প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
টিউমারের কারণ ও প্রতিকার
হাকীম মিজানুর রহমান
টিউমার হল একটি ইংরেজি শব্দ। যাকে বাংলায় বলে আব্র্বুদ। শরীরের যে কোনো স্থানে কোষসমূহ যদি ধীরে ধীরে বা দ্রুততার সঙ্গে অস্বাভাবিক ও অসামঞ্জস্যভাবে ফুলে ওঠে তাকে বলা হয় টিউমার। এক কথায় টিউমার হলো মূল দেহ কোষের অস্বাভাবিক রূপান্তর বা নতুন কোষের সংযোজন।
তবে কি কারণে মানবদেহে এমন টিউমার হয় তার কারণ সঠিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি। আমাদের দেশে বেশ কিছু পরিচিত টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। নিচে বিভিন্ন প্রকার টিউমারের বিস্তারিত দেয়া হলো।
টিউমারের প্রকারভেদ
টিউমার সাধারণত তিন রকমের হয়- বিনাইন টিউমার, প্রি-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার এবং ম্যালিগন্যান্ট টিউমার।
বিনাইন টিউমার
এই জাতীয় টিউমার সাধারণত তুলতুলে নরম হয় এবং শক্ত হয় না। খুব আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায়। এর কোনো আবরণ থাকে না। এর উপরের চর্ম আলাদা পৃথক মনে হয়। এই টিউমারের সংলগ্ন গ্রন্থিসমূহ আক্রান্ত হয় না। চাপ দিলে এতে কোনো যন্ত্রণা অনুভূত হয় না।
প্রি-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার: এই টিউমারগুলিতে কোষগুলি এখনও ক্যান্সারযুক্ত নয়, তবে ভবিষ্যতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ম্যালিগন্যান্ট টিউমার
এটা নিরেট বা শক্ত হয়। খুব দ্রুত বৃদ্ধি হয়। এতে আবরণ থাকে। এটার উপরের চর্ম আলাদা পৃথক মনে হয় না। এই টিউমার সংলগ্ন গ্রন্থিসমূহ আক্রান্ত হয়। চাপ দিলে এতে যন্ত্রণা অনুভূত হয়। এতে আঘাত করলে বা অস্ত্রোপচার করলে ক্ষতি হয়। অস্ত্রোপচার করলে পরে প্রায়ই ক্যান্সার হতে দেখা যায়।
শরীরের বিভিন্ন স্থানে টিউমার বিভিন্ন নামে পরিচিত
১. নাক, জরায়ু প্রভৃতি শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির টিউমারের নাম প্যাপিলোমা,
২. জরায়ু, পাকস্থলী প্রভৃতি স্থানের মাংসপেশির টিউমারের নাম মাইওমা,
৩. চর্মের টিউমারের নাম এপিথেলিওমা,
৪. পিঠ, কাঁধ প্রভৃতি স্থানে ফ্যাটিটিস্যু টিউমারের নাম লিপোমা,
৫. বোনের কার্টিলেজের টিউমারের নাম কনড্রমা,
৬. মাথার খুলি, মুখমণ্ডল, নাগিঁকা গহ্বর প্রভৃতি স্থানে হাড়ের অস্থি টিউমারের নাম অস্টিওমা,
৭. মস্তিষ্ক কোষের টিউমারের নাম গ্লাইওমা,
৮. মস্তিষ্ক, লিভার প্রভৃতি স্থানে রক্ত নালিকার টিউমারের নাম হেমান জিওমা,
৯. ঘাড়, জিহ্বা, বগল প্রভৃতি স্থানের লগিঁকা নালির টিউমারের নাম লিমফ্যানজিওমা। সাধারণত কম বয়সে সার্কোমা টিউমার দেখা দেয়। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর কাগির্ঁনোমা টিউমার দেখা দেয়।
টিউমারের কারণ
যে সব মহিলা ডিঅ্যান্ডগিঁ বা এমআর করে বা কোনো গাছ-গাছড়া দিয়ে ভ্রূণ নষ্ট করে বা প্রসবকালে যেসব মহিলার প্রচণ্ড কষ্ট হয় বা যে সব মহিলা ঘন ঘন সন্তান প্রসব করে বা যে সব মহিলার অতি অল্প বয়সে বিয়ে হয় সেই সব মহিলার জরায়ুতে আঘাত হেতু, জরায়ু, জরায়ু মুখ, ডিম্বকোষ, স্তন গ্রন্থিতে টিউমার দেখা দিতে পারে। সাধারণত মহিলাদের উপরোক্ত কারণ থেকে নিবৃত থাকা বাঞ্ছনীয়।
পুরুষদের অ-কোষে কোনো রকম লাগলে অ-কোষ ফুলে শক্ত হয়ে টিউমার দেখা দেয়।
যারা কলকারখানায় চিমনি পরিষ্কার করে তাদের বিভিন্ন স্থানে টিউমার দেখা দেয়।
কোনো কোনো পরিবারে বংশগতভাবে টিউমার দেখা দিতে পারে আঘাত, ঘর্ষণ, পেষণ বা উদ্দীপনার ফলে স্থান বিশেষ অ্যাডিনোমা সৃষ্টি হতে পারে পুরনো পোড়া ঘায়ে অনেক টিউমার বা ক্যান্সার দেখা দিতে পারে আলকাতরা, সেল অয়েল সুট ইত্যাদি রাসায়নিক দ্রব্য চামড়ার উপর প্রদাহ সৃষ্টি করে টিউমার দেখা দিতে পারে খাদ্যের পরিপুষ্টির অভাবে লিভারে টিউমার দেখা দিতে পারে গায়ক, বংশীবাদক এদের গলায় বা ফুসফুসে টিউমার দেখা দিতে পারে ইসট্রিন হরমোনের অভাবে স্তনে টিউমার দেখা দিতে পারে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করার ফলে নারীদের সাধারণ হরমোন বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়, ফলে জরায়ুতে বা স্তনে, যৌন দ্বারে টিউমার দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। আলোচিত কারণসমূহ ব্যতীত আরো নানাবিধ কারণে টিউমার দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি
টিউমারের সাধারণ চিকিৎসা অপারেশন। কিন্তু অনেক সময় টিউমার অপারেশন করলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার অপারেশন করা নিরাপদ নয়। তাই নিয়মিত ঔষধের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা সম্ভব। চিকিৎসকের নির্দেশমতো কমপক্ষে তিন থেকে ৪মাস একটানা ঔষধ সেবন করলে টিউমার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
স্তনে টিউমার কেন হয়?
স্তনে টিউমার হওয়ার কারণ একটি নির্দিষ্ট কারণ নেই। এটি একটি সমস্যা যা একটি কমপক্ষে সংশ্লিষ্ট অংশের সামান্য কিছু কারণের কারণে সংঘটিত হতে পারে।
স্তনে টিউমার হওয়ার কিছু সাধারণ কারণগুলি হলো:
* বয়সের উত্তরস্থান: বয়সের সাথে সাথে স্তনে টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে।
পরিবারে স্তন ক্যান্সার এর রোগ ইতিহাস:
* স্তন ক্যান্সার রোগের জন্য পরিবারে রোগের ইতিহাস থাকলে স্তনে টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বেশি হয়।
পুরুষদের সাথে সম্পর্ক:
* একটি গবেষণার ফলে বুঝা গেছে যে, স্তনের টিউমার পুরুষদের সাথে কিছু বিশেষ সম্পর্কের কারণে হতে পারে।
ধূমপান ও পান করা:
* ধূমপান ও পান করা স্তনের টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।