সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

চোখের সমস্যায় আকুপ্রেশার চিকিৎসা
অধ্যাপক কে. এম. মেছবাহ্ উদ্দিন

(৯ম পর্ব ॥ পূর্ব প্রকাশিতের পর)

চোখের গঠন ও কার্যপ্রণালী ক্যামেরার সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে। একটি সুস্থ চোখ ২৫ সেন্টিমিটার থেকে অসীম দূরত্বের বস্তু স্পষ্ট দেখতে পারে। চোখের সামনের উত্তল স্বচ্ছ আবরণকে কর্ণিয়া বলে। এর মধ্য দিয়েই বাইরের আলো চোখে প্রবেশ করে। এটি জানালার কাজ করে। কর্ণিয়ার পেছনে অবস্থিত অস্বচ্ছ পর্দাকে আইরিশ বলে। এটি আলো নিয়ন্ত্রণ করে। চোখের মণির পেছনে স্বচ্ছ নমনীয় পদার্থের পি-টি চক্ষুলেন্স। লেন্সের পেছনে অক্ষিগোলক সংলগ্ন ¯œায়ুতন্ত্রের তৈরি গোলাপী পাতলা আবরণকে রেটিনা বলে। চোখে আলো পড়লে রেটিনায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং মস্তিষ্কে দর্শন অনুভূতি জাগায়।

চোখের সমস্যার কারণ : জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়া, চোখে অ্যালার্জি, ক্ষীণদৃষ্টি, দীর্ঘদৃষ্টি বা দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া, চোখে ছানিপড়া ও গ্লোকোমা ইত্যাদি।

জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়া : সাধারণত ভাইরাস অথবা অন্য কোনো জীবাণু দ্বারা চোখ আক্রান্ত হলে চোখ লাল হয়, ফুলে যায়, চুলকায় ও পানি পড়ে ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।

চিকিৎসা : ৩৫নং বিন্দুতে দিনে দুবার, চোখের ১নং ব্যায়াম দিনে ৩/৪ বার অনুশীলন করলে এবং সকাল-বিকেল সূর্যের রশ্মি গ্রহণ করলে দ্রুত আরোগ্য লাভ হয়।

চোখে অ্যালার্জি : অ্যালার্জি অধ্যায়ে বর্ণিত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ৩৫নং বিন্দুতে দিনে দুবার, চোখের ২নং ব্যয়াম দিনে ৩/৪ বার অনুশীলন করলে এবং সকাল-বিকেল সূর্যের রশ্মি গ্রহণ করতে হবে।

ক্ষীণদৃষ্টি : যখন কোনো চোখ কাছের (২৫ সে. মি.-এর কম) বস্তু দেখতে পায় কিন্তু দূরের বস্তু দেখতে পায় না তাকে ক্ষীণদৃষ্টি বলে। ৩৫নং বিন্দুতে দিনে দুবার ও অনুসারে চোখের চতুর্দিকের হারে দিনে দুবার চাপ দিলে ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

দীর্ঘদৃষ্টি বা দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া : যখন কোনো চোখ দূরের (২৫ সে. মি.-এর বেশি) বস্তু দেখতে পায় কিন্তু কাছের বস্তু দেখতে পায় না তাকে দীর্ঘদৃষ্টি বলে। আবার চল্লিশ বছর বয়সের ব্যক্তি কাছে ও দূরে উভয় ক্ষেত্রেই ভালো দেখতে পায় না। চশমা ব্যবহারই এদের একমাত্র চিকিৎসা। যাদের পিত্তপ্রবাহ স্বাভাবিক নয় এবং যারা ডায়েবেটিসে ভোগেন তাদের দৃষ্টিশক্তি খুব দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। অল্প বয়সেই তাদের চোখে ছানি পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

চিকিৎসা : ক) ২২, ২৩, ২৫, ২৮ ও ৩৫নং বিন্দুতে দিনে দুবার নিয়মিত চিকিৎসা করতে হবে এবং সপ্তাহে ২ দিন সকালে সূর্যের রশ্মি গ্রহণ করলে দৃষ্টিশক্তি অপরিবর্তিত থাকবে এবং চোখে ছানিপড়া থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

