প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
IELTS- ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম বিশ্বের সব থেকে জনপ্রিয় ইংরেজি ভাষার পরীক্ষা। ভাষাগত মূল্যায়নে বিশ্বের কিছু অগ্রণী বিশেষজ্ঞ পরীক্ষাটি তৈরি করেছেন এবং এতে আপনার ইংরেজির সবক’টি দক্ষতাণ্ড রিডিং, রাইটিং, স্পিকিং ও লিসেনিং মূল্যায়ন করা হয়।
IELTS কী, কেন করবেন, কীভাবে করবেন?
IELTS (International English Language Testing System) হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইংরেজি ভাষার দক্ষতার সনদ। এই পরীক্ষার মাধ্যমে মূলত ইংরেজিতে আপনার দক্ষতা কতটুকু সেটি যাচাই করা হয়। IELTS পরীক্ষা দু’ধরনের হয়- একটি একাডেমিক, আরেকটি জেনারেল ট্রেনিং। যারা উচ্চশিক্ষার জন্যে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক, তাদেরকে দিতে হয় একাডেমিক পরীক্ষা। আর মাইগ্রেশন, ট্রেনিং এবং প্রফেশনালদের জন্যে জেনারেল। যে কেউ এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এই পরীক্ষা দেওয়ার জন্যে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার দরকার নেই।
টেস্ট ফরম্যাট : একাডেমিক এবং জেনারেল দুই মডিউলেই মোট চারটি বিষয়ে দক্ষতা যাচাই করা হয়- লিসেনিং, রাইটিং, রিডিং এবং স্পিকিং। লিসেনিং, রাইটিং এবং রিডিং পরীক্ষা হবে একইদিনে কোনোরকম বিরতি ছাড়া। তবে স্পিকিং পরীক্ষা হবে এক সপ্তাহ আগে অথবা পরে। পরীক্ষার আগে দিন-তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। মানে আপনাকে দুদিন পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষার সময়সীমা মোট ২ ঘন্টা ৪৫ মিনিট।
রাইটিং (Writing) : সময়সীমা-৬০ মিনিট। রাইটিংয়ে সাধারণত যাচাই করা হয় আপনি কতটুকু কল্পনাশক্তি খাটাতে পারেন। এক ঘণ্টার মাঝে আপনাকে দুটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রথম প্রশ্নে একটি গ্রাফ, চার্ট, ডায়াগ্রাম অথবা ম্যাপ দেওয়া থাকবে। সেটি দেখে আপনাকে বিশ্লেষণ করতে হবে। আর দ্বিতীয় প্রশ্নে একটি আর্গুমেন্ট অথবা স্টেটমেন্ট দেওয়া থাকে যেটির পক্ষে-বিপক্ষে আপনাকে যুক্তি উপস্থাপন করতে হবে। বলে রাখা ভালো, দ্বিতীয় প্রশ্নে প্রথম প্রশ্নের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ নাম্বার থাকে। তাই এ প্রশ্নের উত্তর আগে দেওয়াই ভালো।
প্রথম প্রশ্নের জন্যে ২০ মিনিট সময় ব্যয় করতে পারেন। প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে ১৫০ শব্দের মাঝে। অপরদিকে দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে ২৫০ শব্দের ভেতরে। আপনি চাইলে শব্দসীমার বাইরেও কিছু লিখতে পারেন, তবে কোনোভাবেই কম লেখা যাবে না। তাহলে নাম্বার কাটা যাবে। একাডেমিক এবং জেনারেল ট্রেনিংয়ের রাইটিংয়ে প্রথম প্রশ্নে একটু পার্থক্য আছে। জেনারেলের ক্ষেত্রে ডায়াগ্রাম, চার্ট ইত্যাদির জায়গায় একটি চিঠি লিখতে হয়; সেটি ফরমাল, ইনফরমাল অথবা পার্সোনাল হতে পারে। দ্বিতীয় প্রশ্ন দুই মডিউলেই একই।
