প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
চলছে ২০২২ সাল, ১৯৯৪ সালে তোলা আমার একটা গ্রুপ ছবি আমি ফেসবুকে দিই। একজন কমেন্ট করলেন, ‘এখানে তোমায় দারুণ লাগছে’। আমি কমেন্টের রিপ্লাইতে আমার বর্তমান ছবি দিয়ে লিখি, ‘এখানেও আমাকে দারুণ লাগছে’। আমি জানি ব্যক্তিবিশেষে কমেন্টের ব্যাখ্যা আলাদা হয়। উনি ওই ছবি ভালো বলার কারণ তখন আমি সেই ৭ ইঞ্চি হাতের ব্লাউজ পরেছি আর মাথায় হিজাব ছিল না। বর্তমান সময়ে আমি ফুলহাতা জামা ও মাথায় হিজাব পরি। আমি আমার বর্তমানকেই সুন্দর বলি। অবশ্য পরে উনি বলেছেন, দুইই সুন্দর।
আরেকজন কমেন্ট করেছেন, ‘আরে তখন তো মাথায় হিজাব ছিল না’। আমি জবাব দিই, ‘তখন ছিল না বলে এখন থাকবে না এই কেমন কথা’। একসময় মাথায় কাপড় দিইনি বলে কখনো আর দিবো না এটা আমার মানবধর্ম নয়। কখনও নামাজ পড়িনি বলে এখন পড়বো না এটা আমার মানবিকতার ধর্ম নয়। তাই বলে কেউ আমায় কখনও ফোর্স করেনি কোন ড্রেসের বিষয়েই। বরং ২০১২ সালে যখন বর্তমান ড্রেসআপ শুরু করি পরিবারের আপনজনেরাও বলেছে ‘দেখি কতদিন থাকে’। আজ আমার পরিবারের প্রায় সব নারী অনেকটা আমার মত পোশাক পরেন, অনেকে বোরকা পরেন। তবে তাদের কাউকে কেউ কোন ধরনের ফোর্স করেনি। আমার বড় কন্যাও বোরকা পরে, সে এটাতেই নিজেকে পরিপাটি ও পরিপূর্ণ মনে করে। ১৩/১৪ বছর বয়সে যখন ছোট মেয়ে হিজাব পরতে চায় আমি বারবার বলেছি, আজ পরে কাল ছাড়তে পারবে না। বরং পরা শুরুর আগেই কয়েকবার ভাব তা ধরে রাখতে পারবে কিনা।
প্রায় মাস তিনেক আগে আমি একাই বসুন্ধরা সিটিতে যাই সামান্য প্রয়োজনে। কাজ সেরে নামার সময় চলন্ত সিঁড়িতে দেখি একটা মেয়ে উঠছে আমার পাশের সিঁড়ি দিয়েই। তার পরনে জালের মতো একটা পোশাক আর ভেতরে অন্তর্বাস। অবশ্য নিচের অন্তর্বাস ছিলো বিকিনির মতো নয়, ৭/৮ ইঞ্চি লম্বা শর্টস। উপরে গলা থেকে নিচ পর্যন্ত জালের মতো কাপড়ের একটা আস্তর। অন্তর্বাস আর জালের পোশাকের রংয়েরও ছিলো পুরাই ভিন্ন, যা চোখে পড়ার মতো। মেয়েটা লম্বা ছিলো অনেক, যদিও আমি নিজেই ৫ ফিট সাড়ে ছয় ইঞ্চি লম্বা। সে আমার চেয়েও লম্বা ছিলো। আমি একবার দেখে চমকে উঠি, আবার তাকাতেই সিঁড়ি উপরে চলে যায়। বাসায় এসে মেয়ের সাথে বললে সে বললো, হয়ত মেয়েটি এই দেশের না। হতেই পারে তবে আমার কাছে মনে হল ওকে চিড়িয়াখানার মতো সবাই দেখছে। বসুন্ধরা সিটিতে এর আগেও আমি ভিন্ন পোশাকের নারীদের দেখেছি, তবে এতটা খোলামেলা নয়। তবে এটাও ঠিক আমি এখানে যেমন দেখেছি নিউমার্কেট বা হকার্স মার্কেটে এমন পোশাকের কাউকে দেখিনি। আমি জানি স্থানভেদে এই ড্রেসের ভিন্নতা।