চোখে ছানিপড়া : ঞযব অসবৎরপধহ অংংড়পরধঃরড়হ ড়ভ ঊুব ঝঢ়বপরধষরংঃং যধাব ধফসরঃঃবফ ঃযধঃ "ধঢ়ঢ়ৎড়ীরসধঃবষু ঃড়ি- ঃযরৎফ ড়ভ নষরহফহবংং ভৎড়স পধঃধৎধঃব রং ড়ভ ঃযব ড়াবৎ ৫৫ ুবধৎং ঃুঢ়ব, ভড়ৎ যিরপয হড় পধঁংব যধং নববহ ঢ়ৎড়াবফ. ঞযরং যধং নববহ ষধনবষষবফ ঃযব ংবহরষব ঃুঢ়ব. ঞযব নধংরপ পধঁংবং ড়ভ ংবহরষব পধঃধৎধঃবং রহ যঁসধহং ধৎব ংঃরষষ হড়ঃ পষবধৎষু ঁহফবৎংঃড়ড়ফ." আমেরিকান চক্ষু বিশেষজ্ঞগণ স্বীকার করেন যে “মোট অন্ধত্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই হয় ছানির কারণে এবং এদের বয়স ৫৫ বছরের উপরে, এর কোনো কারণ প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। একে বার্ধক্যজনিত ছানি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বার্ধক্যজনিত ছানির মূল কারণ এখনো যানা সম্ভব হয় নাই।”

অপপড়ৎফরহম ঃড় ঃযব ঊুব অংংড়পরধঃরড়হ ড়ভ ঃযব সড়ংঃ ধফাধহপবফ হধঃরড়হ ঢ়ৎবাবহঃরড়হ ড়ভ পধঃধৎধপঃ রং হড়ঃ ঢ়ড়ংংরনষব. “উন্নত বিশে^র চক্ষু সংস্থাগুলোর বর্ণনা অনুসারে চোখে ছানিপড়া প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।” কিন্তু আকুপ্রেশার এই ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি প্রাথমিক অবস্থায় ছানি শনাক্ত করা সম্ভব হয় তবে ছানিপড়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ছানিপড়ার মূল কারণ : ১. চোখে বিদ্যুৎপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হলে : আমাদের শরীরে যে বায়োবিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, কোনো কারণে চোখে এই বিদ্যুৎপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হলে চোখের কার্যক্রম ধীরগতিসম্পন্ন হয়ে পড়ে। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর স্বাভাবিকভাবেই এই বিদ্যুৎপ্রবাহ ধীরগতিসম্পন্ন হয়।

২. পিটুইটারী গ্রন্থি তথা চক্ষু ¯œায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া : শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সক্রিয় ও সুস্থ থাকে উপযুক্ত পুষ্টি ও বিদ্যুৎপ্রবাহ দ্বারা চোখে পুষ্টি পৌঁছে অপ্টিক্যাল নার্ভের দ্বারা। অপ্টিক্যাল নার্ভ নিয়ন্ত্রিত হয় পিটুইটারীগ্রন্থি দ্বারা। সুতরাং অপ্টিক্যাল নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে চোখে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছতে পারে না।

৩. লসিকা গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া : আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গে-প্রত্যঙ্গে যে কার্বণ ও টক্সিন উৎপন্ন হয়, লসিকাগ্রন্থি এটিকে বের করে দেয়। কোনো গুরুতর রোগের কারণে শরীরে অতিরিক্ত কার্বন টক্সিন সৃষ্টি হলে এটিকে বের করে দিতে লসিকাগ্রন্থিকে অধিক কাজ করতে হয়। ফলে এটি ধীরগতিসম্পন্ন হয় এবং শরীরে কার্বন টক্সিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত টক্সিন অক্ষিগোলকের তরলে এবং চক্ষু লেন্সের চারদিকে জমা হতে থাকে। ফলে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে।

