প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
বর্তমানে ডিভোর্সের জন্যে সবচে’ বেশি দায়ী অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম!
বর্তমানে বেশি হারে ডিভোর্সের জন্য দায়ী কোন্ বিষয়টি? এ বিষয়ের উত্তর খুঁজতে বেরিয়ে এলো চমকপ্রদ এক তথ্য। যা গত ক’দিন যাবত অনলাইনে একটি পেইজে পাঠকের নিকট প্রশ্নের উত্তরে জানা গেছে। পাঠকদেরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল : বর্তমানে বেশি হারে ডিভোর্সের জন্যে দায়ী কোন্ বিষয়টি? এ প্রশ্নের জবাবে ৭০ ভাগ উত্তর দিয়েছেন : বর্তমানে ডিভোর্সের জন্যে বেশিরভাগ দায়ী অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো। যেমন-ফেসবুক, রিলস, এক্স (টুইটার), ভাইবার ইত্যাদি।
এ ব্যাপারে এসএম নিশাত নামের একজন বলেছেন, তথ্য-প্রযুক্তির অভিশাপই বর্তমানে বেশি হারে ডিভোর্সের জন্য দায়ী।
ফয়সাল নামের একজন লিখেছেন, ‘ইন্টারনেট+স্মার্ট ফোন= ডিভোর্স।
ডিভোর্সের জন্য দায়ী বলে আঃ হান্নান নামের একজন বলেছেন, স্মার্টফোন তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। আরও কিছু পাঠকের জবাব, বর্তমানে অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ একে অন্যকে ভালোভাবে না বুঝে, না জেনে সহজেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। এছাড়া মেটার রিলস-এর মাধ্যমে নারীরা যে সব অবাঞ্ছিত অঙ্গভঙ্গি ও নানারকম দৈহিক কসরত দেখায়, তাতে পুরুষ বা উঠতি বয়সের তরুণ-যুবকরা সহজেই আকর্ষিত হয়। পরবর্তীতে এসব যোগাযোগ মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যে সহজেই একটা বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে তা’ বিভিন্ন প্রকার সম্পর্কে রূপ নেয়। এখানে পরিচিত হয়ে এক পর্যায়ে বাস্তব জগতে এসে কেউ কেউ প্রতারিতও হয়, কেউ কেউ অপহরণ ও ধর্ষণের শিকারও হয়। আবার কেউ কেউ ভালোবেসে ঘর বাঁধে।
তবে একটা পর্যায়ে তাদের এই মোহ ভাঙ্গে, একে অপরের প্রতি বিরূপ হয়ে উঠে বিভিন্ন কারণে। এরপর ঝগড়া, ফ্যাসাদ, মারামারি, মনোমালিন্য ডিভোর্স ইত্যাদি ঘটে সংসারে। আবার অনেকে এসব যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা পরিচিত হয়ে প্রেম ও বিয়ের পর যখন সংসারে প্রবেশ করে তখন তাদের বাবা-মা, ভাই-বোনরা মনে করে এরা প্রেম করে বিয়ে না করলে হয়তো অন্য কোথায়ও এর চেয়ে সুন্দরী পাত্রী পাওয়া যেত এবং সেখান থেকে অনেক যৌতুক পাওয়া যেত। এসব নিয়ে সংসারে কলহ তৈরি, এরপর এক পর্যায়ে তা ডিভোর্সে রূপ নেয়।
আবার কেউ কেউ অভিমত দিয়েছেন, এসব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিবাহিত নারী-পুরুষ খুব সহজেই একে অপরের কাছাকাছি আসতে পারে। ফলে অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে বিবাহিত নারী-পুরুষ দ্রুত একে অপরের কাছাকাছি এসে পরকীয়ায় জড়িয়ে যায়। এই পরকীয়ার মাধ্যমে পরে একজনের স্ত্রী অপরজনের সাথে চলে যায়। পরবর্তীতে জীবনের কষাঘাতে যৌবন শেষ হয়ে এলে এসব বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য, ঝগড়া ফ্যাসাদ তৈরি হয়। এর পরিণতি হয় তিক্ততা ও ডিভোর্স।