নারীদের পোশাক নিয়ে সমালোচনা নতুন কিছু নয়। ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটলেই আলোচনায় আসে নারীর পোশাক, আর তখনি দুইভাগ হয়ে যায় আমাদের আমজনতা। খুব মনে পড়ে কুমিল্লার তনুকে। তনু হত্যার পর নেট দুনিয়ায় যতো যতো প্রতিবাদ দেখেছিলাম ভেবেছি এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার ঠিক হবে। আসলে সবই ধোঁয়াশা। সেই তনু হত্যার পর একভাগ আমজনতা বললো, যারা বলে পোশাক এর জন্যে ধর্ষণ বেড়ে গেছে তারা দেখুন তনুর পোশাক তো অনেক ভালো ছিলো। আসলে কোনটাকেই আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। নারী-পুরুষ ভিন্ন তাদের শারীরিক দিক দিয়ে, তাদের পোশাক হবে ভিন্ন। একটা সময় নারী-পুরুষের কাজ নিয়েও হয়েছে অনেক তর্ক। একদল বলেছে পুরুষ যা করতে পারে নারীও তা পারে। তখন আরেকদল বলেছে, পুরুষ দাঁড়িয়ে প্র¯্রাব করতে পারে, নারী কি পারে? নারী গর্ভে সন্তান নিতে পারে, পুরুষ কি পারে? যদিও দিন দুয়েক আগে একটা ভিডিও দেখেছি, সেখানে দেখলাম এক পুরুষ গর্ভে সন্তান ধারণ করেছেন। তার বেবিবাম্পও দেখেছি ভিডিওতে। আসলে আমার কাছে এসব বিষয়ে কথা বলা মানেই বেকারের সময় ব্যয় করার মতো মনে হয়।
একদল বলে মেয়েদের খোলামেলা পোশাক দেখে ছেলেরা ইমোশন হয়। শারীরিক অঙ্গ চেঞ্জ হয়ে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। শুনলাম এই উত্তেজনা নাকি তাদের নিজেদের আয়ত্বে থাকে না। কিন্তু কথা হল আপনার চোখকে তো আপনি আয়ত্বে রাখতেই পারেন। কেউ কখনই কাউকে এক নজর দেখে ইমোশন হয় না। পরিস্থিতিটা দেখতে দেখতেই নিজের কন্টোলিং পাওয়ার কমে যায়। নারীর পোশাকের বিষয় নিয়ে কথা হয় বড় মেয়ের সাথে। সে বলে শরীরের কন্টোল পুরুষের নেই কিন্তু চোখের তো থাকা উচিত। আমাদের আল কোরআনেও আছে যে আপনি আপনার চোখকে কন্টোল করুন। কথা বলতে বলতে সে জানায় তার পরিচিত এক ছেলে আমেরিকা যায় কিছুদিন আগে। বাসার কাছাকাছিই বিচ, বিচে তো নারীরা বিকিনি পরেই এসে নামে। প্রথম প্রথম ২/৩ দিনও বের হলে তাকাতেই পারতো না। এখন এসব সয়ে গেছে। কথা হলো এটা ওই দেশের কালচার, এটা অন্যদের মেনে নিতেই হবে।
২০১০ সালে নারীর পোশাক নিয়ে সমালোচনা উঠলে আমাদের গণমাধ্যমের একজন নারী তিনি আইনজীবীও। তিনি বললেন, ‘মেয়েদের আরো খোলামেলা হয়ে চলতে হবে, তাহলে ছেলেরা দেখতে দেখতে ওদের চোখে সহ্য হয়ে যাবে’। তখন এক লেখায় আমি লিখেছিলাম, এই কাজটা আপনি আর আপনার সন্তানকে দিয়েই শুরু করেন।