৪. ডায়েবেটিস : দীর্ঘদিন যাবৎ যারা ডায়েবেটিসে ভুগছেন তাদের মস্তিষ্কের তরলে ও চোখে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে চোখের ক্রিয়ার ব্যঘাত ঘটে এবং কার্বন চোখে জমতে শুরু করে।

৫. শরীরের বাড়তি তাপের কারণে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত ঐ+ আয়ন উৎপন্ন হয়, এটি অপটিক্যাল নার্ভের ক্ষতি করে।

চিকিৎসা : ক) শরীরের বিদ্যুৎপ্রবাহ তথা ব্যাটারির পাওয়ার বাড়ানোর জন্যে প্রতিদিন লোহা/তামা/রূপা/সোনা দ্বারা চার্জিত পানি দুই গ্লাস থেকে এক গ্লাস করে দু মাস পান করতে হবে। বার্ধক্য বিন্দুতে দিনে ২/৩ মিনিট চাপ দিন।

খ) দেহ থেকে টক্সিন বের করে দিন

গ) ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসা করুন।

ঘ) প্রথমে একাধারে সাতদিন সূর্যের রশ্মি গ্রহণ করুন। এরপর হতে সপ্তাহে দুদিন রশ্মি গ্রহণ করুন।

ঙ) প্রতিদিন দুবার চোখের উভয় ব্যায়াম অনুশীলন করুন।

চ) ৩, ৮, ১৬ ও ৩৫নং বিন্দুতে দিনে দুবার চাপ দিন।

সামান্য গোলমরিচের গুঁড়া ও কয়েক ফোঁটা পানি একটি পরিষ্কার পাথরের উপর রেখে ভালোভাবে ঘষে দু চোখে দু ফোঁটা লাগান যদিও কিছুক্ষণ জ¦লবে কিন্তু চোখ থেকে টক্সিন ও কার্বন বের হয়ে আসবে এবং চোখ পরিষ্কার হয়ে যাবে।

চোখের ব্যায়াম : চোখ দুটো বড় করে উপরের দিকে তাকান। তারপর জিহ্বা যতোটুকু সম্ভব ঠেলে মুখের বাইরে নিয়ে আসেন। এভাবে ৫/৬ বার পুনরাবৃত্তি করেন। ছানিপড়া রোধ করতে এই ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া ও চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি রোগের জন্যে খুবই কার্যকারী।

চোখের ব্যয়াম-২ : পাপড়ি দুটি বন্ধ করে চোখের উপর চাপ দিয়ে ১৫/ ২০ সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে রাখুন। আবার চোখ খুলে ১৫/২০ সেকেন্ড রাখুন। এভাবে ৫/৬ বার পুনরাবৃত্তি করেন।

রশ্মি গ্রহণের পদ্ধতি : সূর্যোদয়ের ৩০ মিনিট পরে অথবা সূর্যাস্তের ৬০ মিনিট পূর্বে সূর্যের দিকে একনাগাড়ে ৫ মিনিট তাকিয়ে থাকুন।

বিকল্প উৎস : যদি সূর্যের রশ্মি সরাসরি গ্রহণ করা সম্ভব না হয়, তবে বৈদ্যুতিক বাল্ব থেকেও রশ্মি গ্রহণ করা যায়। সেক্ষেত্রে সবুজ রঙের ৬০ থেকে ১০০ ওয়াটের একটি বাল্ব নিন। চোখ থেকে ২০ ইঞ্চি দূরে রেখে প্রতিদিন দুবার ১০ মিনিট করে রশ্মি গ্রহণ করুন। রঙিন বাল্ব না পাওয়া গেলে সাধারণ বাল্বের গায়ে প্রয়োজনীয় রঙের র‌্যাপিং পেপার চার ভাঁজ করে পেঁচিয়ে নিয়েও রশ্মি গ্রহণ করা যায়। (চলবে)

অধ্যাপক কে. এম. মেছবাহ্ উদ্দিন : বিভাগীয় প্রধান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজ। ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।

[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]

* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখাসহ স্বাস্থ্যবিষয়ক যে কোনো প্রশ্ন পাঠান।

ই-মেইল : রহঃড়.ধষধসরহ@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়