প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
তথ্য আমার জীবনকে আমূল পরিবর্তন করেছে চিকিৎসাজ্ঞানে : মুঃ আঃ হোসাইন পাটোয়ারী
-----------মিজানুর রহমান রানা-----------
তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে আপনি দীর্ঘদিন কাজ করছেন। এই কাজ করার ক্ষেত্রে আপনি কী কী সুবিধা ও অসুবিধা ভোগ করেছেন?
মু. আ. হোসাইন পাটোয়ারী : ঢাকা শহর আমি খুব একটা চিনি না। একবার ঢাকায় এক ডাক্তারের কাছে যাবো, তো মহাচিন্তায় পড়ে গেলাম। পরে গুগল ম্যাপের সহায়তা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছি। না হলে জানাশুনা এমন কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে যেতে হতো, নতুবা ঢাকায় গিয়ে জিজ্ঞাসা করে করে গন্তব্যে পৌঁছাতে হতো। এতে আমার সময় ও অর্থ উভয় নষ্ট হতো। গুগল ম্যাপের মাধ্যমে আমি যে তথ্য পেয়েছি তা আমার চলাচলকে অনেক সহজ করেছে। এছাড়া তথ্য আমার জীবনকে আমূল পরিবর্তন করেছে চিকিৎসা জ্ঞানে। আমার কোন্ খাদ্য গ্রহণ করা উচিত, কীভাবে ফিটনেস ঠিক রাখতে হবে, পুষ্টিকর খাবার-দাবার সম্পর্কেও তথ্য-প্রযুক্তি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে ব্যাপক উপকৃত হয়েছি। আমি কম্পিউটার পরিচালনা করতে পারতাম। কিন্তু অনলাইন কাজগুলো অনেক কিছুই বুঝতে পারতাম না। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখেছি। ঘরে বসে অনলাইনের বহু কাজ শিখেছি। এ শিক্ষাই আমার জীবিকায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে সুবিধা পেয়েছি বেশি। তবে অসুবিধাও রয়েছে। ফেসবুক, ইউটিউবসহ সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর মাধ্যমে বহু তথ্য আদান প্রদান হয়। প্রয়োজনীয় তথ্য দেখতে গিয়ে মজার মজার ভিডিও চোখের সামনে ভেসে উঠে, এতে আকৃষ্ট হয়ে দেখি।
সিগারেটে যেমন নিকোটিন থাকে, তেমনি সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে এক ধরনের নিকোটিন থাকে। যা আপনাকে আকর্ষণ করে রাখবে। এখান থেকে বের হতে দিবে না। এগুলো সাময়িক আনন্দ দিলেও সময়ের অনেক অপচয় হয় আর চোখের, মস্তিষ্কের ব্যাপক ক্ষয় হয়।
তথ্য-প্রযুক্তি কণ্ঠ : বর্তমান প্রজন্ম স্মার্টফোন ব্যবহার করে বেশিরভাগ সময় গেম খেলছে। এতে তাদের মেধা বিকাশে কতটুকু অন্তরায় ঘটছে?
মু. আ. হোসাইন পাটোয়ারী : সন্তানরা গেমস খেলতে পারে অল্প সময়ের জন্যে। বাস্তবে আমরা দেখি দীর্ঘ সময় তারা গেমস খেলছে। এতে তাদের জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। আনন্দ প্রয়োজন রয়েছে। তো সন্তানরা কীভাবে আনন্দ করবে সেটা নির্ভর করে অভিভাবকের উপর। যেহেতু আমাদের দেশে বেশিসংখ্যক অভিভাবক এখনও সচেতন নয়, সন্তানদের মন মানসিকতা নিয়ে তারা ভাবেন না, সেহেতু রাষ্ট্র বিদ্যালয়গুলোতে খেলাধুলা আয়োজনের মাধ্যমে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে পারে। খেলাধুলা করলে সময় নষ্ট হয় না। মেধা বিকাশ হয়। এমনকি বেসরকারি পর্যায়ে খেলাধুলাকে আরো ব্যাপকতায় নিতে পারে। বিদ্যালয়গুলোতে বছরের শুরুতে খেলার যে আয়োজন করে তা একজন শিক্ষার্থীর জন্যে খুবই অপ্রতুল। এমনকি মাঠঘাটও নেই যে শিক্ষার্থীরা খেলবে। ফলে পড়ালেখার চাপে এক পর্যায়ে আনন্দের জন্যে সন্তানরা গেমসে ঝুঁকে পড়ে। এটা খারাপ দিক নয়। যখন এটার প্রতি তাদের নেশা হয়ে যায় তখন এটাকে খারাপ দিক বলা যেতে পারে। যা তাদের জন্যে ক্ষতিকর।
তথ্য-প্রযুক্তি কণ্ঠ : আধুনিক প্রযুক্তিগুলো মানুষের জন্যে অভিশাপ, নাকি আশীর্বাদ? সেক্ষেত্রে কীভাবে?
মু. আ. হোসাইন পাটোয়ারী : আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের যোগাযোগ এবং অন্যদের সাথে সংযোগ করার পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এটি বিশ্বকে আরো ছোট এবং আরও সংযুক্ত জায়গা করে তুলেছে। তথ্যকে আরো দ্রুতগতিতে এক্সেস করা যাচ্ছে। মানুষের কাজকে সহজ করেছে। যেমন স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্যান্য ডিভাইস ক্রমাগত ব্যবহারে আমাদের দৈনন্দিন বহু কাজ সহজ হচ্ছে। তবে এগুলোর প্রতি মানুষের আসক্তিও বাড়ছে। ফলে একে অপরের থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি। মানসিকে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হচ্ছে। স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও বাড়ছে। আধুনিক প্রযুক্তিগুলো অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। তবে এ প্রযুক্তির ব্যবহারে সচেতনও হতে হবে।
তথ্য-প্রযুক্তি কণ্ঠ : আপনি কি মনে করেন রোবোটিক প্রযুক্তি মানুষের জন্যে ভবিষ্যতে হুমকি হয়ে উঠবে? কীভাবে? কতটুকু?
মু. আ. হোসাইন পাটোয়ারী : রোবট হচ্ছে একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা। মানুষ যেভাবে কাজ করতে পারে সেভাবে সে কাজ করে। রোবটের কাজ দেখে মনে হয় এর বুদ্ধিমত্তা আছে। আসলে এর মধ্যে সফটওয়্যার দেয়া রয়েছে। সফটওয়্যার-এর মাধ্যমে সে নিজেকে উপস্থাপন করে। মানুষের মতো তার বুদ্ধিমত্তা নেই। তবে বিজ্ঞানীরাও বসে নেই। রোবটকে আরো আধুনিক ও নিখুঁতভাবে তৈরি করার প্রচেষ্টা তারা অব্যাহত রেখেছে। বেশ কিছু সিনেমায়, লেখকের লেখা বইতে রোবটকে হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করলেও ভবিষ্যতে কতটুকু হুমকি হবে সেটা সময়ই বলে দিবে। যদি হয়েও যায় তাহলে সমাধানও বের করবেন বিজ্ঞানীরা।