প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
হালের ক্রেজ ফ্রিল্যান্সিং-এর প্রধান অনুসঙ্গ গ্রাফিক ডিজাইন। সে কারণে সারা পৃথিবীর তরুণ-যুবা এমনকি বৃদ্ধরাও গ্রাফিক ডিজাইনের দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু, কী এই যাদুর কাঠি গ্রাফিক ডিজাইন। চলুন শুরুতেই জেনে নেই গ্রাফিক ডিজাইন কী?
গ্রাফিক ডিজাইন : আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ গ্রাফিক আর্টস (অওএঅ) অনুসারে, গ্রাফিক ডিজাইনকে ‘ভিজ্যুয়াল ও পাঠ্য বিষয়বস্তুর সাথে ধারণা এবং অভিজ্ঞতার পরিকল্পনা যোগ করে তা প্রেজেন্ট করার শৈল্পিক মাধ্যম’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, গ্রাফিক ডিজাইন কিছু ধারণা বা চিন্তাকে ভিজ্যুয়ালী কানেক্ট করে সবার কাছে সহজবোধ্যভাবে পৌঁছে দেয়। এই ভিজ্যুয়ালগুলি হতে পারো কারো ব্যবসার প্রয়োজনে লোগোর মতো সহজ কোনো ডিজাইন বা কোনো ওয়েবসাইটের পেজের লে-আউটের মতোই জটিল।
ডিজাইনার আলেকজান্দ্রোস ক্লুফেটোস গ্রাফিক ডিজাইন সম্পর্কে বলেন, ‘গ্রাফিক ডিজাইন যে কোনো পণ্যের উৎপাদকের সাথে ভোক্তার সরাসরি সংযোগ ঘটিয়ে দেয়। এটি মূলত বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে পণ্যের বার্তা বহন করে। বিভিন্ন কোম্পানি গ্রাফিক ডিজাইন দ্বারা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার ও বিক্রয়ের জন্যে তাদের ওয়েবসাইটে ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে জটিল তথ্যগুলিকে সহজ উপায়ে প্রকাশ করে। ফলে তাদের উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ ব্র্যান্ডিংযয়ের মাধ্যমে ভোক্তা মহলে পরিচিতির সুযোগ সৃষ্টি হয়।
গ্রাফিক ডিজাইনের বেসিক : গ্রাফিক ডিজাইনের অর্থ আরও ভালোভাবে বুঝার জন্য ডিজাইন তৈরির উপাদান এবং নীতিগুলি সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ। মূলত আকর্ষণীয় এবং অর্থবহ ডিজাইন তৈরি করতে উপাদানগুলোর পারস্পরিক যোগাযোগ বা একে অপরের সাথে সম্পর্কটা বুঝা খুবই দরকার।
গ্রাফিক ডিজাইনের অন্তর্ভুক্ত উপাদানগুলো নিম্নরূপ : রঙ, ফর্ম, লাইন, আকৃতি, আকার, স্থান, টেক্সচার।
একজন গ্রাফিক ডিজাইনার যে কোন ডিজাইনের জন্য যে নীতিগুলি মেনে চলে, তা মূলতঃ কিছু নির্দেশিকা যা একটি ডিজাইনকে কার্যকর হতে সহায়তা করে। এই মৌলিক নীতিগুলো তার কাজের ভারসাম্য এবং স্থিতিশীলতা তৈরি করতে সাহায্য করে। গ্রাফিক ডিজাইনের নীতিগুলোর মধ্যে রয়েছে : ভারসাম্য, বৈপরীত্য, জোর, নড়াচড়া, অনুপাত, ছন্দ, সচরাচর সবাই বলে থাকে ‘ডিজাইন মানে নিয়ম ভাঙ্গার নিয়ম’ যা অবশ্যই এই ক্ষেত্রে সত্য। কিন্তু একজন ভালো গ্রাফিক ডিজাইনারকে অবশ্যই এই নীতিগুলো ভেঙ্গে ফেলার আগে বুঝতে হবে সে আসলে কী চায়।
গ্রাফিক ডিজাইনের প্রকারভেদ : গ্রাফিক ডিজাইনের একক কোনো নাম নেই। প্রিন্ট এবং ওয়েব ডিজাইন থেকে শুরু করে অ্যানিমেশন এবং মোশন গ্রাফিক্স পর্যন্ত সবই গ্রাফিক ডিজাইন। গ্রাফিক ডিজাইন যে কোনো প্রয়োজনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সুযোগ এবং বিকল্প পথ দেখায়।
আপনি যদি ৩০ বছর আগের কাউকে গ্রাফিক ডিজাইনের সংজ্ঞা দিতে বলেন, তাহলে তাদের উত্তর সম্ভবত প্রিন্ট সম্পর্কিত উদাহরণ যেমন-ম্যাগাজিন, সিনেমার পোস্টার এবং বিজ্ঞাপন সম্পর্কে বলা হত। এখন আমরা ডিজিটাল যুগে বাস করছি, যা বেশ কিছু নতুন ধরনের গ্রাফিক ডিজাইনের জন্ম দিয়েছে।
আধুনিক সময়ের গ্রাফিক ডিজাইনের কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সম্পর্কযুক্ত। সেরকম কিছু উদাহরণ দেখে নেওয়া যেতে পারে :
* ওয়েবসাইট ডিজাইনার ব্যবহারকারীদের জন্য আকর্ষণীয় ওয়েব পেজ তৈরি করে। একটা ওয়েবসাইটের মধ্যে নানারকম তথ্য ও রঙের বিন্যাস অন্তর্ভুক্ত করা যাতে ডিজাইনারের কাজের সুযোগ রয়েছে।
