বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

সংগঠন সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে কাজ করে
অনলাইন ডেস্ক

রাশেদা আক্তার। তিনি সামাজিক-মানবিক সংগঠন আপনের সভাপতি। সংগঠনের মূলমন্ত্র : ‘আমরা পর নই’। সংগঠনটি আত্মমানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। করোনাকালীন খাদ্য সহায়তাসহ অক্সিজেন সেবা প্রদান, টেলিমেডিসিন, মাস্ক, স্যানিটাইজার, পিপিই বিতরণ করে সংগঠনটি। এছাড়া রোজা ও ঈদে গরিব-দুস্থদের ইফতার, মাংস ও নূতন পোষাক বিতরণ করে থাকে।

সম্প্রতি তিনি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ‘সুচিন্তা’ বিভাগের মুখোমুখি হন। সাক্ষাৎকারটি আজ ছাপা হলো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?

রাশেদা আক্তার : আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি সামাজিক সংগঠনেও সক্রিয় আছেন। সংগঠন চর্চার গুরুত্ব সম্পর্কে বলুন।

রাশেদা আক্তার : মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সামাজিক কাজে আমাকে হয়তো কবুল করেছেন, তাইতো পারছি। এজন্যে আমি সবসময় মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। সংগঠন চর্চার গুরুত্ব অনেক। আসলে ছোটবেলা থেকেই আমি একটু নরম মনের মানুষ। শুধু মানুষ না, যে কোনো প্রাণির উপর কোনো অন্যায়-অত্যাচার মনকে অনেক কাঁদায়। তাই সবসময়ই আড়ালে থেকে নিজেকে নিজের মতো করেই মানবিক কাজে নিযুক্ত করেছিলাম। কিন্তু করোনার ভয়ঙ্কর থাবায় যখন মানুষ দিশেহারা, কর্মহারা, চারিদিকে শুধু ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার, অক্সিজেনের জন্যে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি, মৃত্যুভয়ে যখন আপন লোকজন পর হয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা চলছিলো, তখন এতো বড় পরিসরে এককভাবে মানবতার পক্ষে নিজেকে অনেক অসহায় মনে হয়েছিলো। তাই তখন আরো কিছু মানবিক মানুষদের সাথে নিয়ে ‘আমরা পর নই’ এই মূলমন্ত্র মনে ধারণ করে গড়ে তুলি সামাজিক ও মানবিক সংগঠন ‘আপন’। যার মাধ্যমে বৃহৎ পরিসরে আত্মমানবতায় কাজ করে যাচ্ছি। এটিই হচ্ছে যে কোনো সংগঠন চর্চার সবচেয়ে বড় সফলতা, এককভাবে যা অসম্ভব তা সংগঠনের মাধ্যমে অতন্ত সফলতার সাথে সম্ভব।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপন সংগঠন কী কী কাজ করে?

রাশেদা আক্তার : আপন সংগঠনের জন্মই হয়েছিল ক্রান্তিলগ্নে, যা আমি আগেই বলেছি। আলহামদুলিল্লাহ, এর মধ্যে আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে কাজ করেছি। করোনার সময় প্রচুর খাদ্যসামগ্রী দিয়েছি। কয়েকদিন পর পরই নিয়মিত রান্না করা খাবার দিয়েছি। করোনার সময় আপন সংগঠন এককভাবে ১৭২-এর উপরে অক্সিজেন সেবা প্রদান করেছিল। করোনাকালীন সময়ে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে মেডিকেল সেবা প্রদান করেছিলো সংগঠনটি। মাস্ক, স্যানিটাইজার, পিপিসহ সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়েছে আপন। করোনার সময় কোরবানির ঈদের আগের দিন সংগঠনের পক্ষ থেকে গরু জবাই করে ঈদ সামগ্রীর সাথে গরুর মাংস দিয়েছিলাম অসহায় নিম্ন মধ্যবিও পরিবারগুলোতে। তাছাড়া শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি রোজায়, রোজার ঈদে, কোরবানির ঈদে ইফতার, ঈদ ও খাদ্যসামগ্রী দিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। প্রতি বছরের শুরুতেই আমরা সংগঠনের সাধ্যমতো শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরো ১ বছরের সম্পূর্ণ শিক্ষা উপকরণ দিয়ে থাকি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সামাজিক বিভিন্ন প্রতিকূলতায় সময়োপযোগী পদক্ষেপ (যেমন : ডেঙ্গু প্রতিরোধে) নেয়া হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার ২য় বছর থেকেই কর্মসংস্থান প্রজেক্ট শুরু করেছে সংগঠনের জাকাত ফান্ডের মাধ্যমে। যার আলোকে গত বছর চাঁদপুর সরকারি কলেজের মাস্টার্স পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থীকে (যার পরিবারে ৫ সদস্যের মধ্যে বাকি ২ ভাই-বোনও পড়াশোনা করে কিন্তু বাবা মাত্র ৬০০০ টাকা বেতনে কোনো এক দোকানে চাকরি করে) স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। এ বছরেও তার ব্যতিক্রম হবে না ইনশাল্লাহ। এত অল্প সময়ে আপন সংগঠন অনেক কাজ করেছে। আপনাদের সবার দোয়া থাকলে ও আপনাদেরকে সংগঠনের পাশে পেলে ইনশাল্লাহ সংগঠনটি চাঁদপুরসহ এর বাইরেও অনেক মানবিক ও সামাজিক কাজ করতে পারবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : এই সংগঠন নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