নূরুল আবছার নামে চট্টগ্রাম সন্দ্বীপের একজন বলেছেন, বর্তমানে ডিভোর্সের কারণ উচ্চাভিলাষী কাবিন ও ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব।
এছাড়াও শতকরা ২ ভাগ অভিমত দিয়েছেন, বর্তমানে ডিভোর্সের কারণ হচ্ছে কুফু মিলিয়ে বিয়ে না করা ও যৌন অক্ষমতা। আবার কেউ কেউ বলেছেন, একে অপরের সাথে বনিবনা না হওয়া বা আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বোঝাপড়া) না হওয়া। কেউ কেউ বলেছেন, নারীদের অতিরিক্ত চাহিদা পূরণে পুরুষের ব্যর্থতা।
হারুনুর রশিদ নামের একজন বলেছেন, বর্তমানে ডিভোর্সের কারণ আল্লাহর বিধান ও রসুলের বাণী না জানার কারণে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, পরকীয়া, অতিরিক্ত কাবিন ও যৌতুক প্রথার কারণ। কেউ কেউ বলেছেন, মোবাইল আসক্তি, স্টার জলসা নামের ভারতীয় টিভি চ্যানেলের কুপ্রভাব ইত্যাদি।
এম এ আজাদ খান নামের একজন বলেছেন, ‘স্যার মোবাইল ইউজ করার কারণে পরকীয়া, যার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ বেশি হচ্ছে।
সোহাগ রাজ নামের একজন অভিমত দিয়েছেন, মোবাইল আর একজনের প্রতি আরেকজনের না বিশ্বাস (অবিশ্বাস)।
ওয়ারিশ উদ্দিন আল মাসুদ নামের একজন বলেছেন, বর্তমানে ডিভোর্সের কারণ হচ্ছে ধৈর্যশীল না হওয়া।
এইচএম শাহীন শাহ ওসমানী নামের একজন বলেছেন, মেয়েদেরকে অবাধে চলাফেরার স্বাধীনতা দেওয়া।
মোঃ আসলাম শিকদার নামের একজন বলেছেন, নারী ও পুরুষ সমান অধিকার। পরকীয়া প্রেম ও নারীর ক্ষমতায়ন আজকের বেশি বেশি ডিভোর্সের জন্যে দায়ী।
মাহফুজ আলম নামের একজন বলেছেন, স্বামীর মুখে মুখে তর্ক করা এবং পরকীয়া ডিভোর্সের জন্যে দায়ী।
মুহামিনুজ্জামান মুরাদ নামের একজন বলেছেন, ধর্মীয় শিক্ষার অভাব ও নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা এর অন্যতম কারণ।
ফরহাদ নামের একজন বলেছেন, ধর্র্মী গেয়ান (জ্ঞান) না থাকা, মা-বাবার উল্টো শোলা (শলা) পরামর্শ দেয়া, ধৈর্য্য না ধরা, পরকীয়ায় লিপ্ত থাকা।
মোঃ আব্দুল্লাহ আল জাবেদ নামের একজন বলেছেন, মানুষের চেয়েও সোশ্যাল মিডিয়ার দাম বেশি...সময়টা মানুষকে না দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে দিই এবং আমাদের চাহিদাও সোশ্যাল মিডিয়ার উপযোগী হয়ে উঠে। ঘরের মানুষকে পর করে বাইরের মানুষকে আমরা আপন ভাবা শুরু করি। তখনই আমাদের সংসার ভেঙ্গে যেতে থাকে।
মোঃ রাকিবুল হাসান নামের একজন বলেছেন, প্রথম হলো মোবাইলে আসক্তি, দ্বিতীয় ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম। এই দুইটা এক সাথে যে মেয়ের কাছে থাকবে অবশ্যই ডিভোর্স হবার একটা কারণ হবে।
সফিকুল ইসলাম নামের একজন বলেছেন, ইসলামি শিক্ষার অভাব আর অবাধ মেলামেশা আধুনিক বেশি ডিভোর্সের অন্যতম কারণ।
সিনথিয়া সাথী নামের একজন বলেছেন, প্রকৃত ভালোাবাসা এবং বিশ্বাসের অভাব।