পোশাকের স্বাধীনতা, না ‘পোশাকি’ স্বাধীনতা? শিরোনামে গিয়াস উদ্দিন লিখেন, ‘মেয়েরা যা পরেন, যেভাবে পরেন, তা কি তাদের নিজস্ব রুচিপছন্দ অনুসারেই? না কি, তাদের বেলায় পোশাক মানে সত্যিই পররুচির খেলা? নারীর কাছে ‘পররুচি’-র অর্থ আসলে পুরুষের রুচি, যার ভিত্তিতে তাদের পরিধান নির্ধারিত হয়ে থাকে। পোশাকের স্বাধীনতার বা স্বাচ্ছন্দ্যের নামে মেয়েরা যা পরে, পরতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, আজও তা সুকৌশলে আমাদের পুরুষ-শাসিত সমাজই নির্ধারণ করে দেয়। এ খেলা নতুন নয়, অতি প্রাচীন। খোলা মনে একটু তলিয়ে ভেবে দেখুন।’ (তথ্যসূত্র : ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৭, উইন চ্যাপ্টার)।
নারীর পোশাক নিয়ে আলোচনা চলমান থাকলেও নতুন করে আসে নরসিংদী রেলস্টেশনে পোশাকের কারণে তরুণীকে হেনস্তা প্রসঙ্গে। উচ্চ আদালতের বক্তব্যের প্রতিবাদে হাইকোর্ট মাজার গেটের সামনে ভিন্ন ধরনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন নারীরা। এখানেই সেই দুইভাগ, কেউ হাইকোর্টের রায়কে সমর্থন করছে আর কেউ প্রতিবাদ করছে। লিখতে হলে যে পড়ার বিকল্প নেই, তেমনি জানতে হলে এখন নেটপাড়ায় থাকতেই হবে আপনাকে। একটা সময় বাসে বা ট্রেনে পত্রিকা বিক্রি করতে দেখেছি, পত্রিকা হাতে হকার ডাকছে, এই তাজা খবর তাজা খবর। সেসব এখন চোখে পড়ে কম, তবে তাজা খবর পেতে এখন নেট দুনিয়ায় থাকলেই সব জানা যায়। সেই নেট দুনিয়াতেই দেখতে পেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি পরে এসে বলেছে, এটা আমার দাদী নানির ঐতিহ্য। আর সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমিও ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি পরেছি আর পরবও। হ্যাঁ সে পরতেই পারে, একবার না বারবারই পরতে পারে। তবে আমার আপত্তি হলো সেই কয়েকটা শব্দে, যা হল দাদী, নানি আর ঐতিহ্য। বিষয়টা অনেকটাই আর.জে. নিরবের একটা শিরোনামের মতো। তিনি শিরোনাম দিয়েছেন, ‘বাঙালি মেয়েরা চায়-পোশাক মার্কিন আর বিচার সৌদিআরাবি’।
নানি-দাদির প্রসঙ্গ আসতেই আমি কল্পনার জগতে হারাই। আজ থেকে চল্লিশ বছর আগের আমার গ্রামের কথা ভাবি। আমাদের পরিবারটি তখন নিম্ন মধ্যবিত্তের পরিবার ছিল। আমি আমার দাদি-নানিকে কখনই ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি পরতে দেখিনি। তবে আমাদের বাড়ির ২/৪ জনকে দেখেছি, যারা আমার দাদির বয়সী ছিলেন। উনারা না পরার কারণ ছিল আর্থিক সংকট। এমনকি উনারা পেটিকোটও পরতেন না। ওই ১১/১২ হাতের একটা শাড়ি এমন করে পরতেন পুরো শরীর ঢেকে থাকতো। শুধুমাত্র অন্দরমহলে থাকলে হয়তো হাতের উপর বা মাথায় কাপড় থাকতো না। বাইরে বের হলে কখনই বোঝা যেতো না তারা ব্লাউজ পেটিকোট পরেননি।
