প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৪, ০০:০০
রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাসাহিত্যের স্পন্দন। গোটা বিশ্বে বাংলা ভাষার আলোকবর্তিকা এই দুই জ্যোতির্ময় নক্ষত্র। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেলজয়ী হয়ে বিশ্বদরবারে বাংলা ভাষা সমাদৃত করেন। আমাদের প্রিয় জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম দুঃখের ললনে বাংলার সাহিত্য আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে ধর্মীয় গোড়ামী সাম্প্রদায়িকতার বাঁশবৃক্ষ উপরে ফেলেন। একাধিক ধর্মীয় সংগীত রচনা করে সৃষ্টিকর্তার আধ্যাত্মিক ধ্যান-ধারণায় মত্ত থেকে অন্তিম নৈকট্য লাভের ইচ্ছাপূরণ করেন।আগুনে পুড়ে-গলে খাঁটি সোনা হয়।
দুঃখের দহনে পুড়ে-পুড়ে দ্রোহের কবি, সাম্যের কবি, হামদণ্ডনাথ-গজলের কবি, প্রেম বিরহের কবি নজরুল।
জমিদারি বিলাসিতা জীবনযাপন করেও গণমানুষের কবি, মানবতার কবি, গীত-সংগীতের কবি, প্রেম-প্রেয়সীর কবি, বিশ্বকবি বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সুখ-দুঃখ একাকার হয়ে বাংলাসাহিত্য ভাণ্ডার। আমাদের ক্রান্তিকালে, অধিকার আদায়ে, আনন্দ সাগরে ভেসে বেড়াই রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের ভেলা হয়ে। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল বিশ্বকবি জাতীয় কবি উপাধীর ন্যায় ‘চাঁদপুরের হৃদয়ের কবি’ আখ্যায়িত করা যায় মহানন্দে। দুজনেরই চাঁদপুরের মাটি ও মানুষের সাথে সখ্যতা ছিল, কথা ছিল, ভালোবাসা ছিল, পত্রালাপ ছিল। এই বিষয়ে গবেষক মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের সম্পাদনায় ‘রবীন্দ্রনাথ ও চাঁদপুরের মানুষেরা’, কাজী নজরুল ইসলাম ও চাঁদপুর এবং ‘চাঁদপুর সমগ্র’-এর প্রথম খণ্ডে স্ববিস্তারে জানা যাবে। জেলাভিত্তিক রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে নিয়ে গবেষণামূলক গ্রন্থ আর কোথাও সংগৃহীত আছে কিনা সন্দিহান।
স্বাভাবিকভাবেই এই দুই মনীষীকে চাঁদপুরবাসী শ্রদ্ধায়-ভালোবাসায় স্মরণ করে। ঐতিহ্যগতভাবে সাহিত্যের উর্বর ভূমি চাঁদপুর। এই উর্বরতার মনোনিবেশে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল ছায়া হয়ে আছে। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমী সময়ের ¯্রােত পাড়ি দিয়ে ২০২৪ সালে সম্ভবত প্রথম ‘এক ব্যানারে’ রবীন্দ্রনাথ-নজরুল জয়ন্তী উদযাপন করছে। ‘সৃজনে মননে বিকশিত হোক শাশ্বত বাঙালিয়ানা’ স্লোগান। যা ছিল সময়ের প্রেরণা। সাহিত্য একাডেমির প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান সম্পাদক, সাবেক সুযোগ্য মহাপরিচালক কাজী শাহাদাতের প্রাণবন্ত আলোচনায় রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে চমৎকারভাবে চিত্রায়িত করেন। কবি নজরুল সড়ক নামকরণের ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন। চাঁদপুর মতলবের কৃতী সন্তান উপমহাদেশের প্রখ্যাত নজরুল গবেষক ডক্টর রফিকুল ইসলাম কবি নজরুল ইসলামের প্রতিটি স্মৃতিচিহ্নে পদধূলায় সিক্ত এবং চাঁদপুরে নজরুলের রাত্রিযাপনের সংবাদটি তাঁর ‘কাজী নজরুল ইসলাম : জীবন ও সাহিত্য’ গ্রন্থের ‘দৌলতপুর ও নার্গিস’ অধ্যায়ে গবেষণা গ্রন্থের তথ্য তুলে ধরেন।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইদুজ্জামান রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সমসাময়িক ভাবনার সন-তারিখ উল্লেখ করে জ্ঞানভিত্তিক আলোকপাত করেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম এবং বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির মহাকবি ভূষিত করে ত্রিরত্নকে ‘একই সুতোর মালায়’ গেঁথে দিয়েছেন। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে, রাজপথে, স্লোগানে, বক্তব্যে, কারাবরণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের লেখনীকে পাথেয় হিসেবে আঁকড়ে ধরেছেন।
কবি প্রাবন্ধিক জয়ন্তীর আহ্বায়ক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া চাঁদপুরের সাথে রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতনের আত্মিক বন্ধন তুলে ধরেন। কবি নজরুলকে চাঁদপুরের জামাই বলে আখ্যায়িত করিলে সাহিত্য মহল সানন্দ চিত্ত হাসিতে ভরণ করেন।
মতলব সরকারি ডিগ্রি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও চাঁদপুর নজরুল গবেষণা পরিষদের সভাপতি মোশারফ হোসাইন রবীন্দ্রনাথের স্নেহাশীষে তরুণ কবি নজরুলের সাহিত্য আলোকপাত করেন।
সম্পাদক কবি লেখক প্রাবন্ধিক কাদের পলাশ নজরুল ও শওগাত সম্পাদক নাসিরউদ্দীনের সম্পর্ক স্বাগত বক্তব্যে চুম্বক তুলে ধরেন।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), সাহিত্য একাডেমীর অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির আহ্বায়ক ও রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উদযাপনের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান জয়ন্তীর প্রাসঙ্গিক বক্তব্যে পরিমিত ভাষায় সাহিত্যের শুদ্ধতম শিষ্টাচারে বিমোহিত করেন।
বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ও অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্য শামীম আহমেদের সঞ্চালনায় শব্দঝংকার ও অমিয় হাসিতে ‘অতিষ্ঠ গরমে-তুষ্ট’ অতিথিবৃন্দ। আনন্দধ্বনি শিক্ষায়াতন শিল্পীদের সুরধ্বনি এবং বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের ‘বৃন্দ’ আবৃতিতে সাহিত্যের মুগ্ধতায় হাসি ফোটে।
সাহিত্যের শুদ্ধতম রূপ প্রকাশিত বিকশিত করণার্থে, সাহিত্য একাডেমীকে প্রাণবন্ত করার প্রয়াসে, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে আলোচনা সভা, কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ (আমার স্বরচিত ‘সঞ্চয়িতাণ্ডসঞ্চিতা’ কবিতা পাঠ করি), পুরস্কার বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির বন্ধন জাগরিত করেছে। এই বন্ধন সুদৃঢ়তার জন্য সাহিত্য একাডেমির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
বর্তমান কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রয়াসে ‘সাহিত্যের নিপুণতায়-গণতন্ত্রের উৎকর্ষতায়’ আগামী পরিচালনা পর্ষদ প্রত্যাশা করছি।