প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
সিনিয়র বনাম জুনিয়র
তুহিনা আক্তার সাথী
আলেয়া আর তারিন সামনাসামনি বসে আছে অরবিন্দ টেক্সটাইল কোম্পানির হেড অফিসে। এই অফিসে একসময় সিনিয়র ম্যানেজার পদে চাকুরি করতো তারিন। আর আলেয়া ছিলো জুনিয়র সহকারী। সেই কোম্পানিতে আজ চাকুরির জন্যে এসেছে তারিন। সিনিয়র ম্যানেজারের চেয়ারে নারী কর্মী। আর এমডি স্যারের চেয়ারে আলেয়া।
|আরো খবর
তারিনের মুখে আগের সেই রাগ, অহংকারের বদলে হতাশা আর অনুশোচনা। কাঁপা হাতে আলেয়ার সামনে আবেদনপত্রটি দিলো তারিন। আলেয়া পানির গ্লাস তারিনের দিকে এগিয়ে বললো, ঘাবড়াবেন না ম্যাডাম, শান্ত হয়ে বসুন। আলেয়া ঠিক আগের মতোই আছে। পদোন্নতি, সম্মান, অর্থ কোনো কিছুই তার মনুষ্যত্বকে হারাতে পারেনি। তারিনের মনে পড়লো পাঁচ বছর আগের কথা।
গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল শিক্ষিত মেয়ে আলেয়া। শহরে এসেছে চাকুরির জন্যে। এমডি স্যারের নম্র, শান্ত পচন্দ বলে সহজেই চাকুরি হয়ে গেলো। কিছুদিনের মধ্যেই আলেয়ার কাজ এবং ব্যবহারের প্রশংসা করতে লাগলো সবাই।
এই শহরের স্থানীয় মেয়ে তারিন। দেখতে স্মার্ট, কথায় অহঙ্কার। অরবিন্দ কোম্পানীর সিনিয়র ম্যানেজার। স্বামী বিদেশী কোম্পানীতে চাকুরি করে। এমডি তার ব্যবসার কাজে বেশির ভাগ সময়ই বিদেশে থাকে বলে কোম্পানির সব দায়িত্ব তারিনের। কোম্পানির কর্মীদের সে মানুষই মনে করে না। এমনকি বয়সে বড় সহকর্মীদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করে। চাকুরিচ্যুত করার হুমকি দিয়ে সহকর্মীদের দিয়ে সব কাজ করিয়ে নেয় সে।
তারিনের সব রাগ এখন আলেয়ার উপর। কারণ ছাড়াও আলেয়াকে গেয়ো, সেকেলে বলে অপমান করে। অফিস বিরতি টাইমে পিয়ন চা দিতে আসলে আলেয়াকে চা দিতে নিষেধ করে তারিন। প্রতিদিনই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে আলেয়াকে। আলেয়ার অপমানে কষ্ট পায় অফিসের পিয়ন। একদিন অফিস টাইমে তারিন তার বন্ধুদের নিয়ে বসে বিরিয়ানি খাচ্ছে। আলেয়া ওই সময়ে একটা জরুরি ফাইলে সিগনেচার নিতে গেলে তারিন ফাইলটি আলেয়ার মুখে ছুড়ে বললো, দেখো না? আমি বন্ধুদের সাথে কথা বলছি, সামান্য ভদ্রতাটুকুও নেই তোমার? আলেয়া কিছু বলার আগেই এমডি সেখানে উপস্থিত হলো।
তারিন, আমি আপনার খারাপ আচরণের কথা আরও আগেই শুনেছি। আজ স্বচক্ষে দেখলাম। আজকের পর আপনি আমার কোম্পানিতে চাকুরি করবেন না। তারিনের অনুশোচনা হলো না। এই চাকুরি না হলেও আমার চলবে বলে হনহন করে বেরিয়ে গেলো সে।
কর্মদক্ষতায় সিনিয়র ম্যানেজার পদে উন্নীত হলো আলেয়ার। হেড অফিসসহ কোম্পানির প্রতিটি কর্মী এখন খুশি। গত কয়েক বছরের চেয়ে এই এক বছরে কোম্পানির উন্নতি হয়েছে বেশি। এমডির বিদেশেও একটা অফিস হয়েছে। সবটাই আলেয়ার কাজের প্রতি যত্ন আর সকল কর্মীদের সাথে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।
এমডির বিদেশফেরত ছেলে অরবিন্দের সাথে আলেয়ার বিয়ের দু বছর পর এমডি প্রয়াত হলে বিদেশের অফিসে অরবিন্দ বসলো, আর দেশেরটাতে আলেয়া।
অফিসের অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে তিন বছর পর তারিনের স্বামীর চাকুরি চলে যায়। জমানো টাকা শেষ হলে দুজনে আবার চাকুরির খোঁজে নামে।
আলেয়া তারিনের আবেদন পত্রটি নিয়ে বললো আপাতত হেড অফিসে পদ খালি নেই। কারখানা শ্রমিক ব্যবস্থাপনা পদে আপনি কাল থেকে আসতে পারেন। চায়ের কাপ তারিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, আপনার পরিবারের অবস্থার কথা পিয়নের কাছ থেকে আমি শুনেছি। আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আগের মতোই থাকবে। একসময়ে তো আমি আপনার জুনিয়র ছিলাম তাই না!