* ডিজাইনারের অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে একটি ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা কতটা সহজ এবং সন্তোষজনক। সে কারণেই এটি ডিজাইন করতে গিয়ে মূলত ব্যবহারকারীর ব্যবহারযোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং পছন্দের উপর জোর দেওয়া হয়।
* মোশন গ্রাফিক ডিজাইনার অ্যানিমেশন, স্পেশাল ইফেক্ট, টিভি শো, ভিডিও গেম এবং সিনেমার মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল উপাদানগুলোকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
সাধারণ গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ : প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে নতুন ধরনের গ্রাফিক ডিজাইন আসার সাথে সাথে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজেও নতুনত্ব এনেছে। এই পরিবর্তন ডিজাইনারদের ক্যারিয়ারেও পরিবর্তন এনেছে। ‘প্রথাগত’ গ্রাফিক ডিজাইনার যারা প্রথম থেকেই প্রিন্টিং মিডিয়ায় কাজ করেন তাদের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, যদিও এটি পুরনো গল্প। শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো (ইখঝ) অনুসারে, কম্পিউটার সিস্টেম ডিজাইন সার্ভিসগুলিতে গ্রাফিক ডিজাইনারদের চাহিদা ২০২৮ সালের মধ্যে ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে কাদের আমরা সাধারণ গ্রাফিক ডিজাইনার বলবো? আমরা গত কয়েক বছরে গ্রাফিক ডিজাইনারদের
বিভিন্ন ক্যটাগরী বিশ্লেষণ করে নিম্নোক্ত ধরণগুলো পাওয়া গেছে।
* গ্রাফিক ডিজাইনার।
* (টঢ) ডিজাইনার।
* ওয়েব ডিজাইনার।
* আর্ট ডিরেক্টর।
* ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর।
সঠিক জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যক্তিগত দক্ষতার সাথে অনুশীলন যোগ করে এর যে কোনোটিতে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
গ্রাফিক ডিজাইন টুলসগুলো কী কী? : গ্রাফিক ডিজাইন টুলগুলির মধ্যে কম ব্যয়বহুল একটি হল একটি স্কেচবুক। গ্রাফিক ডিজাইনাররা প্রায়ই ডিজাইন সম্পূর্ণ করতে কম্পিউটারে যাওয়ার আগে এর কাগজে ধারণা বা খসড়া স্কেচ করে নেয়। কম্পিউটার এবং ডিজাইন সফ্টওয়ার আজকের ডিজিটাল মাধ্যমে অপরিহার্য অনুষঙ্গ। আপনার কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে ঠিক কোন মানের কম্পিউটার প্রয়োজন। পাশাপশি সফ্টওয়ারের ক্ষেত্রে অফড়নব যেমন ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর এবং ওহউবংরমহ হল গ্রাফিক ডিজাইনের প্রধান ভিত্তি। মোশন গ্রাফিক ডিজাইনের জন্যে অফড়নব (এডোব) প্রিমিয়ার এবং ৩উ এনিমেশনের জন্য ৩ফ ঝঃঁফরড় গধী জাতীয় সফ্টওয়ারগুলো প্রয়োজন।
মোট কথা যে কোনো বিষয়ে ডিজাইনের আগে সে সম্পর্কে ধারণা এবং অনুপ্রেরণা একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের প্রধান শর্ত। এই ধারণা এবং ধারণাটি প্রথমে কাগজে কাজ করা দরকার এবং তারপর ধারণাটিকে জীবন্ত করার জন্যে কম্পিউটারকে একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা উচিত।
গ্রাফিক ডিজাইনাররা তাদের চারপাশের পরিবেশ থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করে। তাই আপনি যদি যথেষ্ট চিন্তাশীল এবং সৃজনশীল হন তবে এই পেশা আপনার সৃজনশীল রসকে প্রসারিত করতে সাহায্য করতে পারে। এতে আত্মিক খোরাকের পাশাপাশি মনের খোরাকও মিলবে।
গ্রাফিক ডিজাইনে আপনার ভবিষ্যত তৈরি করুন: গ্রাফিক ডিজাইন কি? আপনি যেমন শিখেছেন, সেটাই সমস্যা সমাধান বা অনুপ্রেরণা জাগানোর জন্য ব্যবহার করে দেখুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কোন মাধ্যমে যেতে চান। আপনার ভবিষ্যত ক্যারিয়ারের জন্য গ্রাফিক ডিজাইন খুলে রেখেছে এক অবারিত দুনিয়া। এ দুনিয়ায় কোন পথে আপনি হাঁটবেন তা একান্তই আপনার ইচ্ছের উপর নির্ভর করে।
লেখক পরিচিতি : সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিজাইনার, শরীফ মেলামাইন গ্রুপ।