হ্যাঁ আমরা পুরোনো সিনেমায় এমন শাড়ি পরা দেখেছি সেটা আলাদা। আজ যখন রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় নারীর কেমন পোশাক হবে তাই নিয়ে আলোচনা তখন এই অন্দরমহলের দাদি নানিকে নাই বা টানলেন। টানলেন যখন নিশ্চয়ই ইতিহাস জেনেই টেনেছেন। বর্তমান এই ইস্যুতেকে কার বাসায় বা বেডরুমে কি পরে তা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে না, হচ্ছে পাবলিক জায়গার কথা।
‘ব্লাউজ মানেই যে শাড়ির নিচে পরার আঁটসাঁট অন্তর্বাস তা কিন্তু নয়। ব্লাউজ শব্দটার উদ্ভব ফরাসি শব্দ ব্লাউজ থেকে যার অর্থ ডাস্ট কোট যা ফরাসি ক্রুসেডার বা ধর্মযোদ্ধারা পরত। ঐতিহাসিকভাবে ব্লাউজ হচ্ছে একধরনের কাস্ক বা পিপে স্টাইলের ঢিলেঢালা পোশাক। ঢোলা এই পোশাক কোমরের কাছে সেলাই করে, কুঁচি, বেল্ট বা কোমরবন্ধনী দিয়ে আটকে/চেপে রাখা হত একসময়। ১৮৬০-এর দশকেই ইউনিসেক্স বা ছেলেমেয়ে সবার পোশাক হিসেবে জনপ্রিয় হতে শুরু করে ব্লাউজ। ইতালির বিখ্যাত দেশপ্রেমিক যোদ্ধা জোসেফ গ্যারিবল্ডি ও তার স্ত্রী আনিতাকে যুদ্ধক্ষেত্রে সেসময়ের জনপ্রিয় লাল রঙের গ্যারিবল্ডি শার্ট বা ব্লাউজ পরতে দেখা যায়। তবে ১৮৯০-এর আগ পর্যন্ত এইটা সর্বজনীনভাবে নারীদের পোশাক ছিল না। কৃষক, শ্রমিক, চিত্রশিল্পী ও শিশুরা পরত কোমর পর্যন্ত ঝুলের এই পোশাক। এখনকার দিনে ব্লাউজ মূলত মেয়েদের পোশাক হলেও একটু ঢোলাঢালা পোয়েট শার্ট আবার ইউনিসেক্স। রোমান্টিক সাহিত্যের যুগে বিখ্যাত ব্রিটিশ কবি লর্ড বায়রন এ ধরণের শার্ট বা ব্লাউজ পরতেন। তখনকার দিনের ব্রিটিশ নারীরাও এমন ব্লাউজ পরতেন। এরপর একটা সময়ে ইউরোপীয় পোশাক ব্লাউজ হয়ে ওঠে এই উপমহাদেশের নারীদের পোশাক।’ (তথ্যসূত্র : রাজনীন ফারজানা, ২০ আগস্ট ২০১৮, সারাবাংলা নেট)।
আপনি আরামের জন্যে নিজের অন্দরমহলে যা ইচ্ছে পরতে পারেন, কিন্তু পাবলিক জায়গায়? হ্যাঁ শরীর আপনার ড্রেসও আপনার তাই বলে সমাজ, স্থান, কাল, অবস্থান বলতে কিন্তু কিছু আছে। রাজধানীতে যে পশ্চিমা পোশাক আঁটসাঁট অন্তর্বাস দেখা ড্রেস পরে ঘুরে বেড়ান অনায়াসে সে পোশাক পরে কি আপনি মফস্বল বা গ্রামে যেতে পারবেন? হয়তো আপনিই পারবেন, কিন্তু আপনার চারপাশের সাথে কি সেটা মানানসই হবে? আপনি নিশ্চই শোকের বাড়িতে যে পোশাক পরবেন বিয়ে বাড়িতে তা পরেন না, কিন্তু আপনি ঠিক একই ধরণের পোশাক পরেন। বিয়ে বাড়িতে নববধূ যে পোশাক পরে বধূর বেস্ট বন্ধু তা পরে না। বধূর মা-খালা সেটা পরে না। আপনি সেখানে বাছাই করে ঠিক পরতে পারেন তাহলে পাবলিক জায়গায় নিশ্চই অন্দরমহলের পোশাক পরাটা বেমানান।