স্পিকিং (Speaking) : সময়সীমা ১০-১৫ মিনিট। আপনি কতটুকু গুছিয়ে আর কতটা সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারেন, এই টেস্টের মাধ্যমে সেটিই যাচাই করা হয়। একজন ট্রেইনারের সাথে আপনার কথোপকথন করতে হবে। এই পরীক্ষাটি ৩টি অংশে ভাগ করা যায়। প্রথম অংশে আপনার ব্যক্তিগত কিছু বিষয়ে জানতে চাইবে। যেমন-আপনি থাকেন কোথায়, আপনার পছন্দের রঙ কোন্টি, আপনার শহরের বিবরণ অথবা কীভাবে আপনি বাসা থেকে পরীক্ষার হলে পৌঁছেছেন। অর্থাৎ খুব সাধারণ কিছু প্রশ্ন করবে। তারপর দ্বিতীয় অংশে আপনাকে কাগজ কলম দেবে আর একটি টপিক ঠিক করে দিবে, যেটি নিয়ে আপনাকে কিছু বলতে হবে। টপিক দেওয়ার পর আপনাকে এক-দেড় মিনিটের মতো সময় দেবে কাগজে নোট নেওয়ার জন্যে। তারপর আপনাকে টপিকের উপর মোটামুটি দুই মিনিটের মতো বলতে হবে। মনে রাখবেন, ২ মিনিট শেষ হয়ে গেলেও ট্রেইনার আপনাকে না থামতে বলার আগে না থামাই ভালো।
এরপর তৃতীয় এপিসোডে আপনাকে যে টপিক দিয়েছিলো, সেটির সাথে সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন করবে আর সেগুলোর উত্তর দিতে হবে।
লিসেনিং (Listening) : সময়সীমা-৩০ মিনিট। লিসেনিং-এ আপনাকে মোট ৪টি রেকর্ডিং শোনানো হবে। উল্লেখ্য, রেকর্ডিং-এ কনভারসেশন থাকবে ব্রিটিশ উচ্চারণে। এই চারটি রেকর্ডিং শোনার পর আপনাকে আলাদা একটি উত্তরপত্রে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। একটি রেকর্ড একবারই বাজিয়ে শোনানো হবে।
রেকর্ডিং ১- এক নাম্বার রেকর্ডিংয়ে থাকবে দু’জন ব্যক্তির মাঝে দৈনন্দিন জীবনযাপনে ব্যবহার করা হয় এমন একটি বিষয়ে কথোপকথন।
রেকর্ডিং ২- এই রেকর্ডে আপনাকে সোশ্যাল কন্টেক্সটে একটি মনোলোগ শোনানো হবে; যেমন- স্থানীয় সোশ্যাল ফ্যাসিলিটি নিয়ে একটি স্পিচ।
রেকর্ডিং ৩- এখানে সর্বোচ্চ ৪ জন ব্যক্তির মাঝে হচ্ছে এমন একটি কথোপকথন আপনাকে শোনানো হবে, সেটি কোনো ট্রেনিং অথবা শিক্ষা বিষয়ে হতে পারে; যেমন- ৩ জন ছাত্র শিক্ষকের সাথে একটি অ্যাসাইনমেন্ট অথবা প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করছে এমন।
রিডিং (Reading) : সময়সীমা-৬০ মিনিট। রিডিং-এ মোট ৪০টি প্রশ্ন থাকবে। এই প্রশ্নগুলো দিয়ে তারা আপনি একটি আর্টিকেল পড়ে মূল বিষয়টি ধরতে পারছেন কিনা, কোনো একটি বিষয়ে আপনি কতটুকু বুঝেছেন, লজিকাল আর্গুমেন্ট, স্কিমিং, লেখকের লেখার উদ্দেশ্য এবং মতামত বুঝতে পারছেন কিনা ইত্যাদি যাচাই করবে।
রিডিং টেস্টে একাডেমিক এবং জেনারেল টেস্টে একটু পার্থক্য আছে। তাই আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করছি।
একাডেমিকে আপনাকে মোট ৩টি লম্বা আর্টিকেল তুলে দিবে জার্নাল, ম্যাগাজিন, বই অথবা পত্রিকা থেকে। এই আর্টিকেলগুলো বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা অথবা জার্নাল হতে পারে। জার্নালগুলো এমন হবে, যাতে সাধারণ ছাত্ররা পড়ে বুঝতে পারে। তাই ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
জেনারেলের রিডিং একাডেমিক থেকে তুলনামূলক সহজ। এখানেও ম্যাগাজিন, পত্রিকা, বই, বিজ্ঞাপন অথবা হ্যান্ডআউট থেকে লেখা তুলে দিবে। তবে জেনারেলে একাডেমিকের মতো গবেষণা অথবা বিজ্ঞান বিষয়ক না, বরং দৈনন্দিন জীবনে আপনি মুখোমুখি হবেন এমন বিষয়ই থাকবে।
গ্রেডিং সিস্টেম কি?