রাশেদা আক্তার : সংগঠন নিয়ে স্বপ্ন অনেক। ভবিষৎ পরিকল্পনা বলতে এখন পর্যন্ত মানুষ ও সমাজের কল্যাণে যা কিছু করেছি তা চলমান রাখা। যেহেতু ইংলিশ লেঙ্গুয়েজে পরিপূর্ণতা আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবনের সাফল্যের এক অন্যতম জরুরি মাধ্যম, তাই আপন সংগঠন মনে করেছে ৫ বছর থেকে ১৪ বছর বয়সী বাচ্চাদের ইংলিশ কনভারসেশনে পরিপূর্ণতা দিতে ইংলিশ কিডস ক্লাব ওপেন করা দরকার। তাই গত ২ মাস আগে আপন সংগঠনটির অঙ্গ-সংগঠন হিসেবে আপন ইংলিশ কিডস ক্লাব ওপেন করা হয়েছে। যেখানে বিত্তবান বাবা-মায়ের সন্তানদের পাশাপাশি গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। আপন ইংলিশ কিডস ক্লাবের পক্ষ থেকে গত ২১ ফেব্রুয়ারিতে এই ছোট ছোট কোমলমতী বাচ্চাদেরকে এইদিনের তাৎপর্য বোঝানো হয়েছিলো, নিজেদের বানানো শহিদ মিনারে ফুল দেয়া, জাতীয় সংগীত গাওয়ার পাশাপাশি দিবসটিকে ঘিরে আরো অনেক কার্যক্রম করা হয়েছিলো। আমাদের কথা হচ্ছে, বাংলা ভাষা আমাদের দাবি কিন্তু ইংরেজি ভাষা আমাদের প্রয়োজন। বর্তমান প্রজেক্টগুলো চলমান রাখার পাশাপাশি ভবিষৎ এ হয়তো আরো সময় উপযোগী পরিকল্পনা হাতে নিবে সংগঠনটি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুরে কী কী সামাজিক সমস্যা রয়েছে বলে মনে করেন?

রাশেদা আক্তার : আসলে সমাজজীবনে সমস্যা থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে আমি মনে করি, যে কোনো সামাজিক সমস্যাই সাংগঠনিকভাবে সমাধান করা সম্ভব। আরো নিপুণ সমাধান সম্ভব যদি কয়েকটি সংগঠন একত্রিত হয়ে সকল সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে কাজ করে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : তরুণদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

রাশেদা আক্তার : তরুণরা হচ্ছে সমাজের চালিকাশক্তি। তারা যদি চায় যে কোনো সমাজের আমূল পরিবর্তন করা সম্ভব। এই যেমন চাঁদপুরের তরুণদের মধ্যে যারা ইংলিশ কনভারসেশনে ভালো তারা কিন্তু চাইলেই আপন ইংলিশ কিডস ক্লাবে এসে বাচ্চাদের সাথে ইংলিশে একটু গল্প করার ছলে বাচ্চাদেরকে ইংলিশে দক্ষ করে তুলতে পারে ছোটবেলা থেকেই।

আমরা তো কতভাবেই কত সময় নষ্ট করি তাই না! সেই নষ্ট হওয়া সময়গুলোর মধ্যে যদি মাঝে মাঝে নিয়ম করে একটি নির্দিষ্ট সময় আপন ইংলিশ কিডস ক্লাবের বাচ্চাদের জন্য দান করে, তবে আমি মনে করি এর থেকে মহৎ কিছু হতে পারে না। কারণ আপনি প্রতিদিন কাউকে কিছু দেয়ার থেকে তাকে সঠিক শিক্ষা প্রদান করাটা উত্তম। এটা তার জীবনের কোনো এক পর্যায়ে কাঁচামাল হিসেবে কাজে লাগতে পারে। তাই চাঁদপুর কণ্ঠের মতো বহুল জনপ্রিয় পত্রিকার মাধ্যমে আপন সামাজিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট হয়ে তরুণদের আহ্বান করবো, প্রতিদিনের নষ্ট হওয়া কিছু সময় বাঁচিয়ে অন্যর জীবনের ভবিষৎ কাঁচামাল বানাতে এগিয়ে আসুন। তরুণদের হাতের আলোর মশাল দিয়েই সমাজকে আলোকিত করতে পারবে, একমাত্র তরুণরাই। তাই আমি তরুণদের সমাজ বিনির্মাণের সেই পথে অগ্রদূত হওয়ার আহ্বান জানাই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়