আনিসুর রহমান মুন্না নামের একজন বলেছেন, অনলাইন ডিজিটাল আর আধুনিক এবং অপসংস্কৃতির যুগ। সাথে সাথে একে অন্যকে বুঝার বিশাল একটা ব্যবধান। আর প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মেয়েদের বিনোদন হিসেবে ব্যবহার করা।
নূর রাতুল নামের একজন বলেছেন, ডিভোর্স আসলে একটা ট্রেন্ড ভাই, আর আমরা বাঙালি জাতি ট্রেন্ডকে বেশি ফলো করি, যেমনটা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে হয়। কথা নেই বার্তা নেই, পান থেকে চুন খসলেই ডিভোর্স, অথচ সংসার জীবন আমাদের দাদা-দাদী, নানা-নানী এবং আমাদের মা-বাবারাও করে আসতেছে, তাদের মধ্যে সুখ বিলাসিতা ছিলো না কিন্তু শান্তি ছিলো। তারা ঝগড়া করতো কিন্তু কেউ কাউকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারতো না। সমাজ ব্যবস্থা এখন ট্রেন্ড-এর উপর চলছে। তাই ধরে নিবেন ডিভোর্সটাকে তারা ট্রেন্ড হিসেবেই অনুসরণ করে।
লিটন চৌধুরী নামের একজন বলেছেন, অতিরিক্ত দেনমোহর আর মেয়েদের একক পরিবার হিসেবে থাকতে চাওয়া। যেমন স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে আর মেয়ের বাবার বাড়ির লোকজন।
তুষার আহমেদ, আরটিআর আমির, হারুনুর রশিদ, নাজমূল সিদ্দিক, সাইফুর রহমান, মিজান কক্স, রোকনুজ্জামান, এবি বাকের সিদ্দিক, আবদুল করিম, অনন্যা আক্তার, ফরাজি নিশাদ, সাফিয়া আক্তার সহ আরো অনেকেই বলেছেন, সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম বা অনলাইন মিডিয়ার কারণ।
মুশতাক খান নামের একজন বলেছেন, ‘সন্দেহ, অবাধ মেলামেশা ও একে অপরকে গুরুত্ব না দেওয়া।’
ডিভোর্সের কারণ সম্পর্কে এমন অনেক ধরনের এক থেকে দুই ভাগ পর্যন্ত অভিমত পাওয়া গেছে। তবে বেশিরভাগ (প্রায় ৭০%) মানুষের অভিমত, বর্তমানে বেশি হারে ডিভোর্সের জন্য দায়ী হচ্ছে অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। এ জন্যেই বর্তমানে পরকীয়া বাড়ছে, পরকীয়ায় জড়িয়ে তুচ্ছ কারণেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। আবার অনলাইন প্লাটফর্মে পরিচিত হয়ে, স্বামী-সন্তান রেখে এসে প্রেমিককে না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় নারীকে কাঁদতেও দেখা যায়। যা গত ক’দিন আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। শুধু ক’দিন আগেই নয়, বর্তমানে এটা হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে যে, স্মার্টফোনে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে অবশেষে দুটো দিক হারাচ্ছে নারীরা। এসব বিষয় উঠে এসেছে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে।