IELTS-এ কোনো পাশ নাম্বার নেই। তার বদলে দেওয়া হয় ব্যান্ড স্কোর। আপনি কত নাম্বার পেয়েছেন তার উপর ভিত্তি করে ১-৯-এর মাঝে আপনাকে একটি স্কোর দেওয়া হবে। IELTS-এর চারটি মডিউল আছে- রাইটিং, রিডিং, স্পিকিং এবং লিসেনিং। এই চার মডিউলে আপনি যত পাবেন তার গড় হচ্ছে আপনার ওভারঅল ব্যান্ড স্কোর। সাধারণত ৬ বা তার উপরের স্কোর করতে পারলে সেটিকে ভালো ব্যান্ড স্কোর ধরা হয়।
প্রস্তুতি কি ঘরে বসে নিবো নাকি কোচিং-এ ভর্তি হবো?
এটি পুরোটাই আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। আপনার যদি কমিটমেন্ট থাকে, তাহলে ঘরে বসে ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। কোচিং সেন্টারে শুধু কিছু টেকনিক শিখিয়ে দেয়, বাকিটা আপনার নিজের কাছে। তবে আপনি কিছুদিন নিজে প্রস্তুতি নিয়ে তারপর একটি মক টেস্ট দিতে পারেন যেকোনো জায়গায় নিজের লেভেল যাচাই করার জন্য। মক টেস্ট দিলে পুরো প্রক্রিয়ার সাথেও পরিচিত হতে পারবেন। নিজেই প্রস্তুতির জন্য ieltsliz.com এই সাইটে যেতে পারেন। এই সাইটটি অনেক উপকারি। তাছাড়া ইউটিউব এবং বিভিন্ন সাইটের সাহায্য নিতে পারেন। আর বাসায় প্রস্তুতির জন্যে ক্যামব্রিজের IELTS-এর বইগুলো নিতে পারেন। দাম মাত্র ৬০-৭০ টাকা করে প্রতি পিস। কেনার সময় সিডি আছে কেনা তা অবশ্যই দেখে নিবেন।
কোথায় এবং কীভাবে পরীক্ষার জন্যে রেজিস্ট্রেশন করবো?
