প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
কিডনিতে পাথর জমার অন্যতম কারণ শরীরে পর্যাপ্ত পানির অভাব। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে ও পানিস্বল্পতার কারণে কিডনিতে চাপ পড়ে। অল্প পরিমাণে ঘন ঘন প্র¯্রাব তৈরি হয়। এতে পাথর তৈরির আশঙ্কা বাড়ে। ঘন ঘন প্র¯্রাবের ইনফেকশন এবং চিকিৎসায় অবহেলার ফলে অনেক সময় মূত্রনালি সরু হয়ে যেতে পারে, যাকে বলা হয় স্টেনোসিস। এতে পাথর জমার ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া থাইরয়েড ও প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির কিছু রোগ, টিউমার, প্রস্টেট গ্রন্থির রোগ, গাউটি আর্থ্রাইটিস রোগের ফলেও পাথর হতে পারে। শরীরের কিছু খনিজ উপাদান, যেগুলো পাথর তৈরিতে বাধা দেয় সেগুলো কমে গেলে। যেমন- প্রস্রাবে সাইট্রেট, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্কের পরিমাণ কমে গেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পাশাপাশি জিনগত ও পরিবেশগত কিছু কারণও দায়ী।
লক্ষণ
* পাথর কিডনি থেকে মূত্রনালিতে এসে আটকা পড়লে মূত্রনালিতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এ পাথরের আকার ছোট হলে লক্ষণ নাও থাকতে পারে। ৪ মিলিমিটারের কম আকারের কণা অনেক সময় প্র¯্রাবের সঙ্গেই বের হয়ে আসে।
* প্র¯্রাবে জ্বালাপোড়া হবে। গাঢ় ও লালচে রঙের প্র¯্রাব বা প্রস্রাবে হালকা রক্ত যেতে পারে।
* কোমরের কিছুটা ওপরে পিঠের অংশে ব্যথা হবে। ওই ব্যথা নিচের দিক থেকে প্রস্রাবের নল ও ঊরু পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। এ ব্যথাও ধীরে ধীরে তীব্র আকার ধারণ করে।
* বারবার প্রস্রাবের অনুভূতি হবে এবং অল্প পরিমাণে বারবার প্রস্রাব হবে। বমি বা বমিভাবও থাকতে পারে। জ্বর থাকতে পারে।
চিকিৎসা
রোগীর প্রস্রাব পরীক্ষা করলে লোহিতকণিকা, পাস-সেল বা পাথর পাওয়া যায়। চিকিৎসক রোগীর প্রয়োজনমতো এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম বা সিটি স্ক্যান করেন। কিডনির পাথর ৪ মিলিমিটার বা তার থেকে ছোট হলে সেটি নিজেই প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে রোগীদের বেশি করে পানি পান করতে বলা হয়। প্রয়োজনে ব্যথার ওষুধ দেওয়া হয়। আর কয়েক সপ্তাহ পরপর এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান করে দেখতে হয় পাথরটা কতটুকু নেমেছে বা প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে গেছে কিনা।
পাথরের আকার বড় হলে মূত্রনালির ক্ষেত্রে শকওয়েভ লিথোট্রিপসি ও নিউমেটিক লিথোট্রিপসি দিয়ে পাথর গুঁড়ো করে বের করে আনা যায়। এখন অত্যাধুনিক লেজার লিথোট্রিপসির মাধ্যমেও এর উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে। অন্য পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে- নেফ্রোলিথোটমি, স্টেন্টিং, ইউরেটারোস্পি ইত্যাদি। তবে অন্য কোনো রোগের কারণে পাথর তৈরি হলে আগে সেটার চিকিৎসা জরুরি।
অনেক সময় পুরুষের প্রস্টেট বড় হলে তা কেটে অপসারণ করতে হয়। থাইরয়েড বা প্যারাথাইরয়েড রোগ থাকলেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। বারবার সংক্রমণের ফলে নালি সরু হলে সার্জারির মাধ্যমে সেটা ঠিক করা লাগতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়
আমাদের রেচনতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে পাথর জমা রোধ করতে পানি পানের বিকল্প নেই। দিনে তিন-চার লিটার পানি পানেই অনেক জটিল শারীরিক অসুস্থতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
পাশাপাশি পরিমিত এবং পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা গেলে পাথর সহজে তৈরি হবে না। পুষ্টিবিদরা এ ব্যাপারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকেন। খাদ্যে লবণের পরিমাণ কমাতে হবে। এ ছাড়া নিয়মিত হাঁটার অভ্যাসও আমাদের বৃক্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
যাদের বারবার প্রস্রাবের সংক্রমণ দেখা দেয়, তাদের বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং চিকিৎসায় দেরি করা যাবে না।
মূত্রনালির পাথর কখনো কখনো মেডিকেল ইমার্জেন্সি আকার ধারণ করতে পারে। চিকিৎসায় বিলম্ব কিছু ক্ষেত্রে প্রাণঘাতীও হতে পারে। তবে আশার কথা হলো, এ রোগের সর্বাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা আমাদের দেশেই রয়েছে।