এদিকে বাংলাদেশের পরিচিত জল্লাদ শাহজহান জানিয়েছেন চমকপ্রদ এক তথ্য। তিনি বিভিন্ন মামলায় ৪৪ বছর কারাভোগের পর জেল থেকে মুক্তি পান ২০২৩ সালের ১৮ জুন। কারামুক্তির পর তার সাথে পরিচয় হয় এক টিকটকার তরুণীর সাথে। ওই তরুণী ও তার মায়ের কারসাজিতে ২১ ডিসেম্বর তার সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে উভয়ের বিয়ে হয়। এরপর ওই মেয়ে ও তার মা বিয়ের আগে নানা কৌশলে তার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নেয়। আর বিয়ের দিন একটি অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করে তার গোছানো আরও ১০ লাখ টাকা নেয়। বিয়ের প্রায় দুই মাসের মাথায় তার স্ত্রী বাসায় থাকা আরও সাত লাখ টাকা ও গহনা নিয়ে পালিয়ে যায়। টিকটকার প্রতারক চক্রের নারী সদস্য ২০ বছরের তরুণী সাথী আক্তার ফাতেমাকে বিয়ে করে ১৮ লাখ টাকা খুইয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে আলোচিত জল্লাদ শাজাহান বলেন, এর চেয়ে আমার জেলখানাই ভালো ছিলো! এ ঘটনার ক’দিন পর আদালতে গিয়ে স্ত্রী সাথী উল্টো শাহজাহানের নামে যৌতুকের মামলা করে--এমনটাই অভিযোগ শাহজাহান ভূঁইয়ার।
এ ব্যাপারে একজন নারী লেখক তার ফেসবুকে লিখেন, “রিল জিনিসটা খুব খারাপ। একটা রিলে ক্লিক পড়ল তো ব্যস, কয়েক ঘণ্টা কেটে যাবে একের পর এক রিল দেখতে দেখতে। এ অনেকটা ড্রাগের মতো, একবার নিলে বারবার নিতে হয়। রক্ত যেমন ড্রাগকে ডাকে, রক্ত রিলকেও ডাকে। রিলের নেশা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে না পারলে ক্রিয়েটিভিটি গোল্লায় যাবে। রিল ক্রিয়েটিভ মানুষের জন্যে নয়। যাদের কাজ কর্ম নেই, সময়ের কোনো দাম নেই, টাইম পাস করার জন্যে টাইম খোঁজে, রিল তাদের জন্যে ঠিক আছে।
আর এই টাইম পাস করতে গিয়েই মূলত অজ্ঞানতার জন্যে এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে নারী-পুরুষ আটকে যায় এবং কারো কারো জীবনে নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা।
তবে শেষ কথা, সোমা খাতুন নামের একজন নারী লিখেছেন, মানিয়ে, গুছিয়ে নেয়ার। এখন সেটা সবাই পারে না। মানিয়ে নিতে হবে। যাকে বলে কম্প্রোমাইজ। স্বামী-স্ত্রী যেমনই হোক না কেন, স্বভাব-চরিত্র যেমন হোক, ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে জানতে হয়। প্রথম প্রথম কষ্ট হবে। কারণ ভালো সময় আসতে দেরি হয়। একটা মেয়ে বা ছেলে দু’জন কখনই খারাপ হবে না। সম্পর্কের মধ্যে একজন ভালো থাকবেই, সেই ভালো মানুষটাকেই খারাপ মানুষটাকে পরিবর্তন করতে হবে নিজের সবটুকু দিয়ে, তাহলেই ডিভোর্স বলে জিনিসটা থাকবে না। আমার সাথে এটা হয়েছে তাই আমি বুঝি, বলতে পারলাম।
মূলত যে কোনো প্রযুক্তির আবির্ভাব হয় মানুষের কল্যাণের জন্যে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগের নানা আবিষ্কার মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যেই করা হয়ে থাকে, কিন্তু কিছু কিছু নেতিবাচক মানুষ এগুলোকে নিজস্ব স্বার্থের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বলে এসব নতুন আবিষ্কারের দুর্নাম হচ্ছে। আমরা যদি প্রতিটি জিনিসের সঠিক ব্যবহার করতে জানি, তাহলে আর এসব সমস্যা হবার কথা নয়। যেমন কবি বলেছেন, ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।’ (গবেষণামূলক ফিচার)