আপনি চাইলে IDP অথবা ব্রিটিশ কাউন্সিল যেকোনো একটির অধীনে পরীক্ষা দিতে পারেন। ঢাকায় ধানমন্ডি, উত্তরাসহ মোট ৫টি জায়গায় ব্রিটিশ কাউন্সিলের টেস্ট সেন্টার আছে। তাছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট এবং রাজশাহীতেও ব্রিটিশ কাউন্সিলের টেস্ট সেন্টার আছে। অনলাইন এবং টেস্ট সেন্টারে গিয়ে দুভাবেই পরীক্ষার জন্যে রেজিস্ট্রেশন করা যায়। বিস্তারিত জানার জন্যে IDP অথবা ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে সহযোগিতা নিতে পারেন।
IELTS অনেক সহজ একটি পরীক্ষা। তাই এটি নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এ পরীক্ষায় অল্প সময়ে ভালো করার কোনো সুযোগ নেই, যদি আপনি ইংরেজি চর্চার মাঝে না থাকেন। তবে যাদের বেসিক ভালো, তারা অল্প কিছুদিনের চেষ্টায় শুধু টেকনিক শিখেই ভালো রেজাল্ট করতে পারবেন। ইংরেজি মুভি দেখুন, পত্রিকা পড়ুন, খবর দেখুন টিভিতে আর কয়েক বন্ধু মিলে স্পিকিং প্র্যাক্টিস করুন। সোজা কথায় আপনাকে এর পেছনে সময় ব্যয় করতে হবে। এ পরীক্ষায় ভালো করার কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই।
তবে বর্তমানে আইইএলটিএস পরীক্ষার্থীদের জন্যে ব্রিটিশ কাউন্সিল সম্প্রতি ‘আইইএলটিএস রেডি : প্রিমিয়াম’ নামে একটি নতুন সেবার সূচনা করেছে। রবিবার (১৬ জুলাই ২০২৩ খ্রি.) প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে আইইএলটিএস পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী সহায়তা হিসেবে এই প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে। ইংরেজি ভাষা শেখানোর ক্ষেত্রে লন্ডন-ভিত্তিক নেতৃস্থানীয় ডিজিটাল শিক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘জিইএল’ এই প্ল্যাটফর্মটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছে।
নতুন এই প্ল্যাটফর্মে থাকছে ৪০টি আইইএলটিএস মক টেস্ট, আগে রেকর্ড করে রাখা ক্লাস ও ইংরেজিভাষী আইইএলটিএস বিশেষজ্ঞদের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা। এতে টাইমড ও আনটাইমড দুই ফরম্যাটের অনুশীলন পরীক্ষার মাধ্যমেই আইইএলটিএসের যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। পরীক্ষার্থীদের অনুশীলনের জন্যে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অনুশীলনীগুলোর সব উত্তরের ব্যাখ্যাও থাকবে সেখানে। প্রয়োজনীয় স্কোর অর্জন করতে পরীক্ষকরা যেমন চান, ‘আইইএলটিএস রেডি: প্রিমিয়ামে’র মাধ্যমে ঠিক সে রকম মডেল উত্তরসহ ইংরেজিতে লেখা অনুশীলন করার সুযোগ পাবেন পরীক্ষার্থীরা।
ইংরেজি পড়া ও শোনার সময় প্রতিটি প্রশ্নের ক্ষেত্রে মন্তব্য পাবেন তারা, কোথায় উন্নতি করতে হবে তা চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করা হবে তাদের। যথার্থভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীরা পরিচিতিমূলক ভিডিও দেখার সুযোগ পাবেন।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের আইইএলটিএসে নিবন্ধন করার সময় থেকে শুরু করে পরীক্ষা দেওয়ার আগ পর্যন্ত পরীক্ষার্থীরা ‘আইইএলটিএস রেডি : প্রিমিয়ামে’ বিনামূল্যে অবাধ প্রবেশাধিকার পাবেন।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের আইইএলটিএসের ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘আমরা বিদেশে পড়াশোনা, কাজ করা বা বসবাসের লক্ষ্য অর্জন করার ক্ষেত্রে আইইএলটিএস পরীক্ষার্থীদের সব রকম সহযোগিতা করতে চাই। স্বপ্নপূরণের ক্ষেত্রে তাদের পুরোপুরি প্রস্তুত করে তুলতে ও সর্বোচ্চ সুযোগ তৈরি করতে ‘আইইএলটিএস রেডি : প্রিমিয়াম’ নিয়ে আসতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত।’