প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থান দেখতে এক সকালে হাজির হই কুমিল্লা। সারাদিন ঘুরে ঘুরে শহরময় দেখি কবির নানা স্মৃতিচিহ্ন। সঙ্গে ছিলেন অগ্রজ বন্ধু মতিন সৈকত।
কুমিল্লায় নজরুলের যেসব স্মৃতিবিজড়িত স্থান রয়েছে, এর মধ্যে ভিক্টোরিয়া কলেজের পাশে অবস্থিত রানীর দিঘি অন্যতম। এ দিঘির পাড়ে বসে কবি কবিতা লিখতেন, গান গাইতেন, করতেন কবিতা পাঠ, কিংবা লিখতেন প্রিয়তমাকে প্রেমের চিঠি। আর কলেজ পড়ুয়ারা গান বা কবিতা শুনতে কবির কাছে ভিড় জমাতেন। এভাবে বেশ আড্ডা জমত রোজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে। শুধু দিঘির পাড় নয়, কুমিল্লা শহরের অনেক স্থানেই ছড়িয়ে আছে নজরুলে স্মৃতি।
১৯২১ সালের এপ্রিলে নজরুল কুমিল্লায় প্রথম আসেন। ছিলেন ১৯২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কারও মতে ১৯২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ছিলেন। এ সময়ে নজরুল পাঁচবার কুমিল্লায় আসা-যাওয়া করেছেন। থেকেছেন গড়ে ১১ মাস। কুমিল্লায় থাকাকালীন নজরুল রানীর দিঘির পাড়ে অনেক সময় কাটিয়েছেন। ‘মাধবী লতা দোলে...’সহ আরও অনেক গান রচনা করেছেন এখানে বসেই। কবির স্মৃতি ধরে রাখতে এখানে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে।
শহরের কান্দির পাড়ে আছে বীর চন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন। এ পাঠাগারের মাঠে ১৯২২ সালে মার্চে গান্ধীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে নজরুলের নেতৃত্বে জনসভা ও মিছিল বের করা হয়।
নজরুল অ্যাভিনিউতে ছিল ইন্দ্র কুমার সেন গুপ্তের বাসা। নজরুল কুমিল্লায় এলে এ বাড়িতে উঠতেন। এখানে থাকাকালে ইন্দ্র কুমার সেনের ভাতৃজায়া গিরিবালা দেবীর একমাত্র কন্যা আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে দোলন ওরফে দুলীর সঙ্গে কবির প্রেম হয়। কবি তার নাম দেন প্রমীলা। ১৯২৪ সালের ২৫ এপ্রিল কলকাতার ৬নং হাজী লেনে তাদের বিয়ে হয়। প্রমীলাদের বাড়ির পাশেই ছিল বসন্ত কুমার মজুমদারের বাড়ি। কবি তার সঙ্গে সেখানেও আড্ডা দিতেন। এ অ্যাভিনিউতে ফরিদা বিদ্যানিকেতনের সামনে, বসন্ত কুমার মজুমদারের বাড়ির সামনেসহ কয়েকটি স্থানে নজরুলের স্মৃতিফলক রয়েছে।
ঝাউতলা রোডেও রয়েছে নজরুলে স্মৃতি। ১৯২২ সালে ২২ সেপ্টেম্বর ধূমকেতু পত্রিকার একবিংশ সংখ্যায় ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ শিরোনামে নজরুলের একটি কবিতা ছাপা হয়। এ কবিতার জন্য সরকার ধূমকেতুর সে সংখ্যাটি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে এবং কবিতাটির জন্য ২৩ নভেম্বর ঝাউতলা থেকেই পুলিশ নজরুলকে গ্রেপ্তার করে।
এসব ছাড়া শহরের বজ্রপুরের ইউসুফ স্কুল, দারোগাবাড়ি, মহেশাঙ্গন, মুরাদপুর জানুমিয়ার বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানেও রয়েছে নজরুলের অনেক স্মৃতি। স্মৃতিচিহ্নের পাশাপাশি কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে আছে চেতনায় নজরুল নামের ভাস্কর্য। আর ধর্মসাগর পাড়ে আছে নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে। সরকারি এ ইনস্টিটিউট নজরুল বিষয়ে কাজ করে থাকে।
নজরুলের স্মৃতি দেখতে হলে আসতে পারেন শহরের ধর্মসাগর পাড়ে। এখানে বিশাল এক দিঘি আছে। ত্রিপুরা রাজ্যের অধিপতি মহারাজা ধর্মমাণিক্য ১৪৫৮ সালে এ দিঘি খনন করেন পানীয় জলের সুবিধার জন্য। এ দিঘির পাশ দিয়ে বসার ও হাঁটার সুন্দর ব্যবস্থা আছে। দিঘিতে বেড়ানোর জন্য ভাড়ায় নৌকা পাওয়া যায়। দিঘির পাড়ে রেস্টুরেন্ট আছে। আর দিঘির পাশেই আছে কামাল উদ্দিন চৌধুরী শিশুপার্ক। এ পার্কের একটি ফলকে আল মাহমুদের কবিতার পঙ্ক্তি লেখা আছে- ‘এখানে সবুজ দিয়েছে বুক পেতে, গুল্মলতা আকাশে ওঠে মেতে, ছায়ারই নিচে তোমার কথা ভাবি, তুমিই বুঝি এই বাগানের চাবি।’ পার্কের পাশে আছে রানীরকুঠি বার্ড অতিথিশালা (ড. আখতার হামিদ খান স্মারক বাসগৃহ)।