প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
প্রযুক্তির কথা মাথায় এলেই সবার প্রথমেই যে নামটি আসবে সেটি হলো স্মার্টফোন প্রযুক্তি। সবাই চায় তার হাতের স্মার্টফোনটি যেনো হয় সেই সময়ের সেরা প্রযুক্তিসম্পন্ন। আমরা অধিকাংশ সময় স্মার্টফোন কেনার আগে রিভিউ দেখি বা কনফিগারেশন দেখি। কিন্তু নেটে যে রিভিউগুলা পাই আসলেই কি পসগুলো ওই স্মার্টফোন বা নির্মাতা কোম্পানির দুর্বলতাগুলো বলে?
তাই জেনে নেওয়া যাক স্মার্টফোন বা মোবাইল ফোনটি ক্রয়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো আপনার জানা জরুরি।
১. অপারেটিং সিস্টেম : প্রথমত জানতে হবে ফোনের অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে। বর্তমানে বাজারে তিন ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের ফোন দেখতে পাওয়া যায়-অ্যান্ড্র্রয়েড, উইন্ডোজ ফোন ও আইওএস। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম। অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের সর্বশেষ ভার্সনটি হলে ভালো।
২. প্রসেসর : যে কোনো কম্পিউটিং ডিভাইসগুলোর প্রাণ হচ্ছে প্রসেসর। তাই ২০২০ সালের সর্বশেষ প্রযুক্তির প্রসেসর নির্বাচন করা উচিত। বর্তমানে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫, ৮৩৫, ৬৬০, ৬৩৬ ; স্যামসাং এর এক্সিনস ৯৮১০, ৮৮৯৫, ৮৮৯০, মিডিয়াটেক হেইলো পি৭০, এক্স৩০ ইত্যাদি খুব ভালো মানের প্রসেসর।
৩. র্যাম : ২০২০ সালে এসেও যদি আপনার ফোনটি হয় খুবই স্লো ও বার বার হ্যাং করে, তাহলে সেটা কাম্য নয়। আর আপনার ফোনের স্পিড অনেকটাই নির্ভর করে র্যামের পরিমাণের উপর। র্যাম বেশি থাকলে আল্ট্রা রেসপন্সিভ পারফরমেন্সের জন্যে প্রতিটা টাচ, ট্যাপ উপভোগ করতে পারবেন। ২০২৩ সালে এসে আপনার ফোনের র্যামটি কমপক্ষে ১৬জিবি হওয়া চাই। তার বেশি হলে আরো ভালো।
৪. জিপিইউ : স্মার্টফোনে সিপিইউ বা প্রসেসরের পাশাপাশি আরেকটি টার্ম রয়েছে। সেটি হচ্ছে জিপিইউ বা গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট। প্রসেসর ফোনের অভ্যন্তরীণ সকল বিষয়কে হ্যান্ডেল করলেও ফোনের গ্রাফিক্স, গেমিং পারফর্মেন্স, ফ্রেম পার সেকেন্ড ইত্যাদি বিষয় জিপিইউ ম্যানেজ করে থাকে। তাই ভালো প্রসেসরের পাশাপাশি ভালো জিপিইউ থাকাটা দরকার। লক্ষ্য করে দেখবেন, আপনার ফোনে জেনো লেটেস্ট জিপিইউ থাকে।
৫. ব্যাটারি : ২০২৩ সালের অধিকাংশ মডেলের স্মার্টফোনে ৫০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। ৫০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারিতে ফোনের চার্জ ধারণ ক্ষমতা বেশি। যা একবার সম্পূর্ণ চার্জে একাধিক দিন চলবে। একবার সম্পূর্ণ চার্জে টানা ১০০ ঘণ্টা গান শোনা বা টানা ১৯ ঘণ্টা অনুষ্ঠান ও মুভি দেখা যাবে। তাই ভালো কনফিগারেশনের পাশাপাশি উচ্চ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি থাকাটা দরকার।
৬. ট্রিপল ক্যামেরা সিস্টেম : আধুনিক সময়ের স্মার্ট ফোনে ট্রিপল ক্যামেরা সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে ন্যূনতম ১৬ মেগাপিক্সেলের প্রধান ক্যামেরা, ২ মেগাপিক্সেলের ম্যাক্রো এবং ২ মেগাপিক্সেলের ডেপথ ক্যামেরা। এসব ক্যাম ব্যবহার করে আরও স্পষ্ট ছবি, অবিশ্বাস্য ক্লোজ-আপ শট এবং পোট্রেইট ছবি তোলা সম্ভব হবে। মূল ক্যামেরায় এইচআরডি ফেস বিউটি, ডুয়েল ক্যামেরা বুকে, টাইমার, প্যানোরমা এবং আর অনেক ফিচার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ফোনের মূল ১৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় ফেস ডিটেকশন অটোফোকাস ফিচার থাকে। ফলে মুহূর্তের মধ্যে নির্দিষ্ট অবজেক্টের ছবি তুলতে সক্ষম, এজন্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত আর হারাবে না।
