছি কি আমরা সেই উদ্দেশ্য অর্জন করতে এবং সংযম ও সহিষ্ণুতার অনুশীলন করতে? পেরেছি কি আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত লাভ করতে?

আমরা বিশ্বের দরিদ্রতম দেশ। আমাদের দেশে এখনো জাকাতের কাপড় এবং ইফতারসামগ্রী আনতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মরতে নিরীহ দরিদ্র মানুষকে। আমরা অনুন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যেও অন্যতম। দুর্নতির কারণে এদেশের জনগণ ও মুসলিম উম্মার মুক্তি, শান্তি, উন্নয়ন ও উন্নতি এদেশের জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। রমজান মাস যদি একজন দুর্নীতিবাজকে দুর্নীতি থেকে মুক্ত করতে না পারলো, একজন চোরকে চৌর্যবৃত্তি থেকে মুক্ত করতে না পারলো, একজন লম্পটকে চরিত্রবান মানুষ করতে না পারলো, একজন ব্যভিচারিকে ব্যভিচারমুক্ত করতে না পারলো, একজন অসৎ ব্যবসায়ীকে সৎব্যবসায়ী বানাতে না পারলো, একজন মদ্যপ ব্যক্তিকে মদ্যপান থেকে বিরত করতে না পারলো তাহলে আমাদেরকে এটা বলতে হবে যে, রমজান মাসকে আমরা ব্যক্তি ও সমাজজীবনে যে গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করার কথা ছিল তা করতে পারছি না। রমজান মাসের তাৎপর্য অনুধাবন না করে আমরা আমাদের ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে রমজান মাসকে একটি আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত করেছি। রমজানের শিক্ষা থেকে আমরা কেউ শিক্ষাগ্রহণ করি না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়