কথায় কথা শালীনতার কথা বলা হচ্ছে। শালীনতা আর স্বাধীনতা যে এক নয় তা বা বুঝেই গুলিয়ে ফেলছে অনেকেই। আমি প্রায় বলি, স্বাধীনতার বয়স হাফ সেঞ্চুরি হলেও মুক্তি আজো জন্মায়নি। এই মুক্তি বলতে আমি আমাদের নিরাপত্তা কথা বলি। মুখে নিরাপত্তার কথা বলে আমি অর্ধেক শরীর দেখিয়ে চললে তো হবে না। হ্যাঁ আমার দেহ আমার পোশাক আমারই হবে। সেটার একটা সীমাবদ্ধতা নিশ্চই আছে।
েেনট দুনিয়া এখন আমাদের হাতের নাগালে। ফেসবুকে ছবি দিলে ২/৪ জন ইনবক্সে এসে বলে, কয়টা কাপড় পরেছ? আমি তাহাদের কথা শুনে হাসি। আর জবাব দিই আমি তো আমিই। আমি যে কয়টা পরি তাই পরেছি। হেজাব পরি বলে কয়েকজনে সমালোচনাও করেছে যে আমি নাকি...। তাদের কথায় পাত্তা দিইনি, কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছি। এই এড়িয়ে যাওয়াটা ওদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছি আমি আমার মতামতেই চলি। নিশ্চই বলবেন তাহলে অন্যের কথা কেনো বলছি। তাহলে ছোট একটা ঘটনা বলে শেষ করছি।
বাংলা একাডেমিতে এক প্রোগ্রামে গেলাম। একজন নারীর সাথে আলাপ পরিচয়। এক পর্যায়ে উনি আমায় জানান, আমার এত পরিবর্তন কবে থেকে। আমি থমকে যাই, কারণ আমি বরাবরই এমনিই। ২০০৯ থেকে লিখছি। ২০১৪ সাল থেকে সাহিত্যপাড়া বা ফেসবুকে আছি। মানে বাহিরের মানুষ চেনে এমনিই। আর ২০১২ সালেই আমার এই ড্রেস। আমি উনাকে বারবার বুঝিয়ে বললাম, আমি এমনিই। শিল্পকলা একাডেমি গিয়েছি একটা প্রোগ্রামে। মঞ্চে উঠার একটা ছবি ইনবক্সে দিলেন একজন। তো উনাকে সামনাসামনি দেখার ইচ্ছে হল। সামনে আসতে বললাম, আমি তার প্রোফাইল দেখছি আর বাস্তবে দেখছি। মুদ্রার যে অন্যপিঠ আছে তা প্রমাণিত হল। একজন হেজাব পরা ব্যক্তি কি করে বাস্তবে শার্ট-প্যান্ট ও কোর্ট পরা হয়। তাও মুজিব কোর্ট পরা। সেদিন মঞ্চে আমি নিজের লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর ছয় বোতামের ছয় দফা’ কবিতাটি পাঠ করি।
ব্যক্তি স্বাধীনতা আর পোশাকের স্বাধীনতা এক হয় না কখনই। ব্যক্তি বলতে শুধু আপনি আমি আমরা একা শুধু নিজেই। নিজের বিষয়ে ভাবনাটা ব্যক্তি স্বাধীনতা। আর পোশাক হল আমার একটা পরিচয়। পোশাক হলো স্থান-কাল-অবস্থানকে বহন করে পরিচিত করিয়ে দেয়। সেই পোশাকের ক্ষেত্রে স্বাধীন হওয়া কিছুটা ভাবনার, যদি সেটা হয় পাবলিক জায়গায়। আর অন্দর মহলে কেউ ঢুঁ মারে না, অন্দর মহলের পোশাককে পাবলিকে আনার প্রয়োজন মনে করি না। আসলে আমরা স্বার্থপরের মতো মুখে বাঙালি সংস্কৃতির কথা বলি, আর কাজেকর্মে পশ্চিমাদের অনুকরণ করি।