প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে নারী আর পুরুষ দিয়ে। জুটিগত জীবনে নারী ছাড়া পুরুষ যেমন বেকার, তেমনি পুরুষ ছাড়া নারী তেমনি অচল। কীভাবে কাটে একজন নারীর জীবন ভেবে দেখেছেন কি? একে অন্যের পরিপূরক। যদিও পুরুষশাসিত দুনিয়া চলছে, সেখানে নারীর রয়েছে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা।
সন্তান লালন-পালন করতে রাতের ঘুম হারাম করে নারী। ঘর গোছানো, রান্না করা, পরিবার-পরিজনের দিকে খেয়াল রাখা সব কাজ সেই করে থাকে। বাসায় মেহমান এলে তাদের আপ্যায়ন করা, শ^শুর বাড়ির লোকদের সামলানো।
গ্রামের সমাজদার একজন নারী সকাল শুরু হয় যেভাবেÑহাতমুখ ধুয়ে ধর্মের রীতি-রেওয়াজ পালন, তারপর হাঁস-মুরগির খাবার দেয়া, গরু-ছাগল থাকলে তাদের ঘর পরিষ্কার করা। এখানে অনেক পুরুষ সহযোগিতা করে আবার অনেকে করে না। নারী নিজের ঘরসহ বাড়ির আঙিনা ঝাড় দেয়া, হাঁড়ি-পাতিল পুকুর ঘাটে বা কলের গোড়ায় গিয়ে ধুয়ে আনেন। তারপর পরিবারের জন্যে নাস্তা তৈরি, সেই নাস্তা নিয়ে টেবিলে সাজায় ঘরের অন্যদের ডেকে নাস্তা দেয়। নিজে খায় পরে তা-ও থাকলে! এরপর দুপুরের খাবার জোগাতে তরি-তরকারি কাটাকাটি, ভাত রান্না ইত্যাদি শেষে নিজে গোসল করতে যায় প্রায় বিকেলে। সংসারে ছোট বাচ্চা থাকলে তার সেবা, বড় বাচ্চাদের স্কুল-কলেজে পাঠানো তাতো আছেই। এতো খাটুনির পরেও কোনো কোনো পরিবারের কেউ না কেউ সেই নারীর দোষ খোঁজে। অপমান-অপদস্ত হেয় করে।
একটিবার ভেবে দেখুন তো, আপনার ঘরের স্ত্রী বা আমার স্ত্রী একটি সংসারে যেই সময় দেয় তার কতটুকু কাজ আমরা করে থাকি বাইরে? আমি নিজে আমার স্ত্রী লুবনা আক্তার বৃষ্টিকে দেখেছি একই খাটে আমি ঘুমাচ্ছি। আমার ছোট মেয়ে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে কেঁদে উঠলো। সাথে সাথে আমার স্ত্রী তাকে কোলে তুলে নিলো, বুকে জড়িয়ে আদর করতে লাগলো। বাচ্চা মায়ের কোলে পায়খানা করে দিলো বিরক্ত না হয়ে মধ্যরাতে তার জামাকাপড় পাল্টে নিজের হাঁটুর উপর বালিশ নিয়ে দোলাতে দোলাতে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে। এই দৃশ্য দেখে ততোক্ষণে আমার নিজেরই ঘুম এসে গেছে।
সকালে জিজ্ঞেস করলাম, মারিয়াম কখন ঘুমিয়েছে বললো, ফজরের আজানের সময়। বললাম, তুমি ঘুমাওনি? উত্তরে, লুবনা বললো, মারিয়ামকে রেখে আমি কীভাবে ঘুমাই? তোমরা পুরুষ তোমাদের এসব নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। আসলেই আমরা পুরুষ বাইরে যা ভেতরেও তা, নারীর মন বুঝার মতো সময় আমাদের হয় না।
আপনাকে আপনার স্ত্রীর দৈনিক কাজগুলো করতে দিলে পারবেন না। আমরা ঘড়ি দেখে কাজ করে থাকি আর নারীর ঘড়ি দেখার সময় নেই। একটি সংসারে আয়-উন্নতির জন্যে একজন নারী যে সময় দিয়ে থাকে, তাকে তার প্রাপ্য সম্মান আমরা কজন দিই?
সন্তান বড় হয়ে যাওয়ার পরেও নারী দায়িত্ব বেড়ে যায়, কমে না। অথচ যেই স্বামী, সন্তানের জন্যে একজন নারী কষ্ট করে সন্তান বিয়ে করার পর, ভালো চাকুরি পাবার পরে সেই নারীরূপী ফ্যামেলি মেকার মাকে ভুলে যায়, দূরে ঠেলে দেয়, সন্তানের সঙ্গে শহরের বাসায় জায়গা হয় না। যৎসামান্য নারী সংসারজীবনে কষ্ট করে সুখের ভাগিদার হয়, সুখে কাটে তাদের সময়। বেশির ভাগ নারীর জীবন কাটে দুঃখে। নারীর জীবন হচ্ছে নাটকীয়। আপনি আমি টেলিভিশন নাটক দেখি। অথচ আপনার-আমার সংসার বাস্তবতার নাটকে সাজানো সেটা চোখে পড়ে না।
নারী কখনো কারো স্ত্রী, আবার মা, দাদি, নানি, শাশুড়ির ভূমিকা অভিনয় করেই কাটে তার সময়। সমাজের প্রতিটি পুরুষকে বলবো আসুন, নারীর প্রাপ্য সম্মানটুকু আমরা তাদের দিই। তাদের কাজে সহযোগিতা করি। তাদের খুশি রাখি। তাদের দুঃখে দুঃখি-একাকিত্ব নয়, মনের কথাগুলো নিজের মনে করে ভাবি।
জয় হোক আদর্শবান নারীর, জয় হোক তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের। নাটকীয়তায় নয়, বাস্তবজীবনে আনন্দে কাটুক নারী পুরুষের প্রতিটি সময়।
লেখক : সাংবাদিক।