ট্রিপল ক্যামেরা সিস্টেম ফোনটির ডেডিকেটেড ম্যাক্রো ভিশন ক্যামেরায় ফোকাস সাবজেক্টের ফোর এক্স ক্লোজার ছবি তুলতে সাহায্য করে, যা ২.৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে থেকেও সাবজেক্টের ওপর ফোকাস করা যায়। এই ক্যামেরার সাহায্যে প্রকৃতি, মেকানিক্যাল ফটো বা অন্য যেকোনও সাবজেক্টের ক্লোজ-আপ ছবি নেওয়া যায়, যা অন্য ক্যামেরার ছবি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত পার্থক্য বুঝা যায়।
তাছাড়া ফোনের ২ মেগাপিক্সেলের ডেপথ সেন্সর ব্যবহার করে ক্রিয়েটিভ পোট্রেইট ছবি তোলা সম্ভব। ২ মেগাপিক্সেলের ডেপথ এবং ১৬ মেগাপিক্সেলের মূল ক্যামেরা একসঙ্গে কাজ করে, ফলে সামনের বা পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করে ছবিতে বুকে ইফেক্ট ফুটিয়ে তোলে। উপরোক্ত ফিচার গুলো আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে।
৭. ডিসপ্লে : এখনকার অধিকাংশ মডেলের স্মার্টফোনে আল্ট্রা ওয়াইড ম্যাক্স ভিশন ডিসপ্লে যা ৬.৫ ইঞ্চির ম্যাক্স ভিশন এইচডি+ ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে, যা বেশ বড়। তবে এক হাতে কাজের সুবিধার জন্য স্ক্রিন ছোটও করে নেওয়া যাবে। ট্রাডিশনাল ডিসপ্লের পরিবর্তে ম্যাক্সভিশন ডিসপ্লেতে ছবি, মুভি, অনুষ্ঠান, গেম এবং অন্যান্য কাজে ক্রেতারা ২০:৯ অনুপাতে রেশিও পাবে। তাই ভালো কনফিগারেশনের পাশাপাশি ভালো আল্ট্রা ওয়াইড ম্যাক্স ভিশন ডিসপ্লে থাকাটা জরুরি।
৮. স্টোরেজ : ফোনের স্টোরেজ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যা ফোনের দাম ও কনফিগারেশনে ৩২, ৬৪, ১২৮, ২৫৬ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ ব্যবহার করা হয়, যেখানে আপনি বিপুল সংখ্যক অ্যাপ, ছবি, গান এবং ভিডিও সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। এছাড়া ডেডিকেটের মাইক্রোএসডি কার্ড স্লট রাখা থাকে, যা ২৫৬ জিবি পর্যন্ত বাড়িয়ে নিতে পারবেন।
৯. আঙুলের ছাপে নিরাপত্তা : বর্তমানে অধিংকাশ স্মার্ট ফোনে আঙুলের ছাপের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে বারবার পাসওয়ার্ড দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। আনলক করতে ফোনের পেছনে থাকা ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার স্পর্শ করলে সাথে সাথেই ফোনটি খুলে যাবে।
১০. দামের তুলনা : প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে দ্রুত সময়ে দামের পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাই কেনার আগে দাম যাচাই করে নেয়া উচিৎ, যা আপনি খুব সহজেই অনলাইন থেকে বিভিন্ন মডেলের মোবাইলের দাম এবং কনফিগারেশন জানতে পারবেন।
২০২৩ সালে এসে আপনাকে অবশ্যই এমন একটি ফোন বাছাই করতে হবে যেটিতে খুব ভালো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। দেশের বাজারে বর্তমান স্মার্টফোনে খুব ভালো মানের প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে। যা ব্